মাহফুজ আল মাদানী: ক্ষমা একটি মহৎ গুণ। প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিপক্ষকে মার্জনা করাই ক্ষমা। ইসলাম ধর্ম ক্ষমা করাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আলোকপাত করেছে। ক্ষমা করতে হলে ব্যক্তিকে উদার হতে হবে। উদার মনের মানুষ ছাড়া অন্যকে সহজে ক্ষমা করতে পারবে না। ক্ষমাশীল ব্যক্তি পরিবার, সমাজ, দেশ জাতির জন্য কল্যাণকর এবং সম্মাজনক। মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমা করার কথা এবং ক্ষমাশীলকে পছন্দ করেন বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় হাবীবকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি ক্ষমা করুন, সৎকাজের নির্দেশ দিন এবং অজ্ঞদিগকে এড়িয়ে চলুন -( সুরা আল আরাফ: ১৯৯)। অন্যায়কারীর অপরাধ ক্ষমা করা তাকওয়া অর্জনের অন্যতম উপায়। কেননা, ক্ষমা করাকে আল্লাহ তাআলা তাকওয়ার নিকটবর্তী উল্লেখ করে এরশাদ করেন, ‘আর ক্ষমা করে দেয়াই তাকওয়ার নিকটবর্তী (সুরা আল বাক্বারা: ২৩৭)।
আমাদের প্রিয় নবী (সা.) ছিলেন সদা সর্বদা ক্ষমাপরায়ণ। তাইতো তিনি ক্ষমা করছেন জীবনভর। এমনকি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার দোআ শিখিয়ে দিয়েছেন। হাদীসের বাণী, হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমাকে আপনি পছন্দ করেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করুন’ ( তিরমিজি)। আমরা যার আদর্শকে জীবনে বাস্তবায়ন করতে চাই সে মহানবী (সা.) মক্কা বিজয়ের পর সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। অথচ এই মক্কা মোকাররামা থেকে কাফির মুশরিকরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর সাহাবী সহ বের করে দিয়েছিল। মক্কা বিজয়ের দিন তিনি চাইলে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। তিনি প্রতিশোধ না নিয়ে গণহারে সবাইকে ক্ষমা করে দেন। তিনি বলেন, আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। তিনিই তো মহানবী। তাঁর আদর্শে আদর্শিত হতে পারলে প্রতিটি ক্ষেত্রে নেমে আসবে স্বর্গীয় বারিধারা।
আমাদের সমাজে ক্ষমাশীল আর ক্ষমা করার মানসিকতা সম্পন্ন লোকের সংখ্যা নিতান্তই কম। ক্ষমাশীল লোক আমাদের সমাজে বিরাজ করলে সমাজের এত অবনতি হত না। আমরা সবাই ক্ষমার পরিবর্তে প্রতিবাদমুখর হই। তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে খুন, রাহাজানি, লুটতরাজসহ যা যা করা দরকার তা সবই দুর্বল লোকদের সাথে করি। আমাদের সুযোগ, সামর্থ্য ও শক্তিকে অন্যায়ভাবে পরিচালিত করি। যা মোটেই সমীচিন নয়। আমরা ক্ষমাপরায়ণ হতে পারলে সমাজ হবে আদর্শময়। তাই প্রতিটি মানুষের জন্য দয়া ও ক্ষমার গুণে গুণান্বিত হওয়া আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ক্ষমা করার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আর তোমরা যদি ওদের মার্জনা কর, ওদের দোষত্রুটি উপেক্ষা কর এবং ক্ষমা কর তবে জেনে রাখ আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সুরা আত তাগাবুন: ১৪)। আসুন আমরা ক্ষমাপরায়ণ হই। লিখক: এম. ফিল গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
আপনার মতামত লিখুন :