নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতিবাজদের শাস্তির ব্যবস্থার পাশাপাশি সংশোধনের জন্য ‘ভালোবাসা’ দিয়ে তাদের বিবেককে জাগিয়ে তোলার কথা বলেছেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
দুর্নীতি দমন কমিশনের ‘দুর্নীতি বিরোধী সপ্তাহ’ উপলক্ষে মঙ্গলবার ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে শিক্ষার্থীদের বিতর্ক, রচনা, পোস্টার ও কার্টুন আঁকা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, দুদকের দুই ধরনের দায়িত্ব; একটি অপরাধীকে শাস্তি দিয়ে দমন করা, অন্যটি অপরাধীর বিবেককে ভালোবাসা দিয়ে জাগিয়ে তোলা।
“দমন করে কতটুকু সফল হওয়া যাচ্ছে তা আমরা দেখছি। মানুষের হৃদয়কে জাগিয়ে তুলতে হবে। ভালবাসা দিয়ে অপরাধের বিরুদ্ধে এক ধরনের শক্তি গড়ে তুলতে হবে। যার মাধ্যমে দুর্নীতি দূর হবে। দুটোকে যদি আমরা পাশাপাশি বাস্তবায়ন করতে না পারি... শুধু একটি পথে দুর্নীতি দূর হবে না।”
তিনি বলেন, ন্যায়বান মানুষ তৈরি করা, ন্যায়সঙ্গত শাসন ব্যবস্থা তৈরি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ন্যায়সঙ্গত শাসনব্যবস্থা থাকলে মানুষ ‘এমনিতেই’ ভালো হয়ে যায়।
“শাসনব্যবস্থার কোনো জায়গায় যদি দুর্বলতা থাকে, কোনো ছিদ্র থাকে, তাহলে মানুষ চাইলেও ভালো হতে পারে না।”
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের প্রতিষ্ঠান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রায় চার দশক ধরে বাংলাদেশে বই পড়া প্রতিযোগিতার মত ‘উৎকর্ষ বিকাশ’ কর্মসূচি চালিয়ে আসছে ‘আলোকিত মানুষ চাই’ স্লোগান নিয়ে।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশে আজকাল অর্থ বাড়ছে বলে অনেক স্বস্তি বোধ করছি। আমরা মনে করছি- খুব ভালো। অর্থ দরকার, অর্থ না হলে মানুষ পশুতে রূপান্তরিত হতে পারে! কিন্তু শুধু অর্থ হলে চলবে না, আমাদের পরিতৃপ্তি চাই। আমাদের ন্যায় চাই। নীতিবান একটি হৃদয় ও দেশ চাই।”
আগামী প্রজন্মের ‘সুকোমল হৃদয়’ যাতে নীতি নিয়ে প্রস্ফুটিত হয়, সেজন্য দুদক ‘গভীরভাবে’ চেষ্টা করবে এবং বিভিন্ন উদ্যোগ নেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন এর চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ যুদ্ধের আহ্বান জানিয়ে অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দুর্নীতি দূর করা দুদকের একার পক্ষে সম্ভব নয়।
“সর্বগ্রাসী দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে গেলে সকল স্তরের মানুষের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে এক হয়ে এক সুরে কথা বলতে হবে- আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাই এক। এটি একটি যুদ্ধ। এই যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার সুযোগ নেই।”
ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি মানুষের মনুষ্যত্বকে নষ্ট করে দেয়, রাজনীতিসহ সমাজ, পরিবেশ সবকিছুকে কলুষিত করে।
“দুর্নীতি আমাদের সব কিছুকে কলঙ্কিত করে দেয়। আমাদের এত কষ্ট ও ত্যাগের অর্জন স্বাধীনতার গায়ে এ কলঙ্ক লাগবে- তা হতে পারে না।”
কেবল অভিযোগ ও গণমাধ্যমের সংবাদের ভিত্তিতে নয়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, এ বছর ৭০ শতাংশ দুর্নীতির মামলায় শাস্তি হয়েছে। তারা এই হারকে একশ ভাগে নিয়ে যেতে চান।
“কমিশন থেকে বলে দিতে চাই, দুর্নীতিবাজ কেউ অবৈধ অর্থ শান্তিতে ভোগ করতে পারবে না।”
দুদক চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে এ সংস্থর কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম ও সচিব মো. শামসুল আরেফিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বিডি নিউজ
আপনার মতামত লিখুন :