শিরোনাম
◈ সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে: মির্জা ফখরুল ◈ বাংলাদেশের রাজনীতির অবনতি দুঃখজনক: পিটার হাস ◈ সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়লো ১০ টাকা  ◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১৫ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির

প্রকাশিত : ০৯ এপ্রিল, ২০১৮, ১০:৩২ দুপুর
আপডেট : ০৯ এপ্রিল, ২০১৮, ১০:৩২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বেপরোয়া গণপরিবহন,দেখার কেউ নেই!

আবু হোসাইন শুভ:  গণপরিবহন হয়ে উঠেছে  বেপরোয়া,কিছুতেই শৃঙ্খলায় আনা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠছে পরিবহন ব্যবস্থাপনা। জিম্মি হয়ে পড়ছে সাধারণ যাত্রীরা।

 

অন্য বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেপরোয়া গতির কারণে প্রতিদিনই অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটছে রাজধানীসহ সারা দেশে।গ্লাস ভেঙে, ধাক্কা খেয়ে বা চাপা পড়ে আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। এ সময় যাত্রীরা ভয়ে ও ব্যথায় চিৎকার করলেও চালকের মুখে হাসিই দেখা যায়। আর আইন লঙ্ঘনের এসব ঘটনা দেখার দায়িত্ব যাদের, সেই বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিসহ (বিআরটিএ) সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বরাবরই নির্বিকার।

সড়ক আইনে সিটিং সার্ভিস নামে কোনো পরিবহন না থাকলেও রাজধানীর বেশিরভাগ পরিবহনই অবৈধভাবে সিটিং সার্ভিসে রূপ নিয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া ভাড়ার বিপরীতে দ্বিগুণ-তিন গুণ ভাড়া আদায় করছে তারা। আবার সব পরিবহনেই সিট অনুযায়ী যাত্রী ওঠানোর কথা থাকলেও ওই পরিবহনগুলো অতিরিক্ত যাত্রী তুলছে।

এ ছাড়া বাড়ছে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যাও। আবার পরিবহনে উঠতে গিয়ে যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে নারী যাত্রীরা গণপরিবহন কর্মীদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ভাড়া আদায় নিয়ে প্রতিদিনই হেলপার, চালক ও যাত্রীদের মধ্যে বাকবিতন্ডা লেগেই থাকছে।

এই নিয়ে উদ্বিগ্ন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ সামছুল হক বলেন, বর্তমানে দেশের পুরো পরিবহন ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল। কোনো ঘটনার জন্য চালকদের দোষারোপ করলে হবে না। কারণ এটা আমাদের সিস্টেমের ফসল। সরকার যদি পরিবহন ব্যবস্থায় ৩০০ রুট পারমিট না দিত, তাহলে এ রকম অনাকাক্সিক্ষক দুর্ঘটনা ঘটত না। চালকদের মধ্যে কার আগে কে যাবে এ রকম অসুস্থ প্রতিযোগিতাও থাকত না।

খোঁজ নিয়ে ও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই মুহূর্তে দেশের গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায় মোটা দাগে পাঁচ ধরনের বিশৃঙ্খলা দৃশ্যমান। এগুলো হলো সিটিং সার্ভিস, বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, যাত্রী হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়।

জানা গেছে, যাত্রী ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য ও সীমাহীন যাত্রী হয়রানির প্রেক্ষিতে গত বছরে এপ্রিলে রাজধানীর সিটিং সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ জন্য দফায় দফায় সভা, তদন্ত কমিটি গঠনসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সর্বশেষ গত বছরের ২৫ অক্টোবর সচিবালয়ে এক সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, সিটিং সার্ভিসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে এক সপ্তাহের মধ্যে। কিন্তু মন্ত্রীর এমন ঘোষণা গত প্রায় এক বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো যাত্রীবাহী বাস মালিকরা আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অধিকাংশ পরিবহনই সিটিং সার্ভিসে রূপ নিয়েছে। ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছে দুই-তিন গুণ বেশি। হাতেগোনা কিছু ফিটনেসবিহীন পরিবহনই লোকাল সার্ভিস হিসেবে চলছে। যাত্রীসেবার মান বাড়েনি। যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, সিটিং সার্ভিসের নামে রাজধানীতে ৮৭ শতাংশ পরিবহন যাত্রীদের থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা চেয়েছিলাম সিটিং সার্ভিস না চলুক। কিন্তু পরিস্থিতি উল্টো হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো পরিবহন কোম্পানি যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কথা নয়। কেউ যদি বাড়তি ভাড়া আদায় করে, তাহলে কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের সমিতির পক্ষ থেকে সতর্ক করা হবে। তা ছাড়া এ বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রুট পারমিটে সিটিং সার্ভিস বলতে কিছু নেই। সিটিং সার্ভিস হিসেবে বিআরটিএ কোনো বাস অনুমোদন দেয় না। তবুও অনেকে সিটিং হিসেবে গাড়ি চালাচ্ছেন।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। জানা গেছে, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে রাজধানীতে বাসের ভাড়া প্রতি কিলেমিটারে ১০ পয়সা বাড়িয়ে ১ টাকা ৭০ পয়সা করা হয়। মিনিবাসের ভাড়াও ১০ পয়সা বেড়ে ১ টাকা ৬০ পয়সা হয়েছে। সে হিসেবে ১০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করলে বাসগুলোতে মাত্র ১ টাকা বেশি ভাড়া নেওয়ার কথা। কিন্তু এই পরিমাণ দূরত্বে ঢাকার বিভিন্ন রুটের পরিবহনগুলোকে নতুন ভাড়া কার্যকরের অজুহাতে ২ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া ‘লোকাল’ বাসগুলো আগে যেখানে পাঁচ টাকা ভাড়া নিত এখন সেখানে ছয় টাকা নিচ্ছে। আবার আগের ৭-৮ টাকার স্থলে ভাড়া নিচ্ছে ১০ টাকা হারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস চালানোর কোনো বৈধতা নেই। কারণ গাড়ির আসন বিবেচনা করে বিআরটিএ থেকে ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। এই হিসেবে কোনো পরিবহনেই দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলার কথা নয়। কিন্তু একদিকে বাস কোম্পানিগুলো দাঁড় করিয়ে যাত্রী নিচ্ছে, অন্যদিকে সিটিংয়ের নামে বাড়তি ভাড়াও নিচ্ছে। এখন প্রকাশ্যে স্টিকার লাগিয়ে সিটিং সার্ভিস চলছে। এসব বাস কোম্পানিকে সহজেই চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব বলে মত দেন তিনি। পাশাপাশি সিটিং সার্ভিসের বৈধতা দিলে যাত্রীদের ভাড়ার বিষয়টি বিবেচনা করারও দাবি জানান এই নেতা।

এদিকে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে, নির্মম বলি হচ্ছে একের পর এক প্রাণ। ইদানীং খোদ রাজধানীতেও সড়ক দুর্ঘটনার হার আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বেপরোয়া চালকের নির্মমতা থেকে সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মেধাবী শিক্ষার্থী, নাট্যকর্মী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক কেউ রেহাই পাচ্ছেন না। অনেকে বেঁচে গেলেও পঙ্গুত্ব বরণ করছেন আজীবনের জন্য। গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ঢাকা কলেজের সামনে রাস্তায় বিকাশ পরিবহনের দুটি বাসের ‘অসুস্থ’ প্রতিযোগিতায় মেরুদন্ডের হাড় ভেঙেছে আয়েশার। এর ঠিক দুই দিন আগে গত মঙ্গলবার রাজধানীর পান্থকুঞ্জ এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন রাজিব হোসেন। তিনি রাজধানীর মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতকের (বাণিজ্য) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় দুই বাসের প্রবল চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) ১৪ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, রাজধানী ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণ হারান পথচারীরা। এসব দুর্ঘটনার ৯১ শতাংশই ঘটে অতিরিক্ত গতিতে বেপরোয়া যানবাহন চালানোর কারণে।

বাড়ছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি। বিআরটিএ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৩৪ লাখ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। অন্যদিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে সাড়ে ২৪ লাখ। প্রায় ১০ লাখ যানবাহন চালকের কোনো বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি জানায়, বেসরকারি সংস্থা ‘বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি’র তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৩৯৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ১৬ হাজার ১৯৩ জন।

বেপরোয়া এসব পরিবহনে উঠতে গিয়ে প্রতিদিনই হয়রানির শিকার হচ্ছে যাত্রীরা। আবার বাসের ভেতরে ভাড়া নিয়ে হয় বাকবিতন্ডা। কখনো আবার দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এ ছাড়া বিশেষ করে গনপরিবহনে হয়রানির স্বীকার হচ্ছে নারী যাত্রীরা। সকালে কর্মস্থলে যাওয়া এবং বিকেলে ফেরার পথে ভিড় থাকলে বেশি ঘটে এসব ঘটনা। পাশের পুরুষ যাত্রী থেকে শুরু করে বাসের হেলপার-কন্ডাক্টর কারো হাত থেকেই নিরাপদ নন নারী যাত্রীরা। সম্প্রতি ‘ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ’ সংস্থার গবেষণায় দেখা যায়, পাবলিক বাসে চলাচলকারী ৪১ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়। দুর্ভোগ, যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের আশঙ্কায় পাবলিক বাস এড়িয়ে চলে ১৩ শতাংশ নারী। এসব যৌন হয়রানির বেশিরভাগই ঘটে বাসকর্মীদের দ্বারা।

এ সংকট থেকে উত্তরণে অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, পরিবহনে বিশৃঙ্খলা এড়াতে হলে রুট পারমিট কমিয়ে ৫-৬টির মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি চালকদের বেতনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তাহলে আগে যাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা কমে আসবে। সড়কে কমবে প্রাণহানির সংখ্যাও।সূত্র:প্রতিদিনের সংবাদ

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়