ডেস্ক রিপোর্ট: কয়েক বছরে বরেন্দ্র অঞ্চলে থাই পেয়ারা চাষ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। পোকা ও বিষমুক্ত উন্নতজাতের এ পেয়ারা উৎপাদনে চাষিরা ব্যবহার করছেন পলিথিনের ফ্রুটব্যাগ। এতে উৎপাদন ভালো হচ্ছে। চাষিরাও লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু ঝুঁকিতে পড়ছে পরিবেশ। কেননা, এ বিপুল পলিব্যাগ ছড়িয়ে পড়ছে প্রকৃতিতে। এগুলো বিনষ্টযোগ্য নয়। অদূর ভবিষ্যতে এর প্রভাব পড়বে কৃষিতে, তখন জমির উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, পাঁচ বছর এ অঞ্চলে ২২ লাখ ৬০৭ টন পেয়ারা উৎপাদন হয়েছে। এতে ব্যবহার হয়েছে ৮২৩ কোটি পিস ফ্রুটব্যাগ। কৃষি দপ্তরের পরামর্শেই এ ফ্রুটব্যাগ ব্যবহার করছেন চাষি। কৃষি বিভাগ মনে করছে, রাসায়নিক কীটনাশকের চেয়ে অনেক ভালো এ পলিব্যাগ। তবে ভিন্ন কথা বলছেন পরিবেশবিদরা। রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মামুনুর রশিদ জানান, পেয়ারার পলিথিন ছড়িয়ে পড়লে পরিবেশ দূষণ বাড়বে। কারণ, এ পলিথিন মাটি বা পানিতে পচে না। তাই যেখানে পলিথিন থাকবে, সেখানে কোনো ফসলই ভালো হবে না। উৎপাদনেও পড়বে ভাটা। কৃষি দপ্তরের সঙ্গে আলাপ করে করণীয় ঠিক করার কথাও জানান এ কর্মকর্তা।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, গাছে সারা বছরই ধরছে থাই পেয়ারা। প্রতি হেক্টরে প্রায় ১ লাখ পলিথিন ফ্রুটব্যাগ ব্যবহার করেন চাষিরা। মাঠ থেকে পেয়ারার সঙ্গে অধিকাংশই পলিথিন চলে যায় বাজারে। ফলে ‘ফ্রুটফ্লাই’সহ বিভিন্ন ছত্রাক আক্রমণ ঠেকাতে চাষিরা ফ্রুটব্যাগ ব্যবহার করছেন। এতে কমছে রাসায়নিকের ব্যবহার। পেয়ারার রং আকর্ষণীয় থাকায় ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহী শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্রি হচ্ছে পলিথিন মোড়ানো পেয়ারা। বিক্রেতারা পেয়ারা বিক্রি করছেন ব্যাগ খুলে। বিক্রেতাদের কেউ কেউ এসব ব্যাগ বস্তাভার্তি রাখলেও অধিকাংশই ফেলে দিচ্ছেন যত্রতত্র। পরে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের হাতঘুরে তা চলে যাচ্ছে ভাগাড়ে। অন্যান্য গৃহস্থালি বর্জ্যরে সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বিনষ্টযোগ্য নয় এসব পলিথিন।
কয়েকজন পেয়ারা চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুঁড়ি থেকে পেয়ারা আসার প্রায় ১০ দিন পর পলিথিনের ফ্রুটব্যাগ পরানো হয়। এর প্রায় তিন মাস পর পেয়ারা বাজারে যায়। সস্তায় হাতের নাগালে এ ব্যাগ পাওয়ায় প্রত্যেক বাণিজ্যিক পেয়ারা চাষি এ ব্যাগ ব্যবহার করেন। অনেক চাষি জমিতে পেয়ারা থেকে ফ্রুটব্যাগ খুলে বাজারজাত করেন। আবার অনেকেই বিক্রি করে দেন ফ্রুটব্যাগসহ।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইসাহাকের ৩ একরের মিশ্র ফলবাগান রয়েছে। তিনিও ফ্রুটব্যাগ হিসেবে পেয়ারায় পলিথিন ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন, কৃষি দপ্তরের পরামর্শেই এ ব্যাগ ব্যবহার করছেন তিনি। তবে পলিথিনের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে তিনি জানেন।
আঞ্চলিক কৃষি দপ্তর জানিয়েছে, ২০১৭-১৮ মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে পেয়ারা চাষ হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে। এর আগে ২০১৬-১৭ মৌসুমে ৬ হাজার ৪২৭ হেক্টর জমিতে এ ফল চাষ হয়। এতে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৭৮ টন পেয়ারা। এর মধ্যে রাজশাহীর ৫ হাজার ৬০ দমিশক ৫ হেক্টরে ১ লাখ ২২ হাজার ৭৩৩ টন, নওগাঁয় ৩৫৭ হেক্টরে ২ হাজার ৫৭৯ দশমিক ৫ টন, নাটোরে ৪৬৪ হেক্টরে ৫ হাজার ১৬২ টন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ হাজার ১০ হেক্টরে ৬ হাজার ৯০৪ টন পেয়ারা উৎপাদন হয়েছে। আলোকিত বাংলাদেশ
আপনার মতামত লিখুন :