রুহুল আমিন : রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান কাজ অব্যহত রয়েছে কিন্তু তার মারাত্মক ক্ষতির প্রভাব নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা হচ্ছেনা, আর কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষাও করা হয়নি, তাছাড়াও বনের পাশে যথেচ্ছ বৃহদকার শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মান কাজ চলছে ।এসব অভিযোগ গুলো দাবী করে ইউনেস্কো বরাবর সুন্দরবন রক্ষা কমিটিসহ ৫৭ সংগঠনের পত্র প্রেরণ করেছে।
শুক্রবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি (ডিআরইউ) তে এক সংবাদ সম্মেলনে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপাসহ ৫৭ টি সংগঠন যৌথ ভাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিটির আহবায়কে এড. সুলতানা কামাল বক্তব্য করেন ।
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির জুলাই ১৭ সভায় গৃহিত সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ সমূহ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারে ক্রমাগত উপেক্ষা নিরসনের জন্য ইউনেস্কোর পদক্ষেপ কামনা করে ‘সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি ১২ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে ঢাকাস্থ ইউনেস্কোর প্রধান বিটরিস কুলদুম কাছে পত্র প্রেরণ করেছে ।
এবিষয়ে একটি প্রতিবেদন পত্রের সাথে যুক্ত করা হয়েছে, সুন্দরবন রক্ষা কমিটির যাতে উদ্বেগের কারণগুলো উল্লেখ কার হয়েছে ।
জুলাই ২০১৮ মাসে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকাটি রক্ষা বিষয়ে মোটা দাগে করণীয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যাতে বিশ্ব ঐতিহ্য স্থলের সম্ভাব্য ঝুঁকিসমূহ পূর্ণবিবেচনা ও একে বিপদাপন্ন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করণের সময় পার হয়ে যাচ্ছে কিনা তার মূল্যায়ন।
কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ যেমন বঙ্গোপসাগর ও পশুর নদী দিয়ে কয়লা পরিবহন জরুরী ভাবে স্থগিত করা।
বিশ্ব ঐতিহ্য কনভেনশনের ধারা ৬.৩ মোতাবেক অন্য কোন দেশের অভ্যন্তরে কোন ‘বিশ্ব ঐতিহ্য স্থল’ ক্ষতিগ্রস্থ না করার বিধানের প্রেক্ষাপটে ভারত কী ভাবে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রস্থাপনের কাজে যুক্ত হয়েছে তা জানাতে বারত সরকারের প্রতি আহবান জানানো ।
অর্থ বিনিয়োগকারীদেরকে রামপাল ও পায়রা কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সহ কোন বৃহৎ শিল্পে বিনিয়োগ না করার আহবান জানানো ।দাবীর সর্মথনে পত্রে দাবীর পক্ষে উক্ত পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে ।
জুলাই ২০১৭ মাসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪১ তম সভায় বলা হয়েছিল বাংলাদেশের সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার কোন প্রকার শিল্পকারখানা বা বৃহদকার অবকাঠামো নির্মানে অগ্রসর হবেনা ।
কিন্তু বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম উপদেষ্টা জনাব তৌফিক এলাহী চৌধুরী বলেছেন ,বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪১ তম সভায় এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানের বেলায় প্রযোজ্য হবে। রামপালের জন্য বাংলাদেশের মাননীয় হাইকোর্ট সুন্দরবনের চারদিকে সরকার সৃষ্টি ১০ কি মি প্রস্থ বনের বাইরের এলাকা (বাফার জোন) এর মধ্যে কোন প্রকার শিল্পকারখানা স্থাপন কাজ নিষিদ্ধ করেছেন । কিন্তু প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশের জাতীয় পরিবেশ কমিটি উক্ত এলাকায় ৩২০ শিল্প কারখানা স্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন । তৎকালীন পরিবেশ ও বন মন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেছেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিষয়ে ইউনেস্কোর যেহেতু কোন আপত্তি নেই, এতএব এটি অন্যান্য কলকারখানার বেলায় প্রযোজ্য হবে ।
মংলা রফতানি প্রক্রিয়াজাত এলাকায়ও সম্প্রসারিত হচ্ছে । উক্ত স্থানে ২৪ টি লাল ক্যাটাগরীর শিল্পকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে । সবশেষ পরিবেশ আইন বদল করে লাল ধরনের কারখানারা গুলোকে ‘সবুজ’ ঘোষনা করা হয়েছে, ফলে তাদের পরিবেশ সমীক্ষা জাতীয় কোন পূর্বশর্ত থাকবেনা । সুন্দরবন থেকে ৪০ কিলোমিটার পৃর্বদিকে পারয়া এলাকায় ৯০০০ মেগাওয়াট এর ৪টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান কার হচ্ছে । এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সুন্দরবনের দিকে এসিড বৃস্টি প্রক্ষেপিত হবে বিদ্যুৎকেন্দ্রর জন্য ঠান্ডা পানি উত্তোলন কয়লার ছাই ও বর্জ্য নিক্ষেপণ সেখানকার বিদ্যমান ইলিশ মাছের উৎপাদনকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে । ইলিশ বঙ্গপোসাগরের সবচেয়ে গুরুপ্তপূর্ণ মাছ যা বাংলাদেশের মোট ধরা মাছের ১২% ভাগ ।
প্যারাগ্রাফ ০৮ বলা হয়েছে : “বন এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনের লক্ষ্যে তার জলপথে নৌপরিবহন ব্যবস্থা ,নদীর ড্রেজিং বিষয়ে যথেষ্ট মাত্রার কোন নিরাপত্তা কার্যক্রম নিশ্চিত করা হয়নি ।” ইউনেস্কোর প্রস্তাবে (বাংলাদেশ) রাষ্ট্র পক্ষকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ।
কিন্তু বাস্তবে বনে ক্ষতি কমানোর প্রয়োজনে নৌ-পরিবহন ও ড্রেজিং বিষয়ে বিশেষ কোন ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন বিষয়ক তথ্য সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির জানা নেই । বরং পশুর নদীর জাহাজ চলাচল ক্রমবর্ধমান ,এসব নিয়ন্ত্রণে কোন আইন নেই বা সংকট সামাল দিতে কোন ব্যবস্থাপনা দৃশ্যমান নয়।
পশুর নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং শুর হয়েছে কিন্তু এবিষয়ে কোন প্রকার পরিবেশগত প্রবাব সমীক্ষা দৃশ্যমান নয়, যার অন্যতম একটি বিষয় হবে বিশ্ব ঐতিহ্য স্থলের সুন্দরবন ড্রেজিং উপর প্রভাব । অথচ ইউনেস্কোর সিন্ধান্তের ৯নং প্যারাগ্রাফে রাষ্ট্রকে (বাংলাদেশ) পশুর নদীর ড্রেজিং এর পরিবেশগত প্রভাব নিরুপণ করার কথা বলা হয়েছিল। সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির কাছে পশুর নদীর ড্রেজি এর পূর্বে এর পরিবেশগত প্রভাব নিরুপনের কোন তথ্য জানানেই, অথচ এরই মধ্যে সুন্দরবনের “বিশেষ বৈশিকমূল্য” বা ঙঁঃংঃধহফরহম টহরাবৎংধষ ঠধষঁবং(ঙটঠ) বিষয়টিও থাকার কথা ছিল । ড্রেজিং এর ফলে বিশেষ করে জলজ প্রাণীদের উপর তার প্রভাব বুঝা যেত । এখানে ইয়াবতি ডলফিন রয়েছে, এর সাথে আরো হিপব্যাক ডলপিন, বোতলেনিস ডলপিন, স্পিনার ডলপিন, ব্রাইডের তিমি এবং মিঙ্ক তিমির পরিস্তিতির নির্ণয়ের বিষয়টও এই প্রভাব নিরূপন কাজের অংশ ছিল। এটি গুরুপ্তপুর্ণ এজন্য যে,সম্ভাব্য ড্রেজিং এরজল প্রবাহ স্থলে এদের উপস্থিতির কথা জানা গেছে। বাংলাদেমের জাতীয় অর্থনতিক কাউন্সিলের নির্বাহ কমিটির নভেম্বর ২০১৭ এর সভায পশুর নদীর শিপিং চ্যানেলে ১৩১ কিমি স্থান ড্রেজিং বাবদ ৭১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার কথা জানা যায়। আর২০১৮ সনের ফেব্ররুয়ারীতে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি সুত্রে হিরণ পয়েন্টের মধ্যে (বিশ্ব ঐতিহ্য স্থল এর দক্ষিণ দিকে) ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর কথা জানা যায় । এখানে মংলা থেকে রামপাল পর্যন্ত ড্রেজিং এর চবি দেয়া হলো ।
রামপাল প্লান্ট এর “পরিবেশ সমীক্ষায়” এলাকায় জন্য ইউনেস্কোর কাংখিত “কৌশল গত পরিবেশ সমীক্ষায়” অন্তর্ভুক্ত হবে কিনা তা এখনও প্রমাণিত নয় বা বুঝাযাচ্ছেনা । এসব প্রভাব নিরসনে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত পরিমাপও নেই । ইউনেস্কোর প্রতিবেদনের ১০ নং প্যারাতেও রামপাল এর কারণে সম্ভাব্য প্রভাব বিষয়ে সমীক্ষা করা জরুরী । এগুলোকে “দক্ষিণ এলাকার কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষার” অংশ হিসেবে সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশকে বলা হয়েছিল ।কিন্তু বাস্তবে, এসব বিষয়কে “কৌশলগত পরিবেম সমীক্ষা য়” রাখা হয়েছে তেমন কোন প্রমাণ নাই । আমাদের উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে প্ল্যান্ট নির্মান কাজ যেহেতু বন্দ রাখা হয়নি, অতএব কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা বিলম্বিত হলে তাতে সুপারিশকৃত দূষণ প্রশমণ প্রক্রিয়ার সুপারিশও কোন কাজে আসবেনা ।
ইতিমধ্যে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে বেশ কয় কয়টি নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ রিভিউ করানো হয়েছে । এতে বিশেষজ্ঞগণ তাদের মতামতে বলেছেন :ভু-কম্পন সম্পন্ন এই নিম্নভুমির এলাকায় কোন প্রকার কয়লার ছাই ফেলা যাবেনা ; সক্স,পিএম,পারদ এর দূষণ নিয়ন্ত্রণে উচ্চ মান সম্পন্ন প্রযুক্তি অব্যশই নিশ্চিত করতে হবে ; এফজিডি ,সিলেকটিভ ক্যাটালাইটিক রিডাকশন .ব্যাগ হাউস / ফ্যাব্রিক ফিল্টার ও এসিআই ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আর পশুর নদীর কয়লা ও কয়লার ছাই পরিবহন কোন ক্রমেই করা যাবেনা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর্সব উচ্চ প্রযুক্তির কোনটিরই ব্যবহার রামপার প্রকল্পে নিশ্চিত হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :