শিরোনাম
◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ৩১ মার্চ, ২০১৮, ০৮:২১ সকাল
আপডেট : ৩১ মার্চ, ২০১৮, ০৮:২১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

লেখকদের পিয়াস মেটান পঞ্চানন

ডেস্ক রিপোর্ট : ‘স্বাভাবিক মৃত্যু সব মানুষেরই কাম্য। তবে যদি ঈশ্বর আমার মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনায় দেন সেটা যেন বইয়ের স্তূপের নিচে ফেলেই দেন।’ কালের কণ্ঠকে বলছিলেন পঞ্চানন দত্ত। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের সামনে ফুটপাতে ছোট একটি টংঘরে দেড়-দুই হাজার দুষ্প্রাপ্য বই আগলে বসে থাকেন মানুষটি। করুণা বুক স্টলে থরে থরে বই সাজানোর ফাঁকে ফাঁকে তিনি গল্পচ্ছলে বলছিলেন দুর্লভ বই বিক্রির ৫০ বছরের হাজারো স্মৃতি থেকে ছেঁকে আনা চমকপ্রদ গল্প। পঞ্চানন গর্ব করেই বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের বিখ্যাত অনেক কবি-সাহিত্যিক, লেখক-বুদ্ধিজীবীর ভরসাস্থল তিনি। নামের ভিড়ে পশ্চিমঙ্গের নামকরা ব্যক্তিদের সঙ্গে উঠে আসে বাংলাদেশের মহাদেব সাহা, সেলিম আল দীন ও মোহাম্মদ খসরুর মতো বিদগ্ধজনরাও। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া জানা মানুষটি ৫০ বছর ধরে বইয়ের দুনিয়ায় মিশে আছেন। বাকি জীবনটা এভাবেই কাটাতে চান পঞ্চানন।

১৩ বছর বয়সে বড় বোনের স্বামীর হাত ধরে হাওড়া থেকে কলকাতায় এসে ফুটপাতে বইয়ের ব্যবসায় হাতেখড়ি। এখন বয়স প্রায় ৬৫ বছর। হাওড়ার সালকিয়ার কৃষ্ণমোহন মিত্র লেনে পৈতৃক বাড়ি। আদি বাড়ি মেদেনীপুর জেলায়।

পঞ্চানন বলেন, ‘বইয়ের ব্যবসায় এসেছিলাম বলেই আমার মতো একজন লেখাপড়া না জানা সামান্য মানুষের সৌভাগ্য হয়েছে ভারতখ্যাত বিখ্যাত অনেক মানুষের সান্নিধ্য লাভের। তাঁরা আসতেন পুরনো ও দুষ্প্রাপ্য বইয়ের খোঁজে। প্রখ্যাত গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথা কখনোই ভুলতে পারব না। তিনি প্রায়ই আসতেন অস্টিন গাড়িতে করে। হাতে থাকত পানের ডিবি। ২০ টাকার বইয়ের জন্য অনেক সময় ১০০ টাকা দিতেন। এমন পড়াশোনাপাগল মানুষ আমি আমার জীবনে খুব কমই দেখেছি।’ বাংলা গানের আরো দুই দিকপাল মান্না দে এবং পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর ক্রেতা ছিলেন বলে জানান পঞ্চানন। তিনি বলেন, “কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ও ছিলেন আমার নিয়মিত ক্রেতা। দেশ-বিদেশি অনুবাদ, পুরনো দুষ্প্রাপ্য কবিতা কিংবা মধ্যযুগের গীতি কবিতার বই খোঁজ করতেন। কাঁধে শান্তিনিকেতনী ব্যাগ ঝুলিয়ে আসতেন। অনেক সময় বলতাম, দাদা চা-কফি চলবে? বলতেন, ‘আমার সঙ্গে মশকরা করিস নাকি? আমি কী খাই সেটা তুই জানিস। এর পরও এ ধরনের কথা বলিস কেন বুঝি না।’”

পণ্ডিত সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ করে পঞ্চানন বলেন, ‘আমি তাঁকে অনেক বই সংগ্রহ করে দিয়েছি—যেগুলো তাঁর লেখা বইয়ের রেফারেন্সে উল্লেখ রয়েছে। বই পৌঁছে দিতে আমি অনেকবার তাঁর বাড়ি গেছি। তাঁর বাড়িটি ছিল বইয়ের জাদুঘর। একবার কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাত উচ্ছেদ হয়ে যায়। কয়েকজন পুরনো বইয়ের বিক্রেতা নিয়ে আমি তাঁর বাড়িতে গেলে তিনি বইয়ের দোকান উচ্ছেদ না করার জন্য নিজ হাতে সুপারিশপত্র লিখে দেন, যা নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে।’

পঞ্চানন দত্ত বলেন, “সুনীল, অতীন, শ্যামল, নীহাররঞ্জন, এমনকি নৃত্যগুরু বিপিন সিং আমার ছোট বইয়ের দোকানে অসংখ্যবার এসেছেন। নৃত্যগুরু বিপিন সিংকে বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য নাচের বই সংগ্রহ করে দিয়েছিলাম। তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতেন, ‘এ জন্য তুমি অনেক পুণ্য পাবে।’”

হাল আমলের তরুণ বই সংগ্রাহক এই মানুষটি জানান, অনেক তরুণ লেখক তাঁর টংঘরে নিয়মিত ঢু মারেন। কাঙ্ক্ষিত বই না পেলে খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বর্তমান সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গবেষক দেবজ্যিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ও সৌমেন পালের উদাহরণ দেন।

কলকাতার তরুণ লেখক দেবাশীষ কর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কয়েক বছর আগে ইন্দ্রনাথ মজুমদার মারা গেছেন। তাঁর পর বাংলা বইয়ের দুনিয়ার নির্ভরশীল ব্যক্তি হলেন পঞ্চানন দত্ত। যেকোনো বইয়ের খোঁজখবর নিতে হলে তাঁর বিকল্প কেউ নেই। তিনি আন্তরিকভাবে পুরনো দুষ্প্রাপ্য বই খুঁজে এনে দিয়ে লেখক-সাহিত্যিকদের কাজকে অনেক সহজ করে দিচ্ছেন।’

দুষ্প্রাপ্য বই সংগ্রাহক ঢাকার রাজিব আহমেদ এই প্রতিনিধিকে বলেন, তিনি দুই বাংলার গ্রন্থপ্রেমীদের প্রিয় মানুষ। কলকাতা বইমেলার সময় তাঁর দোকানের সামনে বাংলাদেশি বই পড়ুয়া কিংবা লেখক-গবেষকদের খুব ভিড় দেখা যায়।

পঞ্চানন দত্তের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি নিজের জন্যও বই সংগ্রহ করেন এবং হাজার তিনেক দুষ্প্রাপ্য বই বাড়িতে রেখে দিয়েছেন। অভাব-অনটনের মধ্যেও সেসব বইয়ে তিনি হাত দেন না। পঞ্চানন বলেন, ‘এগুলো তো বই নয়, আমার সন্তান। বাড়িতে আমার দুই ছেলে রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরো তিন হাজার সন্তান। দুই ছেলেকে আমি যেমন আদর করি, এ বইগুলোকেও সেভাবে যত্ন করি। আমি না খেয়ে মরলেও এসব বই বিক্রি করব না।’

কথায় কথায় জানা যায়, একসময় পঞ্চানন বই বিক্রি পেশার সঙ্গে রাজনীতিও করেছেন। বামপন্থী রাজনীতি করতে গিয়ে জেল-জুলুমও সহ্য করতে হয়েছে। আত্মগোপনে গিয়ে লিটল ম্যাগাজিন বের করেছেন। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে গিয়ে সব ছেড়ে বইয়ের ব্যবসায় থিতু হন। তাঁর কাছে কলেজ স্ট্রিটের পুরনো দলিলপত্রের একটি সংগ্রহও রয়েছে। এর মধ্যে ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দাশ গুপ্ত প্রকাশনীর একটি পুরনো ডায়েরি তিনি সংগ্রহ করেছেন। যার মধ্যে কলেজ স্ট্রিটের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস লুকিয়ে আছে। কলেজ স্ট্রিট বইয়ের বাজারের যেসব ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী তিনি, নোট নিয়েও রেখেছেন। মৃত্যুর আগে সেগুলো একত্র করে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন পঞ্চানন। সুত্র : কালের কন্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়