শিরোনাম
◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ৩০ মার্চ, ২০১৮, ০৭:১৫ সকাল
আপডেট : ৩০ মার্চ, ২০১৮, ০৭:১৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রার্থী বাছাইয়ে সতর্ক দু’দলই

ডেস্ক রিপোর্ট : ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত নওগাঁর-৫ আসন। নওগাঁ সদরকে নিয়ে এ আসনের চালক এখন আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেলার সব আসনেই জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। স্থানীয়দের অনেকে মনে করেন, নওগাঁয় আওয়ামী লীগের এই বিজয়ের মূলে ছিলেন দলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের সময়োপযোগী নেতৃত্ব। মরহুম আব্দুল জলিল সেসময় গোটা নওগাঁয় তরুণ নেতৃত্ব বাছাই করে দলকে নিয়ে যান শক্ত অবস্থানে। আব্দুল জলিল দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে গোটা দেশের ন্যায় নিজ জেলাতেও গড়ে তুলেছিলেন আওয়ামী লীগের শক্ত ভিত।তাঁর ত্যাগ, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, নিরহংকার আর নিষ্ঠা ও আদর্শের কাছে প্রতিদ্বন্দ্বীরা হেরে যান।

বিএনপির ঘাঁটি বলে খ্যাত নওগাঁয় ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে নওগাঁ-৪ (মান্দা) বাদে অপর ৫টি আসনে নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির এরশাদ সরকারের আমলে নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে ওই নির্বাচনে নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওহিদুর রহমান এবং নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হুমায়ন কবির চৌধুরী নির্বাচিত হন। অপর ৪টি আসনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলই অংশ না নিলে জেলার ৬টি আসনেই একরকম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ৬টি আসনের মধ্যে নওগাঁ-১ (পোরশা-সাপাহার-নিয়ামতপুর) আসনে আওয়ামী লীগের দেওয়ান আজিজুর রহমান এবং নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনে শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু জয়লাভ করেন। নওগাঁ-৩ ( বদলগাছী-মহাদেবপুর) আসনে বিএনপির আখতার হামিদ সিদ্দিকী , নওগাঁ-৫ (সদর) আসনে আলহাজ মো. শামসুদ্দিন আহমেদ ও নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনে মো. আলমগীর কবিরসহ বিএনপি ৩টি আসনে এবং নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী নাসির উদ্দিন জিহাদি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ৬টি আসনেই জয়লাভ করে বিএনপির প্রার্থীরা। ২০০১ সালের নির্বাচনে নওগাঁ-৫ (সদর) আসনে নির্বাচিত হন বর্ষীয়ান নেতা মো. আব্দুল জলিল। অপর ৫টি আসনেই নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থীরা।
নওগাঁ সদর আসনে আব্দুল জলিল ১৯৯৬ নির্বাচনে পরাজয়ের পর তাকে টেকনোক্রাট হিসাবে বাণিজ্যমন্ত্রী করেন তৎকালীণ আওয়ামী লীগ সরকার। তিনি মন্ত্রিসভায জায়গা পাওয়ার পর থেকে নওগাঁর উন্নয়নের চিত্র পাল্টাতে শুরু করে। এ সময় দলমত নির্বিশেষে আব্দুল জলিল হয়ে উঠেন সকলের জলিল ভাই। তাই প্রতিদান দেয় ২০০১ সালের নির্বাচনে। তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। সেই দিক থেকে নওগাঁ সদর আসনটি ভিআইপি আসনে রূপ নেয়।

আব্দুল জলিলের আমল থেকেই এই আসনটি ভিআইপি আসন হিসেবে দেখেন রাজনৈতিক পাড়ার লোকজন। আর তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এখন পর্যন্ত এই আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও বিএনপি থেকে হাফ ডজনেরও বেশি প্রার্থী মনোনয়ন চাইতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।

তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয়। তবে আসনটি পুনরুদ্ধারে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। তাদের মতে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ওপর নির্ভর করছে জয় পরাজয়। প্রার্থী মনোনীত করার ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারলে এই আসনটি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। একই অবস্থা বিরাজ করছে আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও।

২০১৩ সালের মার্চে নওগাঁর বর্ষীয়ান নেতা আব্দুল জলিল এমপি’র মৃত্যুর পর নওগাঁয় দলের হাল ধরেন দীর্ঘদিনের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মালেক। উপনির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি জেলা যুব লীগের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম রফিকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেন। আব্দুল মালেক বর্তমানে সদর আসনের এমপি ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে তাঁর অবস্থান সুদৃঢ়। কাজেই তিনি আগামী নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী একথা নিশ্চিত। অপর দিকে আব্দুল জলিলের ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল মনোনয়ন চাইবেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানিয়েছেন। এ ছাড়াও এই নির্বাচনে জেলা যুব লীগের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পর পর দু’বার পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এবং সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বী আলহাজ মো. রফিকুল ইসলাম রফিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আব্দুল মালেকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।

অপর দিকে সদর আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হাফ ডজন সম্ভাব্য প্রার্থীর কথা শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল জলিলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত বিএনপির প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য লে. কর্নেল (অব.) আব্দুল লতিফ খান, জেলা বিএনপির সভাপতি বর্তমান নওগাঁ পৌর মেয়র মো. নজমুল হক সনি, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জালাল আহমেদ বকুল, সাবেক আহ্বায়ক ও নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুবক্কর সিদ্দিক নান্নু, সহসভাপতি মাস্টার হাফিজুর রহমান হাফিজ, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন ও সাবেক সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি রায়হান আকতার রনি অন্যতম। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে নওগাঁ জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইফতারুল ইসলাম বকুল প্রার্থী হচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

এদিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মনে করছেন- প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও সম্প্রতি নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ ও নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছে। একইভাবে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা যদি সকল ভেদাভেদ ভুলে হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত মেনে একযোগে কাজ করলে এই আসনটি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। একই কথা উল্লেখ করে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম ধলু বলেন, আমি তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে সম্পৃক্ত। আমি মনোনয়ন অবশ্যই চাইবো। বিশ্বাস করি মনোনয়ন পেলে এই আসনটি পুনরুদ্ধার করে দলকে উপহার দিতে পারবো।

এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিভাষ মজুমদার গোপাল বলেন, বিএনপির নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ভোটারদের আশাআকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন- জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারা দেশের ন্যায় নওগাঁতেও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিগত সময়ের চেয়ে নৌকার প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে নওগাঁয় নৌকার বিজয় নিশ্চিত।
তবে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা বলছেন- নওগাঁ সদর আসনে মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সে ক্ষেত্রে প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল হলে চরম মূল্য দিতে হবে দুই দলকেই এমনটাই মনে করছেন তারা।

নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মালেক এমপি বলেন, আমি অবশ্যই মনোনয়ন চাইবো। এমপি হবার পর আমি নির্বাচনী এলাকায় নানা উন্নয়ন কাজ করেছি, এখনো উন্নয়ন কাজ চলছে। এতে আমার ও নৌকা প্রতীকের প্রতি আমি বিশ্বাস করি ভোটাররা পুনরায় আমাকে নির্বাচিত করবে। তবে মনোনয়ন না পেলেও দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার হয়ে কাজ করে দলের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করবো।

জেলা বিএনপির সভাপতি নজমুল হক সনি বলেন, আমি মনোনয়ন চাইবো এবং দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের শিকার ভোটাররা শুধু আমাকে নয় সারা দেশে বিএনপি প্রার্থীদের নিবাচিত করবে।

নওগাঁ-৫ আসনটি সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৪৭ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৭ হাজার ৩২০ জন এবং মহিলা ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৭ জন। পৌর এলাকার ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজার ৮০২ জন। এর মধ্যে ৫৬ হাজার ২৪৬ জন পুরুষ এবং ৬৫ হাজার ৫৫৬ জন মহিলা ভোটার। সূত্র : মানবজমিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়