মিযানুর রহমান জামীল: সাহাবাদের পৃথিবী ছিল সভ্যতার মডেল, স্বপ্নের রাজ্য। সোনালী দিনের জীবন্ত সাক্ষি ও ইতিহাসের নির্মল অধ্যায়। সেই সময়ের দিন রজনীগুলো মানুষের অনুকূলে ছিল। যুগে যুগে তারা মানবতার জন্য চেতনাধর্মী শিক্ষা হেদায়েত প্রত্যাশি উম্মাহর বাতিঘর ছিলেন। তাদের মতো মানুষরাই রঙ্গীন দুনিয়ার ভোগবিলাসকে তুচ্ছ মনে করার কারণে দুনিয়া তাদের আক্রান্ত বা আকৃষ্ট করতে পারেনি। যদি কেউ নিজেকে জান্নাতি কাফেলার যাত্রী হিসেবে দাঁড় করাতে চায় তখন তার জন্য রাসূলের অনুসরণের মাধ্যমে সাহাবাদের পথ অবলস্বন করা অপরিহার্য। পৃথিবীর অনুকুল পরিবেশের পেছনে যারা যুগ যুগ ধরে অবদান রেখেছেন তারাই সত্যের মাপকাঠি সাহাবায়ে কেরাম। আজ সেই আলোকিত যুগটি হারিয়ে গেছে বলেই পৃথিবী হয়েছে বিপর্যস্ত। নেমে এসেছে আজাব ও গজব। কারণ পৃথিবী মানুষের আবাসস্থল। আর এই মানুষ পৃথিবী আবাদ করার মূল শক্তি। যখন মানুষে মানুষে দৃশ্য অদৃশ্য সংঘাত আর জুলুম অত্যাচার হানাহানী দৈনন্দিনের কাজে পরিণত হয় তখন অনায়াসেই ভেবে নিতে হবে পৃথিবীর আয়ু হুমকির মুখে। যেহেতু মানুষকে নিয়েই এই পৃথিবীর জন্ম। মানুষ পাঠানোর মাধ্যমেই দুনিয়া আবাদ করা হয়েছে। সেহেতু মানুষে মানুষে দ্বন্ধ-কলহ-বিবাদের অন্তরাল নীল নকশার কারণে ধরে নিতে হবে পৃথিবীর বয়সও সংক্ষিপ্ত হওয়ার উপক্রম।
এক সময় ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের দরদ ও ভালবাসা ছিল আমাদের জন্য অনুকরণীয় আর এই সময়ে এসে তা সম্পূর্ণ পরিবর্তন। এর দায়ভার অবশ্যই অপরাধী মানুষগুলোকেই নিতে হবে। মানুষের কৃতকর্মের কারণে সমুদ্রে ও স্থলে বিপর্যস্ত ছড়াইয়া পড়ে; যার ফলে তাদেরকে কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান যাতে তারা ফিরে আসে (সূরা রূমের)
আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগের ইতিহাসগুলো আমাদের জন্য অনেক বড় শিক্ষা। নাফরমানীর কারণে পৃথিবীতে অনেক বড় শক্তিশালী আধিপত্য এবং সাম্রাজ্যের অধঃপতন নেমে এসেছে যার কোনো চিহ্নও এখন বাকী নেই। আবার এমনো আছে হাজার বছর আগের খোদাদ্রোহী নাফরমান ফেরআউনকে মানুষের শিক্ষার জন্য সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। সেই অভিশপ্তের গায়ে যেমন এখনও পচন ধরেনি তেমনি সেই ইতিহাসও যুগ-শতাব্দি পেরিয়ে মানুষের জন্য শিক্ষা ও সতর্ক হুঁশিয়ারী হিসেবে এখনও জীবন্ত হয়ে আছে। এজন্য সূরা রূমের ৪২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, বল, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং দেখ তোমাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছিলো! তাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক।
বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মানুষকে দাওয়াদ দিতে গিয়ে তায়েফের ময়দানে রক্ত দিয়েছেন শুধু মাত্র দীনের স্বার্থে। উম্মত যদি নিজের পরিচয় ভুলে বিজাতীয় পরিচয় প্রদানে গর্বিত থাকে। লেবাস পোশাক শিক্ষা সংস্কৃতিতে থাকে ভিন্ন ধর্মাবলম্বিদের কালচার, তখন তার ধ্বংসের দ্বিতীয় পথ দরকার হয় না। আর শয়তান সব সময় লেগে থাকে বিধায় মানুষ পদে পদে ভুল করে। এজন্য যার পেছনে শয়তান আছে তার কোনো শত্রুর প্রয়োজন হয় না। দল, মত নির্বিশেষে পরকালীন উন্নতির জন্য আল্লাহর নির্দেশিত পথ অবলম্ভনই মুমিনের কাজ। পাপ কাজ বর্জন করার সাথে সাথে নেক কাজের প্রতি উৎসাহের মাধ্যমে জীবনকে নববী আদর্শের সঙ্গে সাজিয়ে তুলতে হবে। তবেই পৃথিবীর বৈরি আবহাওয়া থেকে নিষ্কৃতি লাভ সম্ভব। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :