ডেস্ক রিপোর্ট : ২০১৩ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনে এক লাখ ৮০ হাজার ভোট পেয়ে খুলনার মেয়র নির্বাচিত হন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি। বিগত সিটি নির্বাচনে প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন তিনি। বর্তমান মেয়র হিসেবে তিনি এবারও মনোনয়ন পাচ্ছেন- এমনটাই আশা করেছিল বিএনপি নেতাকর্মীদের একাংশ ও মনির সমর্থকরা। প্রার্থী হিসেবে নগর বিএনপির পক্ষ থেকে তার একক নামই কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আস্থা রাখতে পারেননি তার ওপর।
গত দু'দিনে নগরীর বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ, সুশীল সমাজ ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত তিনটি কারণে মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন বর্তমান মেয়র। এগুলো হচ্ছে- দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব, দল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়া এবং খুলনা সিটির কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হওয়ায় নগরবাসীর নেতিবাচক মনোভাব।
নেতাকর্মীরা জানান, দায়িত্ব নেওয়ার পরই মেয়রের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে তাদের। পৌরকর, ট্রেড লাইসেন্স, ড্রেন ও রাস্তা সংস্কারসহ যে কোনো বিষয়ে কর্মীরা মেয়রের কাছে গেলে তিনি সমাধান দিতেন না। বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে তিনি পরিচিত পেয়েছেন 'বিধি মোতাবেক মেয়র' হিসেবে। নগরীর অধিকাংশ সচেতন মানুষই এটা জানেন।
এ ছাড়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনবিরোধী আন্দোলনে প্রায় তিন মাস মেয়র খুলনায় ছিলেন না। নেতাকর্মীদের আরেকটা বড় ক্ষোভের কারণ গত ৮ ফেব্রুয়ারি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবরণের দিনও তিনি কোনো দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেননি। উল্টো হাসিমুখে বেলুন উড়িয়ে নগরীর সবুরণনেছা বিদ্যালয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। ফেসবুকে ছবিটি ভাইরাল হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন মেয়র। এ ছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধান না করায় তার প্রতি সাধারণ মানুষের অসন্তোষ বাড়ছিল।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, যেসব সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তার কোনোটিরই সমাধান হয়নি। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ধীরগতি ও নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় তার জনপ্রিয়তা কমেছে।
নাগরিক নেতারা জানান, খুলনা সিটির কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হওয়ায় বর্তমান মেয়রের সক্ষমতা নিয়ে নগরবাসীর নেতিবাচক মনোভাব বিরাজ করছে। সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক রাস্তা নির্মাণসহ কেসিসির উন্নয়নকাজের মান নিয়ে কারও সঙ্গে আপস করেননি। কিন্তু বর্তমান মেয়র উন্নয়নকাজ ঠিকমতো তদারক করতে পারছেন না। এ ছাড়া গত সাড়ে চার বছরে একটি উন্নয়ন প্রকল্পও অনুমোদন করাতে পারেননি মেয়র।
এ ব্যাপারে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, মেয়র নিজের মন্ত্রণালয় থেকে এবং কেসিসির কর্মীদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নিতে পারেননি। বিরোধী দলের মেয়র হিসেবে প্রশাসনের সহযোগিতা তিনি পাননি- এটা যেমন সত্য, তেমনি কাজ আদায় করার ব্যাপারে তার চেষ্টার ঘাটতি ছিল, এটাও সত্য।
এসব বিষয়ে মনিরুজ্জামান মনি বলেন, দল যা ভালো মনে করেছে, সেটা করেছে। এ বিষয়ে তার বলার কিছু নেই। আর উন্নয়ন ও জনপ্রিয়তা একটা চলমান প্রক্রিয়া। সুনির্দিষ্ট কোনো কাজ বা সময় দিয়ে এগুলো বিচার করা যায় না।
অবশ্য মেয়রের পক্ষে সাফাই দিয়েছেন নগর বিএনপির সভাপতি ও এবারের মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি বলেন, নির্বাচিত মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার পরেই তার পদমর্যাদা খাটো করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দলীয় প্রশাসন ব্যবস্থার কারণে তিনি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেননি। মঞ্জু বলেন, মনিরুজ্জামান মনির বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও কর্মীদের কথা না শোনার অভিযোগ থাকতে পারে; কিন্তু তার সততার বিষয়ে নগরবাসীর মধ্যে কোনো প্রশ্ন নেই। একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সৎ মানুষ হিসেবে তার জনপ্রিয়তা ছিল এবং আছে। কিন্তু দল মনে করছে, নির্বাচন আমার করা উচিত। এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। এটার সঙ্গে জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার সম্পর্ক নেই। সূত্র : সমকাল
আপনার মতামত লিখুন :