শিরোনাম
◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত ◈ বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ও মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র: ম্যাথিউ মিলার ◈ ইউনেস্কোর ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার পাননি ড. ইউনূস: শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৮ মার্চ, ২০১৮, ০৮:৩৫ সকাল
আপডেট : ২৮ মার্চ, ২০১৮, ০৮:৩৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হয়রানির বিরুদ্ধে এক নারীর সাহসিকতা

মো. কামাল হোসেন: ভাইয়ের বিয়ের কেনাকাটা করতে ঢাকার নিউমার্কেটের নুরজাহান মার্কেটে গিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসমিন ওয়াজিদা। সঙ্গে তার মা ছিলেন। একটি দোকানে তাদের কাঁচের চুড়ি পছন্দ হয়। দোকানদারকে দূর থেকে চুড়িগুলো দেখিয়ে তারা দাম জানতে চান। দোকানদার অনেক বেশি দাম বললে, তারা বলেন, ঠিক আছে, আমরা একটু পাশের দোকান দেখে আসি যে, অন্য কোন ডিজাইন আর আছে কিনা?

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াজিদা বলেন, তখন দোকানদাররা আমাদের রাস্তা আটকে দিয়ে বকাবকি করতে থাকে। তারা বলে, কি ফকিরনি কোথাকার, মার্কেটে কি করতে আসছেন। শুধু চেহারা দেখাতে আসছেন নাকি।

তাসমিন ওয়াজিদা বলেন, আমরা অনেক অবাক হয়ে যাই। কারণ আমরা তাদের জিনিসের দরদাম তো করিই নাই, ধরেও দেখি নাই। শুধু দূরে থেকে দেখিয়ে দাম জিজ্ঞেস করেছি। আমি যখন বলি, ভাইয়া আপনি এমন কথা বলছেন কেন, আমার আম্মু স্কুল টিচার, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট। তখন তারা আমার মাকে নিয়ে, আমার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েও অনেক বাজে বাজে কথা বলতে থাকে।

তাসমিন ওয়াজিদা আরো বলেন, সব থেকে দুঃখজনক ব্যাপার, আশেপাশে অনেক মানুষ জমে গিয়েছিল, কিন্তু কেউ আমাদের সমর্থন করেনি। বরং অনেকে বলছিল, মেয়ে মানুষ, এত কথা বলেন কেন? বলছে, আপনারা মাথা নিচু করে চলে যাবেন।

বাংলাদেশে অন্তত ৫০ শতাংশ নারী কেনাকাটা করতে গিয়ে অপ্রীতিকর স্পর্শের শিকার হয় এবং অন্তত ৪২ শতাংশের বেশি নারী হাসপাতালে সেবা নিতে গিয়ে রূঢ় আচরণের শিকার হয় বলে একটি গবেষণা শেষে জানাচ্ছে বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইড। এসব রোধে একটি নীতিমালা তৈরিরও তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশিরভাগ নারীই এসব ঘটনায় মুখ বুজে চলে যান। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসমিন ওয়াজিদার সঙ্গে, যিনি ঢাকার এরকম ঘটনার শিকার হওয়ার পর রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ২০০৬ সালে এই ঘটনাটি ঘটে।

তিনি বলছেন, সবার নিজ নিজ অবস্থান থেকে এসব ঘটনার প্রতিবাদ করা উচিত। প্রতিবাদ করলে, পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে এর প্রতিকার পাওয়া যায়। নিউমার্কেটের ওই ঘটনার পর তিনি পুরো বিবরণ দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। সেই স্ট্যাটাস দেখে আবদুল্লাহ আল ইমরান নামের একজন অ্যাক্টিভিস্ট তাকে নিউমার্কেট থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দেন। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুন নাহার পুরো ঘটনাটি শুনে তৎক্ষণাৎ তার সঙ্গে পুলিশ ফোর্স পাঠিয়ে ওই দোকানদারদের ধরে নিয়ে আসেন। এরপর ওই দোকানদার এবং আশেপাশে যারা তাকে সমর্থন করেছিল, তারাও বুঝতে পেরেছে যে তাদের ভুল হয়েছে।

ওয়াজিদা বলেন, পরবর্তীতে আমি আবার ওই দোকানে আবার গিয়েছিলাম। দেখলাম যে, তার আচরণের মধ্যে বেশ পরিবর্তন এসেছে। অনেকদিন ধরে এরকম হয়রানির শিকার নারীদের সহায়তায় ব্যক্তি উদ্যোগে কাজ করছেন অ্যাক্টিভিস্টি আবদুল্লাহ আল ইমরান।

তিনি আরো বলেন, আগে অভিযোগটা সেভাবে আসতো না। মেয়েরা একেবারেই বলতো না। হয়তো মেনে নিতো যে, মার্কেটে গেলে এটা হয়, কিন্তু এখন সেই অবস্থা পাল্টেছে। তবে তারা অভিযোগের পথটা জানতো না। কার কাছে জানাবে, কোথায় জানাবে? সবার একটি কমন ধারণা, পুলিশ সাহায্য করে না। পরিবারও চায়না তারা মামলা করুক, থানায় যাক। হয়তো বন্ধুদের জানাতো, টুকটাক মারপিট করার ঘটনা ঘটতো। তবে এখন সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করার কারণে আমরা সবাই জানতে পারছি, অথচ পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করলেই তড়িৎ প্রতিকার পাওয়া যায়।

ইমরান বলেন, গত দেড় বছরে ফেসবুকে লেখালেখি করে এ বিষয়ে সচেতনতার তৈরির চেষ্টা করেছেন ইমরান। এ সময় ২৫ থেকে ৩০টি অভিযোগ পেয়েছেন। কিন্তু যখনি তাদের থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়ার কথা বলা হয়, তখন তারা আর এগোতে চান না। অন্তত পাঁচজন নারীকে আমি লিখিত অভিযোগ দিতে রাজি করাতে পেরেছি। তাদের সবার ক্ষেত্রেই আমি তাৎক্ষনিক প্রতিকার পেতে দেখেছি। সূত্র বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়