ইমতিয়াজ মেহেদী হাসান : বেলাবোস-রঞ্জনা গানের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী অঞ্জন দত্ত ঢাকায় এসেছিলেন। তবে গান গাইতে নয়, নিজের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘অঞ্জনযাত্রা’র মোড়ক উন্মোচন করতে। আর সে অনুষ্ঠানে বাংলা গানের এই জীবন্ত কিংবদন্তি, অভিনেতা ও পরিচালক জানালেন নিজের নানান কথা, যা অনেকেরই অজানা।
অঞ্জন দত্ত বলেন, প্রকাশিত এই বইয়ের লেখক তার সততা দেখিয়ে আমাকে মুগ্ধ করেছেন। এ কারণে আমি সব সত্য কথা তাঁকে অকপটে বলেছি। এটি পড়ার পর হয়তো আমার সম্পর্কে মানুষের ভাবনাতে পরিবর্তন আসবে। এর আগে অনেকে আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। কিন্তু এই বইয়ের জন্য আমি যে সাক্ষাৎকার দিয়েছি, তা আর কোথাও দিইনি। বইয়ের লেখক সাজ্জাদ যে প্রশ্ন করেছে, তা কেউ করেনি।
৬৪ বছর বয়সী এই প্রতিভাধর শিল্পীর বড় হওয়া দার্জিলিংয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতি তার আলাদা একটা আগ্রহ-ভালো লাগা ছিল সবসময়। তাই নিজের প্রথমবার ঢাকায় আসার ঘটনাও শোনালেন তিনি।
অঞ্জন বলেন, প্রথম যখন ঢাকায় আসি তখন জাতীয় জাদুঘরের এক অনুষ্ঠানে দেখা হয় শিল্পী লাকী আখান্দের সঙ্গে। সে অনুষ্ঠানের ফাঁকে আমাদের পরিচয়। এরপর গান করতে করতেই বন্ধুত্ব। সব সময় যোগাযোগ হতো। তিনি কলকাতায় গেলে আমাদের দেখা হতো, কথা হতো। হতো গান নিয়ে আড্ডাও। অসুস্থ হওয়ার সময় তার মোবাইল বন্ধ ছিল। এ কারণে তাঁর মেয়ের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেছি। অসাধারণ একজন শিল্পী ছিলেন তিনি। তবে তাঁকে বাংলা সিনেমা ব্যবহার করতে পারেনি। আমি তাঁর সঙ্গে ১৯৯৯ সালে ‘হ্যালো বাংলাদেশ’ নামে একটি অ্যালবাম বের করি।
বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে ‘বেলাবোস’ গানের এই শিল্পী বলেন, আমি এই যে শার্টটি পরেছি, তা কিন্তু শতভাগ বাংলাদেশি। আর আমার ভক্তদের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ মানুষ বাংলাদেশের। প্যারিসে গিয়েছি, আমেরিকায় গিয়েছি বা যেখানেই গিয়েছি, বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।
এত মানুষের এত ভালোবাসা-জনপ্রিয়তার পরেও যেন মৃদু মন খারাপ অঞ্জনের। তিনি বলেন, গান গেয়ে আমার নামডাক হয়েছে। মানুষের সবচেয়ে বেশি কাছে এসেছি, ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু সত্যি কথা হলো, জীবনে যা হতে চেয়েছি, তা হতে পারিনি। ভালো অভিনেতা হতে চেয়েছিলাম, তা আর হলো কই!
সেলিব্রেটিদের অনেকেই রাজনীতিতে জড়িয়েছেন, এমনকি জড়াচ্ছেনও। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই রঞ্জনার অঞ্জনের। তিনি বলেন, নকশালবাড়ির আন্দোলনে অনেকের মত জড়িয়ে পড়েছিলাম। তবে আদর্শিক জায়গা থেকে নয়। বন্ধুত্বের টানে বন্ধুর জন্য এবং বন্ধুর বিপদে পাশে দাঁড়ানো প্রধান কর্তব্য ভেবে। সরাসরি রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ইচ্ছে নেই। তবে বিভিন্ন বিষয়ে শিল্পী হিসেবে নিজ জায়গা থেকে কথাটা বলবো। এটাই যুতসই।