শিরোনাম
◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের

প্রকাশিত : ২৭ মার্চ, ২০১৮, ০৯:৩৩ সকাল
আপডেট : ২৭ মার্চ, ২০১৮, ০৯:৩৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্যেও ভ্যাট দিতে হয়

ডেস্ক রিপোর্ট : নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধসহ প্রায় দুই হাজার পণ্যে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট অব্যাহতির কথা বলা আছে ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনে। এসব পণ্য দেশে উৎপাদন কিংবা আমদানির ক্ষেত্রেও ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু আইনের বিভিন্ন স্ববিরোধী ধারা ও ব্যাখ্যা জটিলতায় অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্যেও ভ্যাট দিতে হয় উৎপাদক ও আমদানিকারকদের।

জানা গেছে, আমদানি পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি নিতে কাস্টমসের ওয়্যারহাউজে সংরক্ষণ, সুপারশপে বিক্রিতে ভ্যাট আরোপ, উৎপাদনে অব্যাহতির জন্য একই কারখানায় সম্পূর্ণ পণ্য উৎপাদনসহ নানা শর্তের কারণে চূড়ান্তভাবে ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ মিলছে না এসব পণ্যে। বিষয়টি উঠে এসেছে এনবিআরের নিজস্ব পর্যবেক্ষণেও ।

বিদ্যমান ভ্যাট আইনের সমস্যা নিয়ে এনবিআরের এক পর্যালোচনায় বলা হয়, কোনো পণ্যই উৎপাদন থেকে বিক্রি পর্যন্ত সব স্তরে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা পাচ্ছে না। অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্যকে এক বা একাধিক পর্যায়ে ভ্যাট মওকুফের সুবিধা দেয়া হলেও পরবর্তীতে কোনো না কোনো পর্যায়ে এসে এ রেয়াত সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়।

ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ না মেলাসহ ভ্যাট আইনে ৩৩টি সমস্যা চিহ্নিত করেছে এনবিআর। এজন্য আইনের ৩০টি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে আগামী অর্থ বছরের বাজেটে।

এনবিআরের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, পণ্যের সরবরাহ চেইনের সব স্তরে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা থাকলে পণ্যের মূল্যে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ত। ভ্যাটের পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে সম্পন্ন হলে রেয়াত-সংক্রান্ত জটিলতা সম্পূর্ণ দূর হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে এনবিআরের সদস্য (ভ্যাট নীতি) মো. রেজাউল হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, বিদ্যমান আইনে ডাটাবেজ সংরক্ষণ সমস্যার কারণেই অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য হলেও কোনো না কোনো পর্যায়ে ভ্যাট আরোপ হয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের জন্য প্রথম স্তরে ভ্যাট দেয়ার পর পরের স্তরগুলোয় ভ্যাট চালান প্রদর্শনে অব্যাহতিপ্রাপ্তির সুযোগ রয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটা অনলাইন হলে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।

১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনের ১৪ ধারা অনুযায়ী এনবিআর বর্তমানে ১ হাজার ৮৭৪টি পণ্য ও সেবাকে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা দিয়েছে। এছাড়া বিশেষ আদেশের মাধ্যমে এ সুবিধা পাচ্ছে আরো ৮৯টি পণ্য। ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্যের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আমদানি পর্যায়ে ২৩৮টি পণ্যকে এ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। উৎপাদন ও আমদানি উভয় পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা পাচ্ছে ২২৮টি পণ্য। এছাড়া শুধু উৎপাদন পর্যায়ে এ সুবিধা ভোগ করছে ১ হাজার ২৩৩টি পণ্য। ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া আছে ১৬০টি ও সেবা পর্যায়ে ২৫টি পণ্য। উৎপাদন পর্যায়ে প্রায় দেড় হাজার পণ্যকে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হলেও এ-সংক্রান্ত আইনি ব্যাখ্যার জটিলতায় এ সুযোগ পাচ্ছে না অনেক উৎপাদনকারী।

ভ্যাট আইনের বিধি-৭ (৩খ)-এর ব্যাখ্যায় দেশে উৎপাদন পর্যায়ে পণ্যের ভ্যাট অব্যাহতির ক্ষেত্রে যে কারখানা থেকে সম্পূর্ণ পণ্য প্যাকেটজাত বা ফিনিশড প্রডাক্ট হিসেবে বের হয়, শুধু সেখানে অব্যাহতির কথা বলা হয়েছে। ফলে যেসব প্রতিষ্ঠান সেমি ফিনিশড পণ্য উৎপাদন করে, তাদেরকে ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়। দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই কোনো পণ্যের কাঁচামালের প্রথম ধাপ থেকে শেষ পর্যন্ত একই কারখানায় উৎপাদন করে না। ফলে ভ্যাট অব্যাহতি থাকলেও এ সুবিধা নিতে পারেন না ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, কর ও ভ্যাট আইনগুলো এমন জটিলভাবে সাজানো যে, এক জায়গায় অব্যাহতি পেলেও অন্য বিধির কারণে সে সুযোগ থাকে না। আইনে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হলেও আইনের ব্যাখ্যা এমনভাবে দেয়া হয়, যাতে এ সুবিধা নেয়া না যায়। এ সমস্যা দূর করার জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সবসময়ই সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়। এতে খুব বেশি কাজ হয় না। ভ্যাট আইন নিয়ে আমরা একটি প্রস্তাব দিয়েছি। এটি কার্যকর করলে সমস্যা অনেকটা কমবে।

এদিকে আমদানিতে বিপুলসংখ্যক পণ্যকে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হলেও আইনি বাধায় এটিও ঠিকঠাকভাবে পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনের ৯(১) ধারাবলে ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ নিতে চাইলে আমদানির পর পণ্যটি কাস্টমসের গোডাউনে সংরক্ষণের পর যাচাই-বাছাই শেষে বাজারজাত করতে হয়। কাস্টমসের গোডাউনে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আমদানিকারককে আগেই এটিভি হিসেবে ৪ শতাংশ কর পরিশোধ করতে হয়। কাস্টমসের যাচাইয়ে অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্যে রেয়াত নেয়ার সুবিধা থাকলেও পরবর্তীতে তা পান না অনেক ব্যবসায়ী। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানির পর তা ঢাকা কিংবা অন্য কোনো গোডাউনে রাখতে যাতায়াতসহ নানা ফি জটিলতার কারণে ভ্যাট অব্যাহতি না নিয়েই পণ্য ছাড় করেন আমদানিকারকরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য কাস্টমসের যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দেয়া হলে ব্যবসায়ীদের সময়ক্ষেপণের পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়। অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য সরাসরি বন্দর থেকে খালাসের বিষয়ে আমরা অনেক আগে থেকেই দাবি করে আসছি। ব্যবসা সহজ করার স্বার্থে এটি করা খুবই জরুরি।

আইনের বেশ কয়েকটি ধারার কারণে চূড়ান্ত পর্যায়ে উৎপাদন ও আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ পান না ভোক্তারা। এর মধ্যে একটি হলো ভ্যাট আইনের ১৪(১) ধারা। এ ধারায় টার্নওভার করের বিধানের কারণে নির্দিষ্ট স্ল্যাবে ভ্যাট দিতে হয় সব ধরনের পণ্য বিক্রেতাকে। অন্যদিকে ২০১৫ সালের অর্থ আইনের ১২৪ নং এসআরওর মাধ্যমে সুপার শপে কেনাকাটায় ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়। ফলে এক্ষেত্রে সব পণ্যেই ভ্যাট দিতে হয় ভোক্তাকে।

এছাড়া কাঁচামাল অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্যেও চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য হওয়ায় ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ পাচ্ছে না ভোক্তারা। ধরা যাক, কোনো পণ্যের কাঁচামালের ক্রয়মূল্য ৮০ টাকা এবং বিক্রয় মূল্য ১০০ টাকা। কিন্তু পণ্যটি উৎপাদনের পর বিক্রয় পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা না থাকায় ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট যোগ করে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে কাঁচামালে অব্যাহতিপ্রাপ্ত হলেও ভ্যাট দিতে হয় ওই পণ্যে। যদিও বিশ্বব্যাপী ভ্যাটের চর্চা হলো, অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্যের সব স্তরে ভ্যাট মওকুফ। সূত্র : বণিকবার্তা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়