শিরোনাম
◈ ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিলে জো বাইডেনের সাক্ষর  ◈ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর ◈ বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে ইথানল নিতে পারে, যা তেলের চেয়ে অনেক সস্তা: রাষ্ট্রদূত ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের  ◈ লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, চাপ পড়ছে গ্রামে ◈ বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগ সম্প্রসারণের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা  ◈ হিট স্ট্রোকে রাজধানীতে রিকশা চালকের মৃত্যু

প্রকাশিত : ২৮ মার্চ, ২০১৮, ০৩:৫৩ রাত
আপডেট : ২৮ মার্চ, ২০১৮, ০৩:৫৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘ডিজিটাল আইনের মিস ইউজের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে’

রবিন আকরাম : প্রস্তাবিত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের চারটি ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং ১০টি দেশ। তারা মনে করে, ওই চারটি ধারা বাকস্বাধীনতা এবং স্বাধীন মত প্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে।

এ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্বেগের সঙ্গে একমত পোষণ করেন মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান।

তিনি বলেন, মুক্ত আলোচনা ও মুক্ত মত প্রকাশে যে কোনোরকম বাধার বিরুদ্ধেই আমার অবস্থান। ধর্ম বা কোনো ব্যক্তি বিশেষকে নিয়ে আলোচনার বিষয় যদি আসে আর সেই আলোচনা করার সুযোগ যদি সীমিত করে দেয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে এর প্রভাব অন্যান্য আলোচনায়ও পড়ে। আসলে কোনো কিছুই আলোচনার ঊর্ধে থাকা উচিত না।

তিনি আরো বলেন, ধর্ম নিয়েও অনেকের অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে। দেশে অনেক ধর্মাবলম্বী আছেন। আর বিভিন্ন বিষয় আলোচনার সময়ে এক ধর্মের অনুসারী অন্য ধর্ম নিয়ে অথবা নিজ ধর্ম নিয়ে সেই ধর্মের মানুষের মধ্যেই জানার আগ্রহ থাকতে পারে, প্রশ্ন থাকতে পারে, যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য থাকতে পারে। সেটিকে থামিয়ে দেয়া বা দমিয়ে দেয়া যৌক্তিক না। ঠিক তেমনি জাতির জনক অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে জানার আগ্রহ থাকে, কিছু বলার থাকে অথবা সেই জানা বলার মধ্যে সে যদি কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হয় অথবা চেষ্টা করে সেটাকে থামিয়ে দেয়াকে আমি মনে করি কন্ঠরোধ করার শামিল।

নূর বলেন, অনুভূতির সীমানা কী? অনুভূতি, আলোচনা বা সমালোচনার সীমানা কী? কতটুকু অতিক্রম করলে তা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে? বা কী ধরনের শব্দ ব্যবহার করলে এক্ষেত্রে অপরাধের পর্যায়ে পড়ে, সেটা যতক্ষন না পর্যন্ত চিহ্নিত করা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই আইনের মিসইউজের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন একই প্রসঙ্গে বলেন, কোনো আইনের যদি অপব্যহার হয়, তাহলে তাদের উদ্বেগটা আমলে নেয়া যেতে পারে। তবে এই অইনে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডার ব্যাপারে যে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে, তাকে আমি যথার্থ মনে করি। এটাতে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করার কী কারণ থাকতে পারে, আমি জানি না।

তিনি বলেন, একটা দেশ তার মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যাপারে আইন করতে পারে, সুরক্ষারও ব্যবস্থা নিতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই দেশটির জন্ম হয়েছে। এতে তো কোনো সমস্যা আমি দেখি না। এ ব্যাপারে তাঁদের উদ্বেগ আমার কাছে যথার্থ মনে হয় না।

তবে ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি বা মুক্ত সংবাদপত্রকে বাধাগ্রস্ত করার ব্যাপারে তাঁরা কোনো উদ্বেগ জানালে সেটাকে আমি যথেষ্ট যুক্তিসংগত মনে করি। কারণ, সংবাদমাধ্যম বা সংবাদপত্র তো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ফোর্থ স্টেট। এটা মুক্ত সমাজ, গণতন্ত্র এবং নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার অন্যতম শর্ত। সেটার ব্যাপারে তাঁরা উদ্বেগ জানালে আমি যথেষ্ট যৌক্তিক মনে করি। আইনের অপব্যবহার যাতে না হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা বন্ধের আইনকে আমি যথেষ্ট বিবেচনাপ্রসূত মনে করি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধর্ম প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বিষয়। আপনি আপনার ধর্ম পালন করবেন। গণতান্ত্রিক দেশ যে নীতিমালায় পরিচালিত হয় যে রাষ্ট্র ও ধর্ম পৃথক থাকবে, ব্যক্তি তার ধর্ম পালন করবেন, অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করবে না- এগুলো হলো বেসিক প্রিন্সিপাল। এর ভিত্তিতেই সবকিছু পরিচালিত হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, ইউরোপীয় দেশের বাস্তবতা আর বাংলাদেশের বাস্তবতা তো এক নয়। সেই বাস্তবাতার নিরিখেও অনেক কিছু দেখতে হবে।

গত ২৯ জানুয়ারি জেল জরিমানার বিধান রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিপরিষদ। আইনটি সংসদে পাস হলে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা পুরোপুরি বিলুপ্ত করা হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ৪টি ধারা হলো:-

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ধারা
যদি কোনো ব্যাক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা বা প্রচারনা চালায় বা উহাতে মদত প্রদান করেন, তাহলে অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড, এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

যদি কেউ এই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পূনঃ পুনঃ সংঘটন করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা তিন কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ ধারা
যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রিক বিন্যাসে,- (ক) ইচ্ছাকৃতভাবে বা অজ্ঞাতসারে, এমন কোনো তথ্য প্রেরণ করেন যা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক, (খ) এমন কোনো তথ্য সম্প্রচার বা প্রকাশ করেন, যা কোনো ব্যক্তিকে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ করিতে পারে (গ) মিথ্যা বলে জানা থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্ত বা হেয় প্রতিপন্ন করবার অভিপ্রায়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, বা (ঘ) রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুন্ন করবার, বা বিভ্রান্তি ছড়াবার উদ্দেশ্যে, অপপ্রচার বা মিথ্যা বলে জানা থাকা সত্বেও কোনো তথ্য সম্পূর্ন বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ, প্রচার বা সম্প্রচার করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা তিন লাথ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই অপরাধ যদি দ্বিতীয় বার বা পুনঃ পুনঃ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮ ধারা
ওয়েবসাইটে বা কোনো ইলেকট্রিক বিন্যাসে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনো তথ্য প্রকাশ, সম্প্রচার, ইত্যাদি।

(১) যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করবার উদ্দেশ্যে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত করে, তাহলে তিনি সাত বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই অপরাধ যদি একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ সংঘটন করেন, তাহলে দশ বছরের কারাদণ্ড বা ২০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩৫ ধারা
যদি কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেন, তাহলে সেটাও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করার অপরাধের ক্ষেত্রে মূল অপরাধটির জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত রয়েছে, সহয়তাকারী ব্যক্তি সেই একই দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। সূত্র : ডয়সে ভেলে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়