শিরোনাম
◈ তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি 

প্রকাশিত : ৩১ মার্চ, ২০১৮, ১২:৫৪ দুপুর
আপডেট : ৩১ মার্চ, ২০১৮, ১২:৫৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আইন দুর্বলের যম, প্রভাবশালীর হাতিয়ার

সাইদুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য : আমরা নিশ্চয় ভুলে গেছি কৃষক আজিজার রহমানের কথা। ভুলে যাওয়ারই কথা। কারণ আমাদের স্মৃতিবিভ্রম বেশি। কিছুদিন যাওয়ার পর আমরা অনেক কিছুই ভুলে যাই। হ্যাঁ আমি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার পালশা গ্রামের বর্গাচাষী আজিজার রহমানের কথা বলছি। যিনি ১০ হাজার টাকা ব্যাংক ঋন পরিশোধ করতে না করতে পারার অপরাধে ২০১১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতের নির্দেশে গ্রেফতার হয়েছিলেন। আইনের চোখে তিনি ঋন খেলাপি ছিলেন ও আইন সেদিন তাঁর হাতে হাত কড়া পরিয়েছিল। এবং হাতকড়া পরাতে পেরেছিল এজন্য যে তিনি ছিলেন ক্ষমতাহীন সাধারণ একজন কৃষক মাত্র। তার কোন রাজনৈতিক প্রভাব ছিল না। ছিল না কোন পেশিশক্তি বাহিনীও। তাই আইনও ছিল সরল রেখার মত সোজা।

 

কিন্তু আমার দেশে গত ১০ বছরে ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ৩০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়ে গেছে, ৬৫ হাজার কোটি টাকা ঋনখেলাপিরা লাপাত্তা করে দিয়েছে, ৬ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে এবং শুধু ২০১৪ সালে ৭০ হাজার কোটি টাকা। যা বাংলাদেশের প্রায় ২ বছরের বাজেটের সমান। ব্যাংক ঋণ নিয়ে গাড়ি চোর থেকে শিল্পপতি হয়েছে। দরবেশ বাবাদের খপ্পরে পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে শেয়ার বাজার। এমনকি রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ পর্যন্ত চুরি করে নিয়ে গেছে। একটি পরিবারের হাতে চলে গেছে দেশের আট আটটি ব্যাংক। কোন ইনকাম না থাকা ছাত্র নেতারাও হয়েছে ব্যাংকের মালিক। এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংকের পরিচালকের সাথে যোগসাজশ করে পুকুর চুরি নয়, রীতিমতো ডাকাতি করছে।  জালিয়াতরা এমন অবস্থা করেছে যে, ব্যাংকিং সেক্টরে তারল্য সংকট সৃষ্টি করে ছেড়েছে। ঋণ খেলাপিরা ব্যাংকের পরিচালক পদে বহাল তবিয়তে থেকে আবারও ঋণ নিচ্ছে। অন্যদিকে আমানতকারীরা ব্যাংকে রাখা নিজেদের আমানত পর্যন্ত তুলতে পারছে না। ২০০৫ সালেও একই কায়দায় ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের মালিক পক্ষ ওরিয়ন গ্রুপ বেনামে ৫৯৬ কোটি টাকা তুলে নিয়ে গিয়েছিল। ফলশ্রুতিতে শেষ পর্যন্ত ব্যাংকটি বিক্রি করে দিতে হয়েছিল। ১৯৯৬-২০০১ সালে শেয়ার বাজারে সৃষ্ট কেলেঙ্কারির মামলা এখনো বিচারাধীন।

 

কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই সমস্ত চুরি, জালিয়াতির কোন সুরাহা হয়নি। বরং দিনকে দিন তা আরো বেড়ে চলেছে। কারণ আইন এদের কাউকে ছুঁতে পারে না। আইনের হাত এতটুকু লম্বা হয়নি। আইনের চোখে এরা কৃষক আজিজার রহমান নয়। এদের পেশিশক্তি আছে এবং এরা প্রভাবশালীও। কোন কোন সময় এরাই আইন তৈরি করে। আইনের প্রয়োগ এখানে দুর্বল। রাষ্ট্রের উপরতলা থেকে নিচতলা এদের নখদর্পণে। সহজ করে বললে আইন এই সমস্ত জালিয়াতদের সমীহ করে চলে। কারণ জীবন জীবিকার তাগিদে এরা চুরি করেনি। করেছে দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে বিত্ত বৈভব করার জন্য। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের ভাষায় এরা 'লুম্পেন কোটিপতি'। সুতরাং আইন তাদের সাথে যায় না। আজ বলতেই হবে, আইন সবার জন্য সমান নয়, আইন পক্ষপাতদুষ্ট। এবং আইন শুধুমাত্র কৃষক আজিজার রহমান সহ সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের জন্য।

 

বাংলাদেশে এ ধরনের অপরাধের শাস্তির কোন নজির নেই। কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য দেশে নজিরবিহীন শাস্তি দেওয়ার উদাহরণ রয়েছে। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাসদাকের সাবেক চেয়ারম্যান বার্নার্ড মেডফের শেয়ারবাজারে আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা ফাঁস হয়। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৯ সালের জুন মাসে বিচারে ৭১ বয়সী এ ব্যবসায়ীকে ১৫০ বছর জেল দেওয়ার পাশাপাশি ১৭০ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, ফ্রেন্ডস হেল্পিং সোসাইটি, ইউকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়