শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১১ এপ্রিল, ২০১৮, ০৯:৩৯ সকাল
আপডেট : ১১ এপ্রিল, ২০১৮, ০৯:৩৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সাইবার অপরাধ নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশ, অভিযোগের পাহাড়

আবু হোসাইন শুভ : বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর গত ৩ মাস আগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিয়ে হয় মেয়েটির। আগে থেকেই ফেসবুকে একটি একাউন্ট ছিল। বিয়ের এক সপ্তাহ পর মেয়েটির নামে আরেকটি একাউন্ট খুলে নানা ধরনের অশ্লীল ছবি পোস্ট করা শুরু হয়। পরিচিতদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে মেয়েটি মুষড়ে পড়ে। ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয় সংসার। পরে এক বন্ধুর পরামর্শে স্বামীকে কোনোভাবে রাজি করিয়ে পুলিশের শরণাপন্ন হয়। দেড় মাসেরও বেশি সময় চেষ্টা করে পুলিশ ভুয়া আইডি বানানো ব্যক্তিকে শনাক্ত করে। তিনি ওই মেয়েটির বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু। এসব করার কারণ হিসেবে তার দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই তাকে অনেক পছন্দ করে, কখনো বলতে পারেনি। কিন্তু বিয়ে হওয়ার খবর জানার পর সে মেনে নিতে পারছে না। তাই সে বিয়ে ভাঙার চেষ্টা করছিল।’

এই ধরনের হাজার হাজার অভিযোগ পুলিশের কাছে আসছে। কেউ নাম-পরিচয় প্রকাশ করে প্রতিকার চাইছেন। আবার কেউ পরিচয় প্রকাশ করতে চাইছেন না। এই ধরনের অভিযোগের সুরাহা করতে পুলিশকে অনেক সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। তারপরও সব অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তে যেতে পারছে না। ফলে কিভাবে এই ফেসবুক সমস্যার প্রতিকার করবে তা নিয়েই উদ্বিগ্ন পুলিশ। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর প্রতিটি থানার সব এসআইকে দেওয়া হচ্ছে সাইবার প্রশিক্ষণ। ২০ জনের একটি গ্রুপ করে তিন দিনের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রথম দফায় ২০ জনের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে গত সোমবার। গতকাল থেকে নতুন গ্রুপের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দফতরে খোলা হয়েছে হেল্প ডেস্ক। সরাসরি সেখানে অভিযোগ নেওয়া হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ও সাইবার সিকিউরিটি ইউনিটের উপ-কমিশনার আলীমুজ্জামান  বলেন, ‘আমাদের কাছে যত অভিযোগ আসছে তার অধিকাংশই ফেসবুক নিয়ে। কিছু ই-মেইল সংক্রান্ত। আমরাও সবাইকে এটেন্ড করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এক-একটি অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে অনেক সময় লাগে। তারপরও গত তিন মাসে আমরা ৬টি মামলার চার্জশিট দিয়েছি। আরো একটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছি। গত বছর আমাদের কাছে সরাসরি এসে অভিযোগ করেছিল ৫৬৬ জন। এর মধ্যে ২৩৩টি ঘটনার নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এছাড়া ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপসের মাধ্যমে অভিযোগ এসেছে ৫ হাজার ৮৪২টি। গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা অভিযোগের সুরাহা করার চেষ্টা করছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই অভিযোগগুলোর বাইরেও রাজধানীর ৪৯টি থানায় (একটি আদেশ হলেও চালু হয়নি, সেটা ধরলে ৫০টি) গড়ে প্রতিদিন ২টা থেকে ৩টা করে ফেসবুকে প্রতারণা ও হয়রানির অভিযোগ আসছে। সে হিসেবে শুধু রাজধানীর থানাগুলোতেও মাসে ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার অভিযোগ আসছে। বছরে যেটার পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার অভিযোগ। এর বাইরে সারাদেশের থানা তো আছেই। এই ধরনের অভিযোগ শুধু পুলিশের কাছেই যাচ্ছে তা নয়, বিটিআরসি ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের হেল্প ডেস্কেও অভিযোগ হচ্ছে। সেগুলোর পরিমাণও নিতান্তই কম নয়। ফলে এই বিপুল সংখ্যক অভিযোগের সুরাহা কিভাবে হবে, এর কোনো নির্দেশনা নেই। পুলিশ নিজেদের মতো করে সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের প্রধান মাধ্যম হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সাইবার হেল্প ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, শতকরা ৭০ ভাগ অভিযোগই আসে নারীদের থেকে। সাইবার হয়রানি থেকে সুরক্ষা দিতে পুলিশের পাশাপাশি আইসিটি বিভাগে একটি সাইবার হেল্প ডেস্ক রয়েছে। এই ডেস্কে গত দু’বছরে ১৫ হাজারেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। কিছু অভিযোগ খুবই ভয়াবহ। অন্যের ছবিতে ছবি জুড়ে দেওয়া (সুপার ইম্পোজ) এবং পর্নোগ্রাফি। তা ছাড়া ইউটিউব ও বিভিন্ন সাইটে এসব পর্নোগ্রাফি ও ছবি ‘আপ’ করার হারও বেড়েছে।

গত তিন মাসে সাইবার অপরাধে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট ৩৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। গত বছর এই একই অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিল ৭২ জন। সাইবার ক্রাইম ইউনিট গত বছর চার্জশিট দিয়েছে ২৯টি মামলার। এখন পর্যন্ত ১১৯টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। দেশে উগ্রপন্থি এবং জঙ্গিরা ব্যাপকভাবে সাইবার অপরাধে জড়িয়ে পড়লেও, তাদের অনেককেই আইনের আওতায় আনা বা চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি নানা ধরনের প্রোপাগান্ডাও ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে। সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনেও ফেসবুকের ব্যবহার হয়েছে। একজন মারা গেছে বলেও খবর ছড়ানো হয়।

এদিকে কোনো তথ্যের ব্যাপারে ফেসবুকের কাছে ই-মেইল করা হলে তার জবাব আসতে সময় লাগে। আগে অধিকাংশ মেইলেরই জবাব দিত না ফেসবুক। বর্তমানে তারা সাড়া দিচ্ছে বলে জানালেন সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মিশুক চাকমা। তিনি ইত্তেফাককে বলেন, গত তিন মাসে তিনি ২২টি মেইল করেছিলেন। এর মধ্যে ফেসবুক জবাব দিয়েছে ১৭টি মেইলের। গেল বছর তিনি ৪৪টি মেইল পাঠিয়েছিলেন তার মধ্যে জবাব পেয়েছেন ২৩টি মেইলের। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ফেসবুক আমাদের অভিযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা যত গুরুত্ব দেবে আমরা তত দ্রুতই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারব। অপরাধীরা যখন বুঝতে পারবে এখানে অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না, তখন অপরাধের প্রবণতাও অনেক কমে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।’  সূত্র :ইত্তেফাক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়