শিরোনাম
◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলার নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি ◈ টাইমের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা (ভিডিও) ◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের ফসফরাস বোমা হামলা

প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল, ২০১৮, ১১:৪৬ দুপুর
আপডেট : ০২ এপ্রিল, ২০১৮, ১১:৪৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গ্রামে বসেই অনন্য উদ্ভাবন স্কুলছাত্র আল আমিনের

প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের কালিহাতী আর এস পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে মো. আল আমিন। স্কুলে তার বয়সী অন্য ছেলেমেয়েদের বেশির ভাগই মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহার করে ফেসবুক, মেসেঞ্জার কিংবা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সময় কাটানোর জন্য। তারা স্মার্টফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপচয় করে ফেসবুক বন্ধুদের পোস্ট করা ছবি দেখে, কমেন্ট করে কিংবা লাইক দিয়ে।

কিন্তু আল আমিনের কাছে প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট সংযোগ জ্ঞান অর্জন, মেধার সদ্ব্যবহার এবং নিজের সুন্দর ভবিষ্যত্ গড়ার মাধ্যম। অন্যের উদ্ভাবিত জিনিস ব্যবহার করে বাহাদুরি নয়, তার আগ্রহ নিজে কিছু উদ্ভাবন করার। তাই পড়াশোনার পর বেশির ভাগ অবসর সময় সে কাটায় নতুন কিছু তৈরির চিন্তা করে। গ্রামে বসেই সে নিজের কম্পিউটারকে ব্যবহার করেছে মেধা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে। স্কুলে পড়ার ফাঁকে ফাঁকেই ইতোমধ্যে সে ‘মাই স্কুল’ নামের একটি অতি প্রয়োজনীয় অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করেছে। এর বাইরেও আরো অ্যাপ আছে তার ডেভেলপ করা। ওয়েব ডেভেলপমেন্টের অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছে সে। আর ইউটিউবে ভিডিও আপলোড এবং ব্লগ লেখালেখির মাধ্যমে থেকে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনও করছে।

কালিহাতী সদরের কালিহাতী গ্রামের নায়েব আলীর ছেলে এই তরুণ । জানা যায়, ছোট বেলা থেকে প্রযুক্তির প্রতি অধির আগ্রহ ছিল তার। মোবাইলের বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করতে করতেই তার মাথায় আসে স্কুলের বিভিন্ন জটিল কাজগুলোকে সহজ করার জন্য একটি অ্যাপস তৈরির চিন্তা। এরপর থেকে নিজেই শুরু করে এই অ্যাপের নকশা তৈরির কাজ। তারপর শুরু হয় কোডিং। এভাবে পূর্ণতা পেয়ে যায় তার তরুণ মস্তিষ্কের চিন্তার ফসল “মাইস্কুল”। আল আমিন জানায়, এই অ্যাপ দিয়ে স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকদের ‘এক ছাতার’ নিচে নিয়ে আসা যাবে। এক পক্ষের সঙ্গে অন্য পক্ষের যোগাযোগ সহজ হয়ে যাবে। যদি কোনো কারণে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে না আসে তবে শিক্ষক অ্যাপে ঢুকলেই পেয়ে যাবেন তার স্কুলে না আসার কারণ। ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবক কিংবা সে নিজে অ্যাপের মাধ্যমে তার অবস্থা কিংবা অবস্থান হালনাগাদ করবে। সন্তান স্কুলে যাবার নাম করে অন্য কোথাও গেল কিনা তাও তারা জানতে পারবেন ক্লাস শুরুর ঘণ্টা বাজার পর অ্যাপে ঢুকলেই। শিক্ষক হাজিরা খাতায় নাম তোলার পর সেই তথ্য অ্যাপেও হালনাগাদ হয়ে যাবে। ফলে স্কুলে উপস্থিতি বাড়বে এবং শিক্ষার্থীদের ফাঁকি দেয়ার সুযোগ কমে যাবে। সন্তানের বিরুদ্ধে শিক্ষদের কোনো অভিযোগ আছে কি না তা জানার জন্য স্কুলেও যেতে হবে না। এই সফটওয়্যারে ঢুঁ মারলেই হলো। এভাবে তারা থাকবে শিক্ষক এবং অভিভাবকের নজরে। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সকল প্রকার যোগাযোগ, তথ্য দেওয়া নেওয়াসহ সব দাপ্তরিক কার্যকলাপও পরিচালনা করা যাবে এই অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড চালিত যেকোনো ডিভাইসে সমর্থন করে।

এ ব্যাপারে আল আমিন বলে, ছোট বেলা থেকেই আমার কম্পিউটারের প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। পাশের বাড়ির এক বড়ভাই কম্পিউটারের বিভিন্ন কাজ করতো। সেটা দেখে আমারও কাজ করার আগ্রহ বেড়ে যায়। বাবাকে একটি ল্যাপটপ এনে দেয়ার জন্য বলি। কিছুদিন পরেই সেটি হাতে পেয়ে যাই। ইন্টারনেট সংযোগ নেয়ার পর নিজে থেকেই ইউটিউব ও গুগলে সার্চ দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষামূলক ভিডিও ও আর্টিকেল দেখতাম। সেখান থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। ওয়েব ডেভেলপমেন্টও শিখতে থাকি। একপর্যায়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই অ্যাপ তৈরির জ্ঞান অর্জন করি।

এই তরুণ জানায়, তার অ্যাপটি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলেছে। বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস নতুন উদ্ভাবন হিসেবে এটির স্বীকৃতি দিয়ে সার্টিফিকেটও ইস্যু করেছে। ২০১৭ সালে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় বিজ্ঞান প্রজেক্টে সারাদেশে প্রথম হয় এটি। রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী তাকে স্বর্ণপদক ও সনদ প্রদান করেন। এতে তার আগ্রহ বহুগুণে বেড়ে যায়। সম্প্রতি গুগলে ডিজিটাল আনলক প্রোগ্রামে পরীক্ষা দিয়ে সার্টিফিকেট অর্জন করেছে বলে সে জানায়।

আল আমিন জানায়, ইতোমধ্যে ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্স নামের আরো একটি অ্যাপ তৈরি করেছে সে, যার কার্যক্রম উপজেলার বেশকিছু স্কুলে চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও বর্তমানে একটি রোবট তৈরির কাজে হাত দিয়েছে। তার ইচ্ছা এই রোবট মানুষের সঙ্গে কথা বলবে, ট্রাফিক পুলিশের কাজ করবে এমনকি ক্লাস রুমে শিক্ষকের ভূমিকাও পালন করবে। এ ছাড়াও স্মার্টসিটি নামের একটি প্রজেক্ট তৈরি করছে।

এ ব্যাপারে আল আমিনের বাবা নায়েব আলী বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তরুণরা তথ্য-প্রযুক্তির মান উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটবে। এতে দেশ ও জাতি আরো একধাপ এগিয়ে যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়