শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ০৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১১:০৬ দুপুর
আপডেট : ০৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১১:০৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অবৈধ পথে সোনা আসা থামছে না

শিমুল : শুল্ক গোয়েন্দাদের ব্যাপক তৎপরতার মধ্যেও থামছে না সোনার চোরাচালান। গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে স্বর্ণ আসছে চোরাচালানের মাধ্যমে। এক শ্রেণির চোরাকারবারি অবৈধভাবে সোনা এনে বাজারে বিক্রি করছে। এতে বৈধ পথে সোনার আমদানি কমে গেছে। সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক, ট্যারিফ কমিশন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানিতে বাধা নেই। স্বাধীনতার পর থেকে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানির কোনো নজির নেই। অথচ দেশ জুড়ে ২০ হাজারের বেশি স্বর্ণের দোকান পরিপূর্ণ অলংকারে। প্রশ্ন থাকে এত স্বর্ণ আসে কোথা থেকে?

জানা গেছে, সোনা আমদানি বৈধ হলেও অবৈধ পথেই আমদানি হচ্ছে। নিয়মিতই বিমানবন্দরে অবৈধ সোনা ধরা পড়ছে। মামলা হচ্ছে। আটক সোনা চলে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্টে। কিন্তু এতেও সোনার চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না। গত বৃহস্পতিবার রাতেও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে বিদেশ ফেরত মর্তুজা আলী আনসারী (৬৩) নামের এক যাত্রীর অন্তর্বাস থেকে পাঁচ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়ম মেনে যেকোনো দেশ থেকে যে কেউ, যেকোনো পরিমাণে স্বর্ণ আমদানি করতে পারেন। কারণ আমদানি নীতিমালার ২৬-এর ২২ ধারায় সোনা, রূপা আমদানিকে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৪৭’-এর শর্ত পূরণ করেও বিদেশ থেকে সোনা ও রূপা আমদানি করা যায়। এ ব্যবসার ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) নিবন্ধন নম্বর থাকলেই বৈধভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে মোট মূল্যের চার শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করে দেশে স্বর্ণ আমদানি করার বিধান রয়েছে। অমসৃণ হীরাও রফতানির উদ্দেশে আমদানির সুযোগ রয়েছে ব্যবসায়ীদের। এর বাইরে ব্যাগেজ রুলের আওতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ আনার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জুয়েলারি ব্যবসায়ী বলেন, অবৈধ পথে সোনা আমদানিতে খরচ, সময় এবং ঝুঁকি কম। কিন্তু বৈধ পথে সোনা আমদানি করতে গেলে নানা ধরনের জটিলতায় পড়তে হয়। যেমন- সোনা ব্যবসায় বিনিয়োগের উৎস জানাতে হয়। তা কোথায়, কিভাবে বিক্রি করা হবে, তার নিশ্চয়তা দিতে হয়। এছাড়া আমদানি করতে হলে টাকা বিনিয়োগ করে ১৫ থেকে ২০ দিন অপেক্ষা করতে হয়। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম ওঠানামা করলে মুনাফা নিয়ে ঝুঁকি থাকে। এসব কারণে ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যিক উদ্দেশে বৈধ প্রক্রিয়ায় স্বর্ণ আমদানিতে উৎসাহ দেখান না বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, স্বর্ণ আমদানি করতে চাইলে প্রথমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি নিতে হয়। তারপর আমদানি-রফতানি নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের ইমপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (আইআরসি) সংগ্রহ করতে হয়। এরপর যেতে হয় কোনো ব্যাংকে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলার জন্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি ছাড়া কোনো ব্যাংকই এলসি খোলে না। কারণ, এলসি খোলার সময় যখন ব্যাংকে হিসাব (অ্যাকাউন্ট) খুলতে হয় তখনই উল্লেখ করতে হয় আমদানি করা স্বর্ণ আসবে কিভাবে বা কোনো পথে। এক্ষেত্রে আবার ইন্স্যুরেন্স করতে হয়। স্বর্ণ কোন বাহনে বা পরিবহনে আনা হবে, তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিতে হয়। এর নিরাপত্তা কে বা কিভাবে দেবে, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনতে কারা নিরাপত্তা দেবে ইত্যাদি। সরকারি ওইসব সেবা পাওয়ার পথগুলো জটিলতাপূর্ণ হওয়ায় বৈধ পথে ব্যবসায়ীরা সোনা আমদানি করতে আগ্রহী হন না বলে জানান তিনি।

এদিকে, চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘জুয়েলারি আবহমান বাংলার একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। বাংলাদেশে জুয়েলারি শিল্পের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ থাকলেও প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তার অভাবে এ পর্যন্ত এই শিল্পের তেমন বিকাশ হয়নি। তাই জুয়েলারি শিল্পকে ব্যবসা বান্ধব করার লক্ষ্যে স্বর্ণ আমদানির জন্য সময়োচিত ও বাস্তবসম্মত একটি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য এই সেক্টরের ব্যবসায়ী সমিতি বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। এ সকল প্রস্তাব পর্যালোচনা করে আমরা স্থির করেছি সংশ্লিষ্ট সকল দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে স্বর্ণ আমদানি এবং জুয়েলারি শিল্পের জন্য একটি যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে, যাতে এদেশে জুয়েলারি শিল্প বিকাশ লাভ করতে পারে ।’

জানা যায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কাজ করছে সোনা আমদানি কিভাবে আরো সহজ করা যায়। এ নিয়ে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ‘বাংলাদেশ থেকে জুয়েলারি রফতানির সমস্যা ও সম্ভাবনা-সংক্রান্ত’ এক প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘জুয়েলারি শিল্পের বিকাশে নীতিগত সহায়তা প্রদানে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হলেও প্রধান কাঁচামাল সোনা আমদানির বিষয়ে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানসমূহ একমত না হওয়ায় এ শিল্পের রফতানি উন্নয়ন কার্যক্রম ফলপ্রসূ হয়নি।’ একই প্রতিবেদনে ইপিবি বলছে, রফতানি নীতি ২০১৫-২০১৮ অনুযায়ী, বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স প্রাপ্তি সাপেক্ষে ১০০ শতাংশ রফতানিমুখী অলংকার উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুমোদিত উপকরণ আমদানির সুযোগ রয়েছে। ওই সভায় আরো বলা হয়েছে, সোনা আমদানির সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা যদি মনে করেন, নীতিমালা সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে, তাহলে তাদেরকে যৌক্তিক মতামত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। সোনা আমদানি নীতিমালা সহজ করার জন্য সরকারের উদ্যোগ চলমান রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, তিন কারণে অবৈধ পথে দেশে সোনা আমদানি হচ্ছে। সোনা আমদানি করতে হলে যে পরিমাণ কর পরিশোধ করতে হয়, সেটি ফাঁকি দিতে কেউ কেউ অবৈধ পথে সোনা আমদানি করছেন। আবার অপরাধ সংগঠিত করার জন্যও অবৈধ পথে চোরাচালান হচ্ছে। কারণ অপরাধ সংগঠনের জন্য যে টাকার প্রয়োজন হয়, সেই টাকা বৈধভাবে দেওয়ার সুযোগ নেই। সে কারণে অবৈধ পথে সোনা পাচার করে প্রাপ্ত অর্থ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংগঠনে ব্যবহার করা হয়। সোনার অনেক ব্যবসায়ীরা কালো টাকা ব্যবহারের জন্য অবৈধ পথে সোনা আমদানি করেন। প্রতিদিনের সংবাদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়