শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ২৭ মার্চ, ২০১৮, ০৯:২৫ সকাল
আপডেট : ২৭ মার্চ, ২০১৮, ০৯:২৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থান নির্বাচনে চলছে কার্যক্রম

ডেস্ক রিপোর্ট : রূপপুরে প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ সফলভাবে শুরু করতে পেরে এখন দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে সরকার। রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে সফলভাবে উৎপাদন শুরু হলেই অদূর ভবিষ্যতে দ্বিতীয় কেন্দ্রটির কাজ শুরু হবে। এ লক্ষ্যে দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জমি অনুসন্ধান ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় প্রকল্পটির জন্য দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তিনটি স্থান সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে আমাদের সময়কে বলেন, সেই ’৬১ সালে নেওয়া উদ্যোগ এতদিন পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চাইলেই যখন তখন করা যায় না। এটি অনেক ব্যয়বহুল এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিষয়। আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সফলভাবে উৎপাদনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। প্রথমটি সফল হওয়ার পর যেন অদূর ভবিষ্যতে দ্বিতীয় কেন্দ্রটি করা যায়, সে লক্ষ্যে সুবিধাজনক স্থানে জমি নির্বাচনের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এটি খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ব্যয়সাধ্য ও সময়সাপেক্ষ বিষয়। প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাজ সঠিকভাবে চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দ্বিতীয় পরমাণুু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জমি বা স্থান নির্বাচনের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। তবে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাজ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় কেন্দ্রটির বিষয়ে ভাবা হতে পারে। সেটি এখন প্রাথমিক পর্যায়ের বিষয়

প্রসঙ্গত ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অভিজ্ঞতার আলোকে দেশের দ্বিতীয় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি করার ঘোষণা দেন তিনি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান নির্বাচনের সমীক্ষা শীর্ষক প্রকল্পটি সম্প্রতি অনুমোদিত হয়। বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয় ২০১৭ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হলো দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রাথমিকভাবে সাইট চিহ্নিতকরণে সাইটসার্ভে ও সাইট নির্বাচন পর্যায়ের কার্যক্রম সম্পাদন করা।

এ লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্রতীরবর্তী চরের ৮টি স্থানে সমীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। উপকূল অঞ্চলের পটুয়াখালীর পক্ষীয়ারচর, বরগুনার খোট্টারচর, নিদ্রারচর, টেঙ্গারচর, আলিসার মোড়, খুলনার চরহালিয়া, নোয়াখালীর বয়রাচর এবং ফেনীর মুহুরীরচর প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। এসব অঞ্চলের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে জনসংখ্যা, সিসমিক স্ট্যাবিলিটি, ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থান, বৈদ্যুতিক অবকাঠামো এবং যোগাযোগব্যবস্থার তথ্য সংগ্রহ করতে ‘বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান

নির্বাচনের সমীক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করে পরবর্তী কাজ চলছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে প্রযোজ্য গাইডলাইন অনুসারে এবং জাতীয় পর্যায়ে আইনি ও কারিগরি বিষয়সমূহ অনুসরণ করে দেশে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে সাইটসার্ভে ও সাইট নির্বাচন করা হবে। সার্ভে পর্যায়ে কার্যক্রম সম্পাদন করে প্রাপ্ত ফলের আলোকে একটি বা দুটি সাইটকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য চূড়ান্ত করা হবে। সাইট নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে হাইড্রোজিওলজিক্যাল, সিসমোলজিক্যাল, জিওলজিক্যাল, জিওটেকটোনিক, বন্যা ও সুনামি, মেটেরোলজিক্যাল বিষয়গুলো ছাড়াও পরিবেশদূষণ, মানবসৃষ্ট বিভিন্ন ঘটনার বিষয়ে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করার লক্ষ্য রয়েছে।

এদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত স্টিয়ারিং কমিটির একটি সভা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাথমিকভাবে শনাক্তকৃত পটুয়াখালীর গলাচিপার পক্ষীয়ারচর, বরগুনার তালতলীর খোট্টরচর ও নিদ্রারচর এই তিনটি স্থান সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। এখন পরবর্তী কার্যক্রম চলছে।

এদিকে অনেক প্রচেষ্টার পর গত বছর আর্থিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রূপপুর পারমাণুবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অর্থায়ন, নিরাপত্তা ও বাংলাদেশের সক্ষমতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনের আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে গত বছরের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ হবে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সমৃদ্ধ পৃথিবীর ৩২তম দেশ।

দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আনুষ্ঠানিক কাজ ‘ফার্স্ট কংক্রিট পৌরিং ডে’ বা এফসিডি বা ‘প্রথম কংক্রিট ঢালাই’ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে রাশিয়ার পরমাণু সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রকল্পটির কাজ এখন পুরোদমে এগিয়ে চলছে।

যদিও সর্বশেষ গত ৪ নভেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নকশা ও নির্মাণকাজের লাইসেন্স আণবিক শক্তি কমিশনকে (বিএইসি) প্রদান করেছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিএইআরএ)। ওই লাইসেন্স প্রাপ্তির পর থেকেই সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশকে বিশ্ব পরমাণু ক্লাব বা বিশ্ব নিউক্লিয়ার ক্লাবে যুক্ত হওয়ার ঘোষণা দেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, লাইসেন্স প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্ব পরমাণু ক্লাব’ (নিউক্লিয়ার নেশন)-এ যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ এই ক্লাবের ৩২তম দেশ। তিনি বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ এক অনন্য উচ্চতায় নিজেদের জায়গা করে নিল।

রাশিয়ার দেওয়া প্রকল্প ব্যয়ের ৯০ শতাংশ সরবরাহ ঋণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে রাশিয়ার উদ্ভাবিত সর্বাধুনিক ( থ্রি প্লাস জেনারেশন) ‘ভিভিইআর ১২০০’ প্রযুক্তির পারমাণবিক চুল্লি ব্যবহার করা হবে। ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি চুল্লি স্থাপন করা হবে রূপপুরে। ২০২৩ সালে এর প্রথমটি এবং পরের বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে দ্বিতীয়টি চালু হওয়ার কথা। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আর্থিক বিবেচনায় এটি দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। মোট ব্যয়ের মধ্যে ঋণ হিসেবে রাশিয়া ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা দেবে বলে চুক্তি হয়েছে। রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নির্মাণকাজ করছে রাশিয়ার রোসাটম।

বর্তমানে পৃথিবীর ৩১ দেশে ৪৫০ পারমাণবিক বিদ্যুতের ইউনিট চলমান আছে। এগুলোর মোট উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ৩ লাখ ৯২ হাজার মেগাওয়াট। বাংলাদেশ ছাড়া আরও ৬০টি ইউনিট বিভিন্ন দেশে নির্মাণাধীন রয়েছে, যার সর্বমোট ক্ষমতা প্রায় ৬০ হাজার মেগাওয়াট।

প্রসঙ্গত সরকার ২০৪১ সাল নাগাদ ৯৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সরকারের ভিশন বা দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হিসেবে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান ২০১৬ অনুযায়ী, ২০৪১ সালের মধ্যে ৬৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা ছিল। এখন সেটি ৯৪ হাজার মেগাওয়াট নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০৪১ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদনে মিশ্র জ্বালানি ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্যাস ও এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ৪৩ শতাংশ, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ৩২ শতাংশ, আমদানিকৃত বিদ্যুৎ হবে ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া তরল জ্বালানি বা জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ, পানি বা হাইড্রো বিদ্যুৎ ও নিউক্লিয়ার বা পারমাণবিক বিদ্যুৎ এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ হবে ১০ শতাংশ। সূত্র : আমাদের সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়