ডেস্ক রিপোর্ট : নামেই ভিলেজ। আসলে এ এক এলাহী কারবার। সারি সারি অত্যাধুনিক ভবন। চারপাশ নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঘেরা। আকারেও বিশাল। সুবিশাল। এই হচ্ছে গোল্ড কোস্ট কমনওয়েলথ গেমস ভিলেজ। এখানেই অস্থায়ী ঠিকানা হয়েছে একুশতম কমনওয়েলথ গেমসে আসা ৬ হাজার ৬০০ ক্রীড়াবিদ ও কর্মকর্তার। ভিলেজে থাকাটা এক দারুণ অভিজ্ঞতা। নানা দেশের নানা ভাষার নানা রঙের মানুষের মেলা। যেমন খুশি তেমন সাজো খেলার মতো এ যেন 'যেমন খুশি তেমন থাকো' ধরনের বন্দোবস্ত। কে কোন দেশের সেটা কোনো বিষয়বস্তুতে পড়ে না এই ভিলেজে। নিয়ত চলে ভাবের আদান-প্রদান। শুধু 'দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে...।'
যে কোনো গেমস কাভার করতে গেলে দু'-চারবার কাজে বা কাজ ছাড়াই গেমস ভিলেজে ঢুঁ মারা হয়ে যায়। গোল্ড কোস্টের ভিলেজটা কেমন দেখতে, সেই কৌতূহল নিবৃত্ত করতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না। গেমসের মূল মিডিয়া সেন্টারের উল্টো পাশেই অর্থাৎ ব্রডবিচ নর্থ স্টেশন থেকে দু'মিনিট বিরতি দিয়ে অবিরাম চলতে থাকা ঝকঝকে ট্রামে চেপে বসলেই হলো। গন্তব্য গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটি স্টপেজ। যানজট না থাকায় কোন জায়গা কতটা দূরে বা কাছে তা নিয়ে মাথা ঘামানোই ভুলে গেছি। গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটি স্টেশনে পা রাখলেই চোখে পড়বে সারি সারি ভবন ছেয়ে আছে নানা দেশের পতাকায়। ওটাই গেমস ভিলেজ। আগে থেকে বিশেষ ব্যবস্থা ছাড়া সাংবাদিকদের ভিলেজের একেবারে ভেতরে ঢোকার সুযোগ নেই। তবে পাস নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল জোনে ঢোকা যায়। আর সুপরিসর সেই জোনে দেশ-বিদেশের তারকা ক্রীড়াবিদদের সঙ্গেও দেখা হয়ে যায়।
ভিলেজ বললে একটা গ্রাম-গ্রাম চেহারা ফুটে উঠবে সেটাই স্বাভাবিক। ২০০৬ সালে অলিম্পিকের অতিথি হিসেবে মেলবোর্ন কমনওয়েলথ গেমসে গিয়ে ভিলেজেই থাকার সুযোগ হয়েছিল। অবশ্য মেলবোর্নের সেই ভিলেজে গ্রামের একটা আবহ ছিল। শহর থেকে একটু দূরে, চারপাশে বিশাল পার্ক, মাঝখানে কয়েকশ ডুপ্লেক্স বাড়ি। কিন্তু সিটি অব গোল্ড কোস্টে ভিলেজের চেহারা একেবারে আলাদা। এটা একেবারে শহরের ভেতর। পার্কল্যান্ড নামের একটা জায়গায় সাত হেক্টর জমি ব্যবহার করা হয়েছে এই বিশাল আবাসন গড়ে তুলতে। আরও ৭ দশমিক ৩ হেক্টর জমি রাখা হয়েছে খোলা জায়গা হিসেবে। যেখানে সবুজের সমারোহের মাঝে রয়েছে নান্দনিক কমিউনিটি পার্ক।
২০১৩ সালে কুইন্সল্যান্ড সরকার পার্কল্যান্ড এলাকায় বিশাল গেমস ভিলেজ গড়ে তোলার কাজটা দেয় গ্রুকন নামে একটি বেসরকারি ডেভেলপার কোম্পানিকে। সাততলা ভবনগুলোতে ১১৭০টি অ্যাপার্টমেন্ট ও ৮২টি টাউনহাউস (ডুপ্লেক্স ধরনের বাড়ি) নির্মাণের বিপুল এই কর্মযজ্ঞ শেষ করে গ্রুকন কমপ্লেক্সটি কমনওয়েলথ গেমসের আয়োজকদের কাছে হস্তান্তর করে ২০১৭ সালের অক্টোবরে।
গেমস শেষে এসব ঘরবাড়ির কী হবে? খুবই জরুরি প্রশ্ন। তবে উত্তর ঠিক করাই আছে। ভেঙে ফেলা হবে না নিশ্চয়ই। গেমস শেষে গ্রুকন এগুলোর খুটিনাটি সংস্কার কাজে হাত দেবে। তারপর আগামী বছরের শুরুর দিকে এসব অ্যাপার্টমেন্ট ও টাউনহাউস গোল্ড কোস্টের নাগরিকদের জন্য ভাড়া নেওয়া অথবা কেনার জন্য উন্মুক্ত করা হবে। ১ হাজার ২৫২টি পরিবার এখানে বসবাস করতে পারবে। তাদের সর্বোচ্চ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখেই এই মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। আলিশান এই 'নগরপল্লী' নির্মাণে কত ব্যয় হয়েছে জানতে চান? ৫৫ কোটি ডলার মাত্র! সূত্র : সমকাল
আপনার মতামত লিখুন :