শিরোনাম
◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ২৭ বস্তা টাকা, গণনা চলছে ◈ তীব্র তাপপ্রবাহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও ৭ দিন বন্ধের দাবি ◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক

প্রকাশিত : ৩০ মার্চ, ২০১৮, ১০:৫৩ দুপুর
আপডেট : ৩০ মার্চ, ২০১৮, ১০:৫৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হামলার পর ফেসবুকে উল্লাস করে ওরা

ডেস্ক রিপোর্ট : 'জাফর ইকবাল একজন নাস্তিক। তিনি আর যাই হোন না কেন, মুসলিম নন। আগেও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তখন সফল হয়নি। এবার সফল হয়েছে। এবার মজা দেখ।' জনপ্রিয় লেখক ও শিক্ষাবিদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার পর ফেসবুক ও টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ রকম অপপ্রচারকারী চক্রকে শনাক্ত করেছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। নিবিড় তদন্ত করে জঘন্য ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে এ চক্রের দুই সদস্যকে। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে রমনা থানায়। এ ছাড়া কুৎসা ও নোংরা তথ্য ছড়ানোর ঘটনায় পুলিশের আবেদনের পর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ 'খালিদ বিন ওয়ালিদ' নামে একটি আইডি বন্ধ করে দিয়েছে।

গত ৩ মার্চ জাফর ইকবালের ওপর হামলার পর পরই একটি গ্রুপ বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঘন্যভাবে 'উল্লাস' করতে থাকে। বিভিন্ন সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হামলা-সংক্রান্ত সংবাদের নিচে তার সম্পর্কে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যের পাশাপাশি ঘটনার অপব্যাখ্যাও দেয় এ চক্র। এদের কোনো কোনো স্ট্যাটাসের ভাষা ছিল ভীষণ অশ্নীল। কয়েকটি স্ট্যাটাসের জন্য আবার নোংরা ছবিও শেয়ার করা হয়েছিল। এই অপপ্রচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতারের পর জানা গেছে- শুধু জাফর ইকবাল নন, রাষ্ট্রের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, শিক্ষাবিদ, লেখক ও বুদ্ধিজীবিকে টার্গেট করে চক্রটি সুপরিকল্পিতভাবে সাইবার জগতে চালাচ্ছে বিদ্বেষপূর্ণ অপপ্রচার। চক্রটি ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর এবং পহেলা বৈশাখ নিয়েও নানা ব্যঙ্গাত্মক ছবি, স্ট্যাটাস ও কমেন্ট পোস্ট করছে- যা জাতীয় চেতনার পরিপন্থী। কিছু আইডি থেকে বিশিষ্টজনকে গালমন্দও করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের ডিসি আলিমুজ্জামান সমকালকে বলেন, যারা অনলাইনে বিশিষ্টজন ও জাতীয় দিবসকে টার্গেট করে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করছে, তাদের মধ্যে দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ চক্রের অন্যদের খোঁজা হচ্ছে। বিভিন্ন আইডি শনাক্ত করে এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে।

পুলিশের উচ্চপদস্থ একাধিক কর্মকর্তা জানান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর জঙ্গি হামলার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বেশ কয়েকটি আইডি থেকে হামলাকে সমর্থন করে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। সাইবার ক্রাইম ইউনিট তদন্ত শুরুর পর বেরিয়ে আসে, 'খালিদ বিন ওয়ালিদ' নামে একটি ফেসবুক ও টুইটার আইডি থেকে জাফর ইকবালকে নিয়ে অতিমাত্রায় বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা ছড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও কিছু ফেসবুক ও টুইটার আইডি থেকে আনন্দ প্রকাশ করা হয়েছে।

তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, খালিদ বিন ওয়ালিদ নামে আইডি পরিচালনা করেছে মূলত হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের বিরামচরের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন খান। এই আইডির প্রোফাইল ছবি ছিল ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পতাকা। ইকবাল এক সময় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করত। তবে মাঝেমধ্যে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় চাকরি হারায় সে। এরপর থেকে সে নিয়মিত বেনামি আইডি থেকে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন লেখা পোস্ট করত। জাফর ইকবালসহ বিভিন্ন বিশিষ্টজনের নামেও মিথ্যাচার করে আসছিল সে।

গত ১৩ মার্চ সহকারী পুলিশ সুপার ইশতিয়াক আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম হবিগঞ্জ থেকে ইকবালকে গ্রেফতার করে দুই দিনের রিমান্ডে নেয়। তার সূত্র ধরে কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় মাদ্রাসা শিক্ষক আলামিন রুমীকে। এই মাদ্রাসা শিক্ষকও নামে-বেনামে বিভিন্ন আইডি থেকে জাফর ইকবালসহ অন্যান্য বিশিষ্টজন সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দিত।

পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সিলেট থেকে গ্রেফতার ইকবালের জঙ্গিদের ব্যবহূত টেলিগ্রাম অ্যাপসে অ্যাকাউন্ট ছিল। অনলাইনে বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা করা হয়, এমন ২৩টি অখ্যাত নিউজ চ্যানেলের সাবস্ট্ক্রাইবার সে। তার একাধিক বেনামি আইডিতে আনসার আল ইসলামের আধ্যাত্মিক নেতা জসীমুদ্দিন রাহমানির বিভিন্ন লেখা পাওয়া গেছে। ইকবাল গ্রেফতারের পর থেকে তার ভাগ্নে রাজীব গা ঢাকা দিয়েছে। রাজীবও বিভিন্ন বেনামি আইডি থেকে উগ্র মতাদর্শ প্রচার করে আসছিল বলে জানান গোয়েন্দারা।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রুমীর একটি পোস্ট ছিল এমন- 'ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে।'

ইকবাল একটি পোস্ট শেয়ার করেছে, যাতে লেখা হয়েছে- 'জাফর ইকবাল একজন সু-লেখক হতে পারেন, কিন্তু ধর্মের ব্যাপারে তিনি একেবারেই অন্তঃসারশূন্য। ধর্মীয় কোনও বিষয়ে তার কাছ থেকে কোনও উপদেশ গ্রহণ করা আর একটা অন্ধকে পথপ্রদর্শক হিসেবে গ্রহণ করা একই কথা।' একটি স্ট্যাটাসে সে লিখেছে, 'জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনা সম্পূর্ণ সাজানো নাটক ছিল'। আরেকটি স্ট্যাটাসে সে লিখেছে, 'বাংলার মুক্তমনাদের জানাতে চাচ্ছি, আপনারাই বলেন, বাংলার একটা অভিজিৎ রায় মারলে হাজার অভিজিৎ রায় জন্ম নেবে। এক জাফর ইকবাল হত্যা করলে হাজার হাজার জাফর ইকবাল জন্ম নেবে। তা হলে আপনারাই এদের হত্যা করে এ দেশ নাস্তিকময় করে তুলুন।' 'মুরসালিন এসকে' নামের একটি আইডি থেকে মন্তব্য করা হয়, 'মুজাহিদিনরা এদেরই টার্গেট করে'।

জঙ্গি-সংক্রান্ত খোঁজ রাখেন পুলিশের এমন এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, যারা উগ্রপন্থি তারা নানা গ্রুপে কাজ করে। কেউ দায়িত্ব পালন করে অপারেশনাল ইউনিটে। কেউ আধ্যাত্মিক বয়ান দেয়। কেউ আবার 'মিডিয়া টিমে'র সদস্য হয়ে জঙ্গি সংগঠনের কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে। যারা মিডিয়া টিমে রয়েছে তাদের দায়িত্ব থাকে, টার্গেট করা ব্যক্তি সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা। এ ছাড়া এ দলের সদস্যরা জঙ্গি অপারেশন হলে সেটাকে সমর্থন করে পোস্ট দিয়ে থাকে। এ দলভুক্ত সদস্যদের কৌশল থাকে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে ধরা পড়ার পর তথ্য না দেওয়ার কৌশল হিসেবে নিজেদের 'মানসিক বিকারগ্রস্ত' হিসেবে উপস্থাপন করা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সময় তারা নানা ধরনের ওষুধ চেয়ে থাকে- যেগুলো মূলত চেতনানাশক। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ দেওয়া হলেই বিপদে পড়তে হয় এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদও থেমে যায়। সূত্র : সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়