শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ২৯ মার্চ, ২০১৮, ০৭:০৫ সকাল
আপডেট : ২৯ মার্চ, ২০১৮, ০৭:০৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘প্রথম বন্দি হিসেবে ফোনে কথা বলতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি’

ডেস্ক রিপোর্ট : ধর্ষণ মামলায় ত্রিশ বছরের কারাবাসের রায় হয়েছে লাবলু মন্ডল। পাঁচ বছর ধরে তিনি টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে রয়েছেন। তার বাড়ি মধুপুর উপজেলার জটাবাড়ি পুর্ব পাড়া গ্রামে। দীর্ঘদিন পর তিনি স্বজনদের সাথে কারাগারে থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন।

তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো বন্দিদের এই ফোনালাপ কার্যক্রমে উদ্বোধনী দিনে স্বজনের সাথে কথা বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। কারাগারে থেকে আমার আত্বীয়স্বজনের সাথে কথা বলতে পারবো চিন্তাই করতে পারছিলাম না। মনের ভেতরে অনেক কষ্ট ছিল। ফোনে কথা বলে সব হাল্কা হলো। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনোকে ধন্যবাদ জানান। বন্দিরাও যে মানুষ তাদের যে আবেগ অনুভূতি আছে প্রধানমন্ত্রী তা অনুধাবন করতে পেরেছেন।

সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন সাজ্জাদ হোসেন। চাকরি বিধি লংঘন করার অপরাধে সেনাবাহিনীর আইনে তার এক বছরের সাজা হয়েছে। তিন মাস ধরে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে রয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবন নগর থানায় তার বাড়ি। বন্দিদের স্বজনদের সাথে ফোনালাপ কার্যক্রমের উদ্বোধনীর দিনে তিনি কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বন্দিরা নিয়মিত কথা বলতে পারলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। বিষন্নতা, অস্থিরতা, মানসিক অবসাদ কমবে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তাদের সুস্থ জীবনে ফিরে আসা সহজ হবে।

হত্যা মামলায় দুই বছরের সাজা মাথায় নিয়ে কারাভোগ করছেন শাহাদত হোসেন। তার বাড়ি সদর উপজেলার চাকতা গ্রামে। তিনি তার মায়ের সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, মায়ের সাথে ফোনে কথা বলে খুব ভাল লাগছে। অপরাধীরা এভাবে কথা বলার সুযোগ পেলে আত্মীয়স্বজন তাদের ভালো পরামর্শ দিবে। স্বজনদের সাথে সম্পর্ক অটুট থাকবে। অপরাধ করতে সাহস পাবে না।

রাশেদুল ইসলাম নামের এক আসামি তিনিও ফোনে কথা বলেছেন তার স্ত্রীর সাথে। তিনি বলেন, সরকার মানবিক দৃষ্টি দিয়ে বন্দিদের কথা বলার সুযোগ তৈরি করে দিয়ে বন্দিদের সংশোধন হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। এ জন্য তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কারাবন্দিদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে মোবাইলে কথা বলার পাইলট প্রকল্প হিসেবে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে চালু হয়েছ ‘মোবাইল ফোন সেবা।’

বুধবার দুপুরে টাঙ্গাইল কারাগার প্রাঙ্গণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এবারই প্রথমবারের মতো বন্দিদেরকে পরিবারের আরো কাছাকাছি থাকতে চালু করা হলো মোবাইল ফোন সেবা। প্রকল্পটির নামকরণ করা হয়েছে ‘প্রিজং লিঙ্ক স্মার্ট কমিউনিকেশন সিস্টেম ফর ইনমেটস এ- রিলেটিভস এই প্রকল্প ‘স্বজন’ নাম পরিচিতি পাবে।

প্রকল্পপের নীতি অনুযায়ী একজন কারাবন্দি ব্যক্তি মাসে দুই বার এবং প্রতিবারে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট করে কথা বলতে পারবেন। এছাড়া প্রতি বন্দি শুধুমাত্র দুইজন নিকটাত্মীয়ের সাথে কথা বলার সুযোগ পাবেন। তবে সাধারণ বন্দিরা এই সুবিধার আওতায় থাকলেও জঙ্গি আর শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারো সঙ্গেই মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ পাবেন না বলে জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ।

টাঙ্গাইল জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে চালু এ সেবার জন্য কারাগারের অভ্যন্তরে চারটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। একটি কক্ষের মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে এগুলো। মোবাইল ফোনে একই সময়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন চার বন্দি। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বন্দির জন্য একটি করে বুথ নির্ধারণ করা হয়েছে। বন্দি হিসেবে কেউ কারাগারে এলেই তার কাছ থেকে পরিবারের দুটি নম্বর নেওয়া হবে। ওই দুটি নম্বরে মাসে দু’বার করে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট কথা বলা যাবে। কারাগারে ডেভেলপ করা সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভেরিফায়েড হওয়ার পর ওই দুটি নম্বরে সংশ্লিষ্ট কারাবন্দিকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হবে। মহিলা, বৃদ্ধ, শিশু ও অল্প বয়স্ক কিশোর বন্দিরা কথা বলার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। নির্ধারিত সময়ের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে কল কেটে যাবে। সময় শেষ হওয়ার ৩ মিনিট পূর্বে সতর্ক সূচক ‘বিপ’ শব্দ হবে। তবে বন্দিরা আপাততঃ কোন আইনজীবীর সাথে কথা বলতে পারবেন না। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত কথা বলার সময়।

প্রকল্পের নীতি অনুযায়ী যে কোন দুটি নম্বরে বন্দিরা কথা বলতে পারবেন। এই নম্বর দুটি হতে হবে বন্দির মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান কিংবা আত্মীয়-স্বজনের। এর বাইরে কেউ কথা বলতে পারবেন না। তবে এর আগে কর্তৃপক্ষ এসএমএস বা ফোন কলের মাধ্যমে স্বজনদের জানিয়ে রাখবেন কারাবন্দি কোন সময় কথা বলবেন।

নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে টেলিফোন বুথ থেকে বন্দি চেষ্টা করলেও অন্য কোনও নম্বরে কথা বলতে পারবেন না। স্বজনদের সঙ্গে বন্দির পুরো কথোপকথনটির পুরোটাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেকর্ড হবে। এমনকি কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেই আলাপচারিতা লাইভ শুনতে পারবেন।

এছাড়া অ্যাডমিনিস্ট্রেটর প্রয়োজনবোধে যেকোন কল যেকোন পর্যায়ে কেটে দিতে পারবেন। ফোন সেট বা ফোন বুথের কোন সিস্টেমের কোন ধরণের ক্ষতি করলে সংশ্লিষ্ট বন্দিকে জরিমানা দিতে হবে।

টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের জেলার আবুল বাশার জানান, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে চারটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো থেকে প্রতিনিদিন প্রায় ৫০ জনের মতো কারাবন্দি তাদের স্বজনদের সাথে আলাপ করতে পারবেন। বর্তমানে কারাগারে ১২৮৫ জন কারাবন্দি রয়েছেন, এর মধ্যে ২৭ জন মহিলা। প্রাথমিক অবস্থায় বন্দিরা বিনামূল্য কথা বলতে পারলেও পরবর্তী সময়ে বন্দিদের কাছ থেকে প্রতি মিনিট ১টা করে আদায় করা হবে।

মাওলা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিন বলেন, মানুষকে ভালোবেসে মানবিক আচরণ দিয়ে সংশোধন করা যায়। প্রধানমন্ত্রীর এ মানবিক গুণ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে একটি নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনার আওয়তায় বন্দিরা তাদের আত্মীয়দের সাথে কথা বলা বা তাদের মুখ দেখতে পারলে তাদের আচরণের পরিবর্তন হবে এবং কারাগারগুলো প্রকৃত সংশোধনাগার হওয়ার পথে একধাপ এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে দেশ থেকে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে।

উল্লেখ্য, কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কারাগারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কারাবন্দিদেরকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পরিবারের সাথে ফোনে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হবে’ মর্মে প্রতিশ্রুতি দেন। তার প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পাইলট প্রকল্প হিসেবে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে এই কার্যক্রম প্রথম শুরু হয়।

ইতিপূর্বে ২০১৩ সালের ১৮ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয় কর্তৃক কারা অধিদপ্তরকে কারাগারগুলোতে মোবাইল ফোনবুথ স্থাপন সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়। পরে ২০১৫ সালের ৩ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার আলোচনার প্রেক্ষিতে দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের মতামতের ভিত্তিতে পরে এ সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়। সূত্র : পরিবর্তন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়