শিরোনাম
◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ২৭ বস্তা টাকা, গণনা চলছে ◈ তীব্র তাপপ্রবাহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও ৭ দিন বন্ধের দাবি ◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক

প্রকাশিত : ০৬ এপ্রিল, ২০১৮, ০৮:২৯ সকাল
আপডেট : ০৬ এপ্রিল, ২০১৮, ০৮:২৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

১০ লাখ লোকের জন্য দুটি পাবলিক টয়লেট

প্রতিনিধি : সিলেট নগরীর চৌহাট্টায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত কনস্টেবল মোকলেছ মিয়া। প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য তাকে সেখানে থাকতে হয়। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে শৌচকাজ সারতে তাকে যেতে হয় পাশের কোনো বিপণিবিতান অথবা কোনো মার্কেটের টয়লেটে। অথচ নগরীর প্রতি পয়েন্টেই দিনে ও বিকালে দুই শিফটে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হয় তাকে। পাশের কোনো বিপণিবিতান বা মার্কেটে গিয়ে শৌচকাজ সারতে অনেক সমস্যা হলেও করার কিছুই নেই। তবে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি তিনি। হবিগঞ্জ শায়েস্তাগঞ্জ থেকে সিলেট ঘুরতে এসেছেন মোহাম্মদ রনি। দিনে এসে রাতেই ফিরে যাবেন এমন পরিকল্পনা নিয়েই এসেছেন। আলাপকালে রনি বলেন, দুপুরে বাস থেকে নামার পর ক্বীন ব্রিজ এলাকায় গিয়ে শৌচাগার নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছি। পরে পাশের একটি বিপণিবিতানে গিয়ে টয়লেট ব্যবহার করতে হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন নগরের মতো সিলেটেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। রাস্তাঘাট হয়েছে, অট্টালিকা বেড়েছে, লোকসংখ্যা বেড়েছে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখের অধিক। এই নগরীতে রয়েছে হজরত শাহজালাল ও শাহপরানের মাজার। সেই সঙ্গে চা বাগান আর পাহাড় টিলায় ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে সিলেটে অনেকেই বেড়াতে আসেন। যেকোনো নগরের জন্য গণশৌচাগার অতীব প্রয়োজনীয় একটি ব্যাপার। কিন্তু সিলেটে গত ১৫ বছর ধরে চলছে মাত্র দুইটি শৌচাগার দিয়ে। এ কারণে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে সাধারণ নাগরিকসহ ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের। বিশেষত বেশি দুর্ভোগে পড়ছেন নারী ও বয়স্করা। যার কারণে বাধ্য হয়ে ফুটপাতেই সারছেন পাবলিক টয়লেটের কাজ। এতে করে যেমন নগরীর সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে পাশাপাশি বাড়ছে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি।

গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় দেখা গেছে, নগরীর ক্বীন ব্রিজ সংলগ্ন পাশের রাস্তায় প্রকাশ্যে বসে একজন শৌচকাজ করছেন। এই রাস্তা দিয়ে প্রস্রাবের দুর্গন্ধে হেঁটে যাওয়া দুষ্কর। তবে এর কিছুটা দূরে গণশৌচাগার রয়েছে। তবে সেটির অবস্থা বেহাল। এভাবে প্রতিনিয়তই শত শত মানুষ এই রাস্তায় প্রস্রাব করে থাকেন। অথচ রাস্তার পাশেই ভিআইপিদের জন্য নির্মিত সিলেট সার্কিট হাউস। ছেলেরা তবুও যেকোনো জায়গায় শৌচকাজ সারেন কিন্তু নারীদের পক্ষে তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এমনকি জেলার বাইরে থেকে বেড়াতে এসে পর্যটকরাও পড়েন বিপাকে।

সিলেট নগরীর প্রবেশদ্বার বলা হয় হুমায়ুন রশীদ চত্বর ও রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন বাস টার্মিনালকে। পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রিত একটি শৌচাগার থাকলেও সেটির অপরিষ্কার ও দুর্গন্ধের কারণে ব্যবহার করা কষ্টকর।

পৌরসভা থাকাকালীন সিলেটে কাগজে-কলমে ছিল একটি পাবলিক টয়লেট। আর ২০০২ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পরও পাবলিক টয়লেট নির্মাণে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। এরপর ২০১৪ সালে নগরীর সুরমা নদীর তীরে দ্বিতীয় গণশৌচাগার নির্মিত হয়। আর প্রথম গণশৌচাগারটি অবস্থান করছে কাজীরবাজার এলাকায়।

তবে নগরীতে বেশি মানুষের আনাগোনা আম্বরখানা, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, রিকাবীবাজার, লামাবাজারসহ আরো বেশ কয়েকটি জায়গায়। বেশি বিপণিবিতান, সরকারি কার্যালয়, স্কুল-কলেজ ও কোচিং সেন্টারের সংখ্যা এসব এলাকায় বেশি থাকার কারণে সেখানে মানুষের পদচারণা বেশি। তবে এসব এলাকায় নেই গণশৌচাগার।

কালীঘাট ক্বীন ব্রিজ এলাকার গণশৌচাগারটির বেহাল অবস্থা। এটার ইজারাদার মতিন মিয়া। তার নিযুক্ত কর্মী ইসরাত আলী বলেন, প্রতিনিয়তই মানুষ এটি ব্যবহার করছে। তবে নারীদের জন্য এখানে কোনো আলাদা ব্যবস্থা নেই।

সিলেট নগরীর আয়তন ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার। রয়েছে ২৭টি ওয়ার্ড। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সিলেটের জনসংখ্যার পরিমাণ ৫ লাখ ৩১ হাজার ৬৬৩ জন। তবে সিটির কর্মকর্তাসহ অন্যদের মতে, বর্তমানে এ নগরে বাস করে ১০ থেকে ১৫ লাখের অধিক মানুষ। সুশীল সমাজ বলছেন, নগরীতে শৌচাগার আরো বাড়ানো দরকার। এমনকি কম হলেও ২৭টি ওয়ার্ডে ২৭টি গণশৌচাগার নির্মাণ করা উচিত।

তবে সম্প্রতি নগরীতে বেশ কয়েকটি গণশৌচাগার নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। তার মধ্যে একটি গণশৌচাগার নির্মাণের কাজ চালু হলেও মাদরাসার জায়গায় সেটি স্থাপন করা হচ্ছে বলে তা নিয়ে মাদরাসা মহলে চলছে ক্ষোভ। এমনিক সম্প্রতি তারা এ নিয়ে নগরীর চৌহাট্টায় বিক্ষোভ করে ও নির্মাণাধীন গণশৌচাগারের ওয়ালও ভেঙে ফেলে। এতে করে নতুন গণশৌচাগার তৈরির কাজও থেমে আছে।

সিলেট কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এহসানুল হক তাহের বলেন, গণশৌচাগার নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম চললেও তাদের এ ব্যাপারে কোনো পরিকল্পনা বা দূরদর্শিতা নেই। গণশৌচাগারের জন্য আমরা কল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে ২০০৬ সালে আন্দোলন করেছিলাম। আমরা কমপক্ষে ২৭টি ওয়ার্ডে ২৭টি গণশৌচাগার নির্মাণের দাবি জানিয়েছি। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, চৌহাট্টার নির্মাণাধীন পাবলিক টয়লেটের বিষয়ে মেয়র ভালো বলতে পারবেন। তবে সিলেটে আরো কিছু পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়