শিরোনাম
◈ থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ ◈ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় ◈ শিক্ষক নিয়োগ: ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি, ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার ৫ ◈ বিদ্যুৎ-গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না ◈ রোববার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান  ◈ নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি ◈ উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হতে পারে: সিইসি ◈ ভারতের রপ্তানি করা খাদ্যদ্রব্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পেয়েছে ইইউ ◈ ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিলে জো বাইডেনের স্বাক্ষর ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি

প্রকাশিত : ১০ এপ্রিল, ২০১৮, ০৭:০২ সকাল
আপডেট : ১০ এপ্রিল, ২০১৮, ০৭:০২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কোন্দলে জর্জরিত আওয়ামী লীগ, স্বস্তিতে বিএনপি

ডেস্ক রিপোর্ট : খাগড়াছড়ি জেলার নয়টি উপজেলা নিয়ে একটি আসন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নয়টি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভার বিশাল এলাকাজুড়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তৎপরতা শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থীরা সরব হয়ে উঠেছেন। তবে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জেলা সদর ও উপজেলাগুলোতে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরছেন। নিজেদের প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছার কথাও জানান দিচ্ছেন তারা। তাদের এ তৎপরতায় দলীয় কোন্দলের উত্তাপও ছড়াচ্ছেন।
এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে মামলার জালে জড়িয়ে পড়ছে। আওয়ামী লীগের কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক মাঠে সোচ্চার বিএনপি। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। তবে এ দলে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে শক্ত দাবিদার একজন। অপরদিকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে অপেক্ষার প্রহর গুণছে ইউপিডিএফ।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কল্পরঞ্জন চাকমা। ২০০১ সালে খাগড়াছড়ি আসনে বিএনপি প্রার্থী আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে তা আবার আওয়ামী লীগের ঘরে নিয়ে আসেন যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ৯৯ হাজার ৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগ: আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে দুটি কার্যালয় থেকে। এখানকার দুপক্ষের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে জেলার সবগুলো উপজেলা ও ইউনিয়নে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের দ্বন্দ্ব বহুদিনের। এখন এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। অন্য পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. জাহেদুল আলম। দুপক্ষের এই দুই নেতার আলাদা কার্যালয় থেকে দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। জেলা আওয়ামী লীগের মূল কার্যালয় নিজেদের দখলে রেখে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত করছেন জাহেদুল আলম ও তার অনুসারীরা। আর শহরের কদমতলীস্থ এমপির বাসভবন সংলগ্ন অস্থায়ী কার্যালয় থেকে দলীয় কমান্ড পরিচালনা করছেন কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি ও তার অনুসারীরা। এদিকে খাগড়াছড়ি জেলায় আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা দুই ধারা বজায় রাখলেও খাগড়াছড়ি জেলায় গ্রুপিংয়ে নতুন মেরুকরণ ঘটেছে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এ আসনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়েছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ দ্বন্দ্ব ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে রূপ নেয়। এ দ্বন্দ্ব নিয়েই আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা গণসংযোগের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে লবিং করছেন।

আওয়ামী লীগের মনোনায়ন প্রত্যাশীরা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। সাবেক এমপি ও সাবেক জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কংজরী চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা। খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল আলম। সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, ‘সংগঠন ও এলাকার জনগণ যে লক্ষ্য নিয়ে আমাকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছে, সেই লক্ষ্য তথা এলাকার উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জনবান্ধবই বলেন আর দলবান্ধবই বলেন, আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। প্রধানমন্ত্রী যাকেই মনোনীত করবেন তার পক্ষেই আমি অতীতের মতো সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করব। সাবেক এমপি যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তেমন কিছু নয়, কেন্দ্র থেকে চাইলেই এটা সমাধান হয়ে যাবে। এখানে আমি সাবেক এমপি ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আমি সর্বদা সচেষ্ট ছিলাম। এ অঞ্চলের উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের সুখে-দুঃখে সবসময় পাশে ছিলাম, এখনও আছি। নেত্রী তার সোর্স দিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনসমর্থন সার্ভে করেছেন। নেত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন, কে মনোনয়ন পাবেন। তবে আমি আশাবাদী দল এবার আমাকে মনোনয়ন দেবে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কংজরী চৌধুরী বলেন, মনোনয়নের চূড়ান্ত এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কাছেই। মনোনয়ন যিনিই পাবেন তার পক্ষেই আমরা কাজ করব। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি ধরে রাখাই জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর উদ্দেশ্য। এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র রফিকুল আলম বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করে আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দল ও হাইকমান্ড চাইলে আমি নৌকার হাল ধরতে প্রস্তুত। খাগড়াছড়িবাসীর ভালোবাসা নিয়ে আমি কাজ করছি। হাইকমান্ড যদি চান তবে আমি এ আসন নেত্রীর হাতে উপহার দিতে পারব ইনশাআল্লাহ্‌।

বিএনপি: এ আসনে বিএনপির তেমন কোনো কোন্দল চোখে না পরলেও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সমীরণ দেওয়ানের রয়েছে আলাদা প্রচারণা। বিএনপি নেতারা বলছেন, নতুন নেতাদের সমন্বয়ে এ জেলায় দলের জনসমর্থন সুসংহত হয়েছে। জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, আমরা সাংগঠনিকভাবে সুন্দর অবস্থায় আছি। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা থাকেই। বড় দলে গ্রুপিং থাকবেই। তবে আমাদের বোঝাপড়া খুবই ভালো। ভোটের সময় এরা সবাই মূলস্রোতে চলে আসবে। বিগত দিনে আমি জনগণের পাশে থেকে রাজনীতি করেছি। এখনও করছি। দলের প্রয়োজনে এবং এলাকার উন্নয়নের কথা চিন্তা করে দল আমাকেই মনোনায়ন দেবে। সে লক্ষ্যে আমি কাজ করে যাচ্ছি। তবে নির্বাচনে যদি আইনি কোনো জটিলতা দেখা দেয় তাহলে তখন উপস্থিত সবার পরামর্শে প্রার্থিতা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ এ আসনে চোখে পড়ার মতো জামায়াত-শিবিরের কোনো কার্যক্রম নেই। তবে কিছুসংখ্যক কর্মী-সমর্থক রয়েছে, যারা বিএনপির সঙ্গে এক হয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

জাতীয় পার্টি: জেলা পর্যায়ে দলটির সাংগঠনিক অবস্থা অনেক দুর্বল। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ মনোনয়ন পান খাগড়াছড়ি আসনে। তখন থেকেই পাল্টে যেতে থাকে জাতীয় পার্টির তৎপরতাও। আগামী নির্বাচনেও সোলায়মান আলম শেঠ-ই দলের মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করেন সাধারণ নেতাকর্মীরা।
সোলায়মান আলম শেঠ বলেন, এরশাদের শাসনামলেই পাহাড়ে বিদ্যুৎ, সড়ক, উপজেলা পরিষদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণসহ ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে এসব বিষয়কে সামনে রেখেই মেনোফেস্টো প্রণয়নের কাজ চলছে। তিনি নিজের মনোনয়নের বিষয়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেন, আগামী নির্বাচনে বড় দুই দলের ধাক্কাধাক্কি এবং আঞ্চলিক দলের চাপাচাপির ফল লাঙলই হবে।

ইউপিডিএফ: খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের আঞ্চলিক রাজনীতিকে বেশ শক্তিশালী বলে ধরা হতো। তবে তাদের এই শক্তিশালী বাহুতে সম্প্রতি ঘূণ ধরেছে। রাষ্ট্রদ্রোহিতা, স্বৈরাচারিতা, চাঁদাবাজি, দুর্নীতিসহ অসংখ্য অভিযোগ এনে গত বছরে ইউপিডিএফ’র মূল দল ভেঙে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামে অন্য একটি আঞ্চলিক দলের সৃষ্টি হয়েছে। এরপর থেকে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে সংগঠনটি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপরীতে এই দলের প্রধান প্রসিত বিকাশ খীসা অংশ নিয়ে জেলাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। এবারও তিনি এ আসনে লড়বেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে নবসৃষ্ট সংগঠন ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক থেকেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। এদিকে জেলার গুইমারা উপজেলা চেয়ারম্যান উশেপ্রু মারমা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন। এর আগে তিনি ৬ই মার্চ গুইমারা উপজেলা নির্বাচনে ইউপিডিএফ-এর প্রার্থী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। গুইমারা উপজেলা চেয়ারম্যান উশেপ্রু মারমা বলেন, জনগণ আমাকে ভালোবেসে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেছে। আমার প্রতি জনগণের যে পরিমাণ ভালোবাসা রয়েছে আমার বিশ্বাস সবার সহযোগিতায় আমি আগামী নির্বাচনে এমপি হিসেবে নির্বাচিত হব।
ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় প্রচার সেলের প্রধান নিরন চাকমা বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে জন্মের পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনেই আমাদের অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু সরকার ও প্রশাসনের চাপে কোনো কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দলের শীর্ষ থেকে তৃণমূল এমনকি নারী কর্মীদেরকেও ধরপাকড় করে মামলায় জড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
জেএসএস: ইউপিডিএফ নিজেদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিয়ে আসলেও জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) অংশের কর্মকাণ্ডে ইউপিডিএফ’র তৃণমূলে বেশ অস্বস্তি রয়েছে। গত নির্বাচনে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির ইউপিডিএফ’র একটি গোপন বোঝাপড়ায় একে অপরকে ছাড় দেয়া হয়েছিল। তবে এবার কী ঘটতে যাচ্ছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। এছাড়া খাগড়াছড়িতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), জাসদ (ইনু), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)-র নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র : মানবজমিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়