শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ১১ এপ্রিল, ২০১৮, ১১:০৫ দুপুর
আপডেট : ১১ এপ্রিল, ২০১৮, ১১:০৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের যুদ্ধ এক সর্বনাশা ধ্বংসযজ্ঞ ও বিপর্যয়ে পর্যবসিত হয়েছে

সৌদি নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন জোট যুদ্ধে জিততে পারবে না। কিন্তু অনুকূল শর্ত ও অবস্থা সাপেক্ষে তা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের নিরসন করতে পারে। আর যুক্তরাষ্ট্রের উচিৎ এ ক্ষেত্রে সাহায্য করা।
মূলঃ ডঃ ইয়োএল গুজানস্কি এবং আরি হাইস্টাইন
অনুবাদঃ মোঃ মুনীর হোসাইন খান
[এ প্রবন্ধ থেকে ইয়েমেন-সৌদি আরব যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পাশ্চাত্য এবং ইসরাইলের মদদপুষ্ট সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন জোটের পরাজয় ,ব্যর্থতা ও শোচনীয় অবস্থার এক সার্বিক চিত্র বেশ ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। লেখকদ্বয় ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক স্ট্যাডিস ইন্সটিউটের কর্মকর্তা ও রিসার্চ ফেলো। তাই তাদের ইরানকে ইয়েমেনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে হস্তক্ষেপ করার দোষে দায়ী করা একান্ত স্বাভাবিক। কিন্তু এটা হচ্ছে সত্যের অপলাপ মাত্র। আসলে ইঙ্গো-মার্কিন- ইসরাইলি-সৌদি-আমিরাতি চক্রই আফগানিস্তান - পাকিস্তান- ইরাক-সিরিয়া-ইয়েমেন-মিসর- তিউনিসিয়া-নাইজেরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে যা কারো অজানা নয়। আল-কায়দা, তালিবান, দায়েশ (আইসিস) বোকোহারামসহ বিভিন্ন উগ্র সন্ত্রাসী তাকফীরী ওয়াহহাবী সালাফী গোষ্ঠীগুলো এই ইঙ্গো- মার্কিন- ইসরাইলি- সৌদি-আমিরাতি চক্রের অবৈধ সন্তান স্বরূপ।এই অশুভ চক্র এসব গোষ্ঠীর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জংগীবাদ সন্ত্রাসবাদ সহিংসতা ধর্মীয় বিদ্বেষ ও উগ্রবাদের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং আজ মুসলিম বিশ্ব এই অশুভ শয়তানি চক্রের মদদপুষ্ট উগ্র জংগী সন্ত্রাসী তাকফীরী ওয়াহহাবী সালাফী গোষ্ঠী ও গ্রুপসমুহের সন্ত্রাসী কর্মতৎপরতার কারণে ক্ষত-বিক্ষত ও রক্তাক্ত এবং আজ বহু মুসলিম দেশ ও রাষ্ট্র ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। এ হচ্ছে মুসলিম বিশ্বকে ভিতর থেকে ধ্বংস করে দেয়ার এক মহা পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র। অতএব সমগ্র ইসলামী উম্মাহর উচিৎ এই চক্রের অশুভ চক্রান্ত ও পরিকল্পনা সম্পর্কে সঠিক অবগত হওয়া।-অনুবাদক]

এই মার্চ মাসে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে তিন বছর পূর্তী হল। কিন্তু রিয়াদের ক্ষেত্রে এ যুদ্ধ বার্ষিকী পালন করা অনুপযোগী ও অসম্ভব। এ যুদ্ধে সৌদিদের ১০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে। আর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এ যুদ্ধ সৌদিদের সুনাম নষ্ট করেছে এবং ইয়েমেনে ইরানের প্রভাব বিলুপ্ত ও নিশ্চিহ্ন করা সংক্রান্দ লক্ষ্যমাত্রা ও উদ্দেশ্য অর্জনেও সৌদিরা ব্যর্থ হয়েছে। অথচ এই একই সময় মার্কিন সমর্থিত সৌদি আরবের এ যুদ্ধে ইয়েমেনের জনগণ যেমন ব্যাপক ও গভীর ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হয়েছে ঠিক তেমনি দেশটির অবকাঠামোও সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করা হয়েছে এবং সমগ্র দেশ জুড়ে রোগ-ব্যাধি এবং খাদ্যাভাবের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) ওয়াশিংটন সফরের মধ্য দিয়ে মার্কিন প্রশাসন এ ক্ষতিকর যুদ্ধাবসানের একটা ভালো সুযোগ পাবে।

সৌদি আরবের জন্য ইয়েমেন হচ্ছে প্রভাব বিস্তারের এক ঐতিহাসিক লক্ষ্যমাত্রা এবং সৌদি জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্যও এক জটিল ক্ষেত্র। কারণ, এ দেশটির সাথে সৌদি আরবের যেমন এক দীর্ঘ ও সচ্ছিদ্র (অদুর্ভেদ্য-লংঘণীয়) সীমান্ত রয়েছে ঠিক তেমনি লোহিত সাগরে প্রবেশ পথও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ইয়েমেন। আর ইরানের ক্ষেত্রে ইরাক ও সিরিয়ার সাথে তুলনা করলে ইয়েমেন হচ্ছে দ্বিতীয় পর্যায়ের গুরুত্ববহ দেশ। যাহোক, হুথি মিলিশিয়াদের উপর তুলনামূলক অল্প বিনিয়োগ করেই ইরান তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বির (সৌদি আরব)কাছ থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা আদায় করতে পেরেছে।

হুথিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সামরিক গোয়েন্দা তথ্য এবং লজিস্টিক সাপোর্ট লাভ করছে সৌদি আরব।তাছাড়া এ দেশটির নিরাপত্তা বাজেট হচ্ছে বিশ্বে ৪র্থ বৃহত্তম এবং এর হাতে রয়েছে উন্নত (আধুনিক)অস্ত্রভা-ার। কিন্তু এদতসত্ত্বেও এ দেশটির কাছে এর দোরগোড়ায় বিদ্যমান ও উপস্থিত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ শত্রুকে পরাজিত করাটা কঠিন ও দুরূহই লাগছে। বস্তুত ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও দেশের আরও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলে রাখা ছাড়াও হুথিরা একশ’র বেশি ক্ষেপণাস্ত্র যা ইরানের তৈরি বলে অভিযোগ রয়েছে সৌদি আরবের অভ্যন্তরে নিক্ষেপ করেছে এবং ১০০ বর্গ মাইলের বেশি সৌদি ভূখ- দখল করে নিয়েছে।

সামরিক-নিরাপত্তাবিষয়ক (পূঁজি)বিনিয়োগ এবং যুদ্ধে সামরিক বাহিনীর দক্ষতা ও সাফল্যের মধ্যকার ব্যবধান সৌদি বাদশাহ সালমান এবং তাঁর উত্তরাধিকারী যুবরাজ এমবিএসকে সৌদি সশস্ত্র বাহিনীর স্টাফ প্রধান, স্থলবাহিনী প্রধান এবংবিমান প্রতিরক্ষা প্রধানসহ বহু ঊর্ধ্বতন সামরিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করতে বাধ্য করেছে। এসব রদবদলকে সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ বলে দেখানো হয়েছে তবে তা প্রকৃতপক্ষে সৌদি সামরিক বাহিনীর দক্ষতা ও পারদর্শিতা সংক্রান্ত সৌদি অভিজাত শ্রেণির ক্রমবর্ধমান হতাশাকেই প্রতিফলিত করছে। এ সব পদ পরিবর্তন ও রদবদল কি সৌদি সামরিক কৌশলে জরুরি পরিবর্তন সাধন করবে এবং যদি করে তাহলে চলমান যুদ্ধের উপর তার সম্ভাব্য প্রভাব ও ফলাফল কী হতে পারে সে সংক্রান্ত মন্তব্য করা এখনও অনেক তাড়াতাড়ি হবে।

(তুলনামূলক) সাফল্য অর্জন সত্ত্বেও ইয়েমেনে তার কর্মতৎপরতা চালানোর ক্ষেত্রে ইরানও অসুবিধা ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। পাশ্চাত্যের সহায়তায় আরব দেশগুলোর আরোপিত সামুদ্রিক অবরোধ ইয়েমেনে ঘটনাবলি নিয়ন্ত্রণ করা সংক্রান্ত ইরানের শক্তি ও সামর্থ্যকে সীমিত করছে। যেহেতু তেহরানের পক্ষে সামুদ্রিক অবরোধ ভাঙ্গা সম্ভব নয় সেহেতু হুথিদের কাছে চোরাইপথে স্বল্পসংখ্যক সামরিক উপদেষ্টা ও বিশেষজ্ঞ, টাকা-পয়সা এবং ক্ষেপণাস্ত্রের যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র প্রেরণ ব্যতীত আর কোন বিকল্প পথ নেই ইরানের।

একই সময় ইয়েমেন যুদ্ধ প্রধান মুসলিম মিত্রদের সাথে সৌদি আরবের নাজুক সম্পর্কের ধরণও প্রকাশ করেছে।এদেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদেশ পাকিস্তান সৌদি আরবকে যুদ্ধে সহায়তাদানের জন্য সৈন্য পাঠানোর বিষয়টি আশ্চর্যজনকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।মিশরের সিসি সরকারও যে সৌদি আরব এই দেশটিতে বহু বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং এ দেশটি সৌদি আরবের জন্য কৌশলগত গভীরতা বলে গণ্য করা হয়। যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বিশাল সংখ্যক স্থলবাহিনী প্রেরণ করে নি তা সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে। বরং কায়রো রিয়াদকে সাহায্য করার জন্য মাত্র কয়েক শ’ সৈন্য ও ৩-৪টা যুদ্ধ জাহাজ পাঠিয়েছে। আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনকি যে সব দেশ সৌদি নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে যোগদান করতে সম্মত হয়েছিল যুদ্ধ চলাকালে রিয়াদের সাথে তাদেরও স্বার্থসংঘাত তৈরি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সৌদি ও আরব আমিরাত এমন সব গোষ্ঠী ও বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতা দান করছে যারা ইয়েমেনের ভবিষ্যতের ব্যাপারে পরস্পর বিরোধী এবং তা সময় সময় সৌদি আমিরাতের স্থানীয় সমর্থকদের মধ্য সংঘর্ষ ও সহিংসতা সৃষ্টি করেছে।

সৌদি যুবরাজ এমবিএসের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং ওয়াশংটনে সৌদি রাজকীয় সফরকে এ ধ্বংসাত্মক ও বিপর্যয়সৃষ্টিকারী যুদ্ধ বন্ধ করার এক সুযোগ বলে বিবেচনা করত ওয়াশিংটনের (উপলব্ধি ও ভেবে) দেখা উচিৎঃ সৌদি নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন জোট এ যুদ্ধে বিজয়ী হতে পারবে না।তবে তারা(সৌদি জোট)এ যুদ্ধটাকে অনুকূল শর্ত ও অবস্থা সাপেক্ষে বন্ধ করতে পারে।আর ওয়াশিংটনের উচিৎ এ জোটকে তা করতে সাহায্য করা।

এক সীমিত সময়কালের জন্য সৌদি আরবের যুদ্ধে ওয়াশিংটনের বর্ধিত সমর্থনের বিনিময়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উচিৎ এ দাবি করা যে সৌদিরা বেসামরিক প্রাণহানি বন্ধ করার জন্য আরও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং যে সব ইয়েমেনি রোগ ও খাদ্যাভাবের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তাদের ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ বাড়িয়ে দেবে।

মার্কিন সহায়তা ও সাপোর্ট যে উঠিয়ে নেয়া ও প্রত্যাহার করা হবে তা জানলে সৌদিরা যত শিগগির সম্ভব তত তাড়াতাড়ি এক রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছতে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হবে, আবার একই সময় হুথিদের উপর আঘাত হানা এবং মার্কিন সমর্থন ও সাপোর্ট যে গতিময়তার সৃষ্টি করবে তা ( এবং ডেডলাইনটা গোপন রাখা ) ইরান-সমর্থিত হুথিদেরকেও এ যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করবে। আর উভয় পক্ষকে যদি যুদ্ধ বন্ধ করতে উদ্বুদ্ধ ও বাধ্য করা হয় তাহলে এক ধরনের রাজনৈতিক আপোস ও নিষ্পত্তিতে উপনীত হওয়া সম্ভবপর বলে মনে হয়।

ইয়েমেন যুদ্ধ সকল পক্ষের জন্যই বিপর্যয় বয়ে এনেছে।আর তাই এ যুদ্ধ বন্ধ করাই হচ্ছে যেমন একদিকে মার্জিত ও চৌকস বিষয় ঠিক তেমনি অপরপক্ষে এটা হচ্ছে ন্যায় ও যথার্থ বিষয় যা অবশ্যই করা উচিৎ।আর যেহেতু যে সব অঞ্চল সংঘর্ষ ও নিরাপত্তাহীনতার শিকর সে সব অঞ্চলেই ইরানের হস্তক্ষেপ সবচেয়ে বেশি সফল সেহেতু যুদ্ধ বন্ধ করার মধ্যেই রয়েছে আঞ্চলিক বিষয়াদির ক্ষেত্রে ইরানের হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা কার্যকরভাবে দুর্বল করার বর্ধিত সুবিধা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়