শিরোনাম
◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৬ মার্চ, ২০১৮, ০৬:৪০ সকাল
আপডেট : ২৬ মার্চ, ২০১৮, ০৬:৪০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডা. এম এ হাসান : একাত্তরের ২৫ মার্চের সকাল ১১টায় সকল অবাঙালি পাকিস্তানি সেনা অধিনায়কদেরকে রংপুরে ডাকা হয়। তাদের সবার হাতে অপারেশন সার্চলাইটের অর্ডারটা হস্তান্তর করা হয়। বাঙালিনিধনের এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল প্রতি ক্যান্ট হেডকোয়ার্টারে এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিতে। কোথাও কোথাও ২৫ মার্চ-এর আগেই পাকিস্তানি সেনারা আঘাত করে অথবা আঘাত করার ক্ষেত্র তৈরি করে।

’৭১-এর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মাস্টার মাইন্ড বা প্রধান পরিকল্পকদের 

মধ্যে ছিলেনÑ জেনারেল আব্দুল হামিদ খান, মেজর জেনারেল পীরজাদা, মেজর জেনারেল গুল হাসান, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খান, মেজর জেনারেল ওমর, জেনারেল ইফতেখার জানজুয়া, মেজর জেনারেল খাদিম হুসেইন রাজা, মেজর জেনারেল এ ও মিট্ঠা খান। এরা তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক ‘সেটআপ’ পরিবর্তন করে তা নতুন করে সাজাতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

তারা তাদের লক্ষ্য সামনে রেখে সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ২২ বেলুচ ও ১৩ ফ্রন্টিয়ার ফোর্সসহ, মিলিশিয়া এবং রেঞ্জার্সদের পূর্ব পাকিস্তানে এনে ইপিআর ও বাঙালি সেনাদের  স্থানগুলো পূরণ করে ফেলেন ১৭ মার্চের মধ্যে। এতে করে ২৫ মার্চ রাতে ২২ বালুচসহ অন্যান্য সেনা সদস্যরা বাঙালি সেনা ও ইপিআরদেরকে স্থানগুলো দখল করার চেষ্টা করে।

ঢাকার শহর ও শহরতলীতে আক্রমণের দায়িত্ব দেওয়া হয় ৫৭ ব্রিগেডকে। এর অধিনায়ক ছিলেন তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার আরবাব। ঢাকার বাইরে অন্যান্য এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর জেনারেল খাদিম হুসেইন রাজাকে। সম্মিলিতভাবে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সেনা অপারেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেনারেল টিক্কা খানকে।

তিনি ঢাকার সেকেন্ড ক্যাপিটালে অবস্থিত মিলিটারি হেডকোয়ার্টার থেকে সকল সামরিক কর্মকা- পর্যবেক্ষণ করছিলেন। ২৫ মার্চের কয়েকদিন পূর্বে মেজর জেনারেল মিট্ঠা খান এবং মেজর জেনারেল ইফতেখার জানজুয়াকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল অনেকটা মেজর জেনারেল খাদিম হুসেইন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খানের ঘাড়ের উপর বসে থাকার জন্য।

মেজর জেনারেল খাদিম হুসেইন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খান নেতিবাচক ভূমিকা নিলে তাদের স্থলাভিষিক্ত হতেন ওই দুজন।

২৫ মার্চ প্রতিরোধ সম্পর্কে নানা মত রয়েছে। অতিরঞ্জিত মিথ্যে ইতিহাস রয়েছে। প্রথম বচনে ব্যক্ত কথ্য ইতিহাস থেকে সত্যিকারের ইতিহাস বের করা অতি কঠিন। সত্যিটা হলোÑ ২৫ মার্চ রাতে পুলিশ ও ইপিআর বিশেষ করে ইপিআরদের সাহসিক প্রতিরোধ। এই সাহসিকতা ছড়িয়ে যায় সাধারণ জনগণের মাঝে।

যে কারণে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, চুয়াডাঙ্গা, দিনাজপুর ও রংপুরে সাধারণ মানুষ শুরুতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে ঢাকার প্রতিরোধকে অনুসরণ করে। চট্টগ্রামে প্রতিরোধ শুরু হয় ২৫ মার্চ রাতে ক্যাপ্টেন রফিকের নেতৃত্বে। আর রংপুরে সমতলের আদিবাসী সাঁওতালসহ হাজার হাজার মানুষ ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ করে ২৮ মার্চ ’৭১-এ। প্রায় ১ হাজার সাধারণ মানুষকে ক্যান্টনমেন্টে ঢুকিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা।

২৫ মার্চ রাতে জগন্নাথ হলে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারী মিলে প্রায় ৭০ জনকে হত্যা করা হয় এবং গণকবরে মাটিচাপা দেওয়া হয়। ওই ৭০ জনের মধ্যে ৪১ জন ছিল ছাত্র ও শিক্ষক। ৪১ জনের মধ্যে ১ জন ছিল মুসলমান। তিনি ছিলেন ড. মুনিরুজ্জামান। অধ্যাপক গোবিন্দচন্দ্র দেব-এর পালিত কন্যা রোকেয়া বেগমের স্বামী মোহাম্মদ আলী ও অধ্যাপক গোবিন্দচন্দ্র দেবকে একসঙ্গে মাটিচাপা দেওয়া হয়। পুরো ঢাকা শহর এবং পুরান ঢাকা মিলে ওই রাতে প্রায় ৭ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। ২৭ তারিখে আদমজী ও টঙ্গীসহ বৃহত্তমর ঢাকায় ওই সংখ্যাটি প্রায় ২৩ হাজারে পৌঁছে। অনেকের মতে ওই রাতে ৫০ হাজার লোককে হত্যা করা হয়।

কুমিল্লা, সিলেট, হবিগজ্ঞ ও নোয়াখালিতে ২য় ও ৪র্থ বেঙ্গল, চট্টগ্রামে ১ম বেঙ্গল, উত্তরবঙ্গে মেজর নাজমুল, দক্ষিণবঙ্গে মেজর জলিল, পশ্চিমে ৮ম বেঙ্গল মোড় ঘুড়িয়ে দেয় মুক্তিযুদ্ধের। তাদের অধীনস্থ সেনা ও শিষ্যগণ দেশের মাঝে কাজ করেছে। মুক্তিযোদ্ধারাই ২৫ মার্চ থেকে যুদ্ধটা এগিয়ে নিয়েছে ’৭১-এর ২২ নভেম্বর পর্যন্ত।

এরপর দৃশ্যপটে যৌথবাহিনী। মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধটা যেমন আসে বাঙালি সেনাদের পক্ষে তেমনি ঢাকার অভ্যন্তরে প্রথম প্রবেশ করে তারাই। এটা ঘটে ১৪ ডিসেম্বর ৭১-এ। ২য় বেঙ্গলের এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে ওই আক্রমণ চালায় লেখক (ডা. এম এ হাসান) নিজে। (সূত্র: মেজর জেনারেল মঈনুল হোসেন চৌধুরীর আত্মকাহিনী)

’৬৯-এ আইয়ুবের পতনের পরই পাকিস্তান সামরিক গোয়েন্দারা ’৬৯-এর আন্দোলন ও আইয়ুবের পতনের কারণ নিয়ে কাজ করছিল। অনেকের মতে ওই সময় সিআই-এর সঙ্গে পাকিস্তানি সামরিকজান্তার কথা হচ্ছিল। দৃশ্যপটে ইয়াহিয়া আগমনের আগেই পরিকল্পনা ঠিক করা হয়।

বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ ব্যাপক গণহত্যা ও গুমের বিষয়টি তখন থেকে সামরিক প্রভুদের মাথায়। সব হিসাব উল্টে দেয় পূর্ব বাংলার জনগণ। তাদের পথ চলার সঙ্গে সঙ্গে নানা মত, পথ ও স্রোতের মিলন এবং পথ পরিবর্তনই জনগণের স্বপ্ন ও সংকল্পকে পরিপক্ক করে। এ অবস্থায় কালজয়ী পথপ্রদর্শক ও শতাব্দীর নেতার মতোই ভূমিকা রাখলেন বঙ্গবন্ধু।

মিথ সৃষ্টিকারী মহানায়কের মতোই পথের দিশা দেন তিনি। তার স্বপ্নের সঙ্গে একাকার হয়ে যায় জনগণের স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা। মুক্তিযুদ্ধটা কোনো সূচিকর্ম ছিল নাÑ বাধাঁ পথে অনেক কিছু চলেনি, তারপরও শেষ হাসি হেসেছে মুক্তিসেনারা এবং এ দেশের জনগণ।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়