শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ০৯ এপ্রিল, ২০১৮, ০৪:০৪ সকাল
আপডেট : ০৯ এপ্রিল, ২০১৮, ০৪:০৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ক্যানিবলিজম কী অন্যরূপে ফিরে আসছে?

কাকন রেজা : রংপুরের অ্যাডভোকেট রথিশ চন্দ্র ভৌমিক ও হবিগঞ্জের বিউটি হত্যাকান্ডের বিষয়ে অনেককে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আফসোস প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে। বিস্ময়বোধক চিহ্নের সাথে অনেকে প্রশ্ন রেখেছেন মানুষের মানবিকতার স্তর নিয়ে। তবে আমজনতার বিহ্বল প্রশ্নের সাথে ইন্টেলেকচুয়্যালদের জিজ্ঞাসার একটু পার্থক্য রয়েছে। আমজনতার প্রশ্নে রয়েছে বিস্ময়ের সাথে ক্ষোভ, আর ইন্টেলেকচুয়্যালদের বিস্ময়ের সাথে ব্যক্তিগত হতাশা। এমন ইন্টেলেকচুয়্যালরা কোন ঘটনা ঘটার সাথেই ভবিষ্যত বক্তা যান। কিন্তু এ দুটি ঘটনার সাথে তাদের সে ভবিষ্যত বাণী যায়নি। তাদের হতাশা হলো ‘ভবিতব্য’ না হবার ক্ষোভে।

রথিশ ভৌমিক ও বিউটি হত্যাকান্ডের বিষয়টি ভবিষ্যত বক্তাদের ট্রেন্ডের সাথে না গেলেও হত্যাকান্ড দু’টির মূলধারা লক্ষ্য করলে ভয়াবহ সত্যের দেখা মিলবে সত্যানুসন্ধানীদের। ‘উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে’ চাপানোর সত্য। এমন প্রবাদের সাথে পরিচয় আমাদের ছোটবেলাতেই। এই হত্যাকান্ডের ধরণও সেই প্রবাদের সাথে যায়। যায় প্রতিপত্তি আর ভোগের নেশার চলতি ট্রেন্ডের সাথেও। দুটি ক্ষেত্রেই হত্যাকারীরা ব্যক্তিস্বার্থে অন্যকে ফাঁসিয়ে দেয়ার সহজ সুযোগটি নিয়েছেন।

রথিশের স্ত্রী স্নিগ্ধা নিয়েছেন স্পর্শকাতর ট্রেন্ডের সুযোগ, একইভাবে বাবুলকে ফাঁসিয়ে দিতে বিউটির বাবা-চাচা নিয়েছেন ধর্ষণ ট্রেন্ডের সুযোগ। দক্ষিণ এশিয়ায় বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে এক ধরণের ক্যানিবলিজমের চর্চা শুরু হয়েছে। ক্রমাগত নিষ্ঠুর উঠছে মানুষ। ধর্ম ও ধর্মবিরোধীতার নামে শুরু হয়েছে চরমপন্থার চর্চা। রাজনীতিতেও প্রতিদ্বন্দ্বী দমনে আশ্রয় নেয়া হচ্ছে এক্সট্রিমিজমের। প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধ প্রবণতায় মানুষ ক্রমেই ক্যানিবাল উঠছে, গড়ে উঠছে অন্যরকম ‘নরভুক’ সমাজ। দক্ষিণ এশিয়ার এই বদ হাওয়ার আছর পড়েছে আমাদের দেশেও। রথিশ ভৌমিকের স্ত্রী এবং বিউটির বাপ-চাচারা সেই ক্যানিবলিজমেরই উপাসক। নিজের স্বার্থের কাছে স্বামী আর কন্যাকে বলি দিতে বাধেনি তাদের। বলি দিতে তারা আশ্রয় নিয়েছে ধোঁকা দেয়া ও বোকা বানানোর ট্রেন্ডের।

বিউটি হত্যাকান্ডে বাবুল ¯্রফে ‘স্কেপ গোট’, বলির পাঁঠা। যতটুকু জানা গেছে তাতে বাবুল বিউটি পরস্পরকে ভালোবেসে ঘর ছেড়েছিল। বাসাও বেধেছিল দুজন। বিউটির বাবা-মা বাধ সেধেছিলেন সে ভালোবাসায় এবং তা হয়তো একদিন মিটেও যেতো। কিন্তু মাঝখানে ঢুকলেন এলাকার রাজনৈতিক নেতা, ক্যানিবলিজমের উপাসক ময়না মিয়া। যার স্ত্রী বাবুলের মায়ের সাথে নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন। বিউটিকে বাবুলের কাছ আনা হলো। ভালোবেসে নিরুদ্দেশ যাত্রা পরিণত হলো অপহরণে, আর বসবাস ধর্ষণে। অবশেষে মামলা এবং শেষ পর্যন্ত বাবুল আর তার মাকে ঝাড়েবংশে নিপাত করতে বিউটিকে খুন। পলিটিক্যাল ক্যানিবাল ময়না মিয়ার ক্ষমতা পিপাসা আর প্রতিহিংসায় ঝরে পড়লো দুজন মানুষ। খুন হলো বিউটি আর কারাগারে বাবুল।
স্নিগ্ধা ভৌমিকের ক্ষেত্রেও একি ঘটনা। যেহেতু তার স্বামী স্পর্শকাতর মামলার আইনজীবী, আরেকটি স্পর্শকাতর মামলার স্বাক্ষী। সুতরাং এক্ষেত্রে ক্যানিবাল উঠা খুবই সহজ। ক্যানিবলিজমের উপাসক স্নিগ্ধা আর কামরুল সহজ সুযোগটাই গ্রহণ করেছে। ক্যানিবলিজমের বলি হয়েছেন রথিশ চন্দ্র ভৌমিক।

ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমে নিউজের চেয়ে ‘নিউজ বাহাইন্ড নিউজে’র দিকে চোখ থাকে একজন সংবাদকর্মীর। সরল চোখে যা দেখা যায়, তা সবসময় সত্য নাও হতে পারে, এমনটা ভেবেই ‘অন স্ক্রিনে’র চেয়ে ‘অফ স্ক্রিনে’র দিকে নজর বেশি রাখেন ইনভেস্টিগেটররা। আইনশৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। রথিশ ও বিউটি হত্যা মামলায় এমন কাজটিই করেছেন বাহিনী সংশ্লিষ্টরা এবং তারা সফল হয়েছেন। তবে এমন সফলতার পথ বড় বন্ধুর, বিপদ-সংকুল। ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির’ এই সফলতার পথে এটাই সবচেয়ে বড় মন্ত্র। কিন্তু ভয়শূন্য চিত্ত আর উচ্চে জাগা শির এ দুটোরই বড় অভাব এই জমানায়।

ফুটনোট : সব ব্যাপারেই কচ্ছপ ও খরগোশের দৌড় বিষয়ক গল্পটার মোর‌্যাল মনে রাখা উচিত। প্রতিক্রিয়া একটু ধীরেই হোক কিন্তু সঠিক হোক।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়