শিরোনাম
◈ ফরিদপুরে বাস-পিকআপ মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ১২  ◈ ইরানের হামলার জবাব দেবে ইসরায়েল: সেনাপ্রধান ◈ সৌদিতে কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা ◈ শ্রম আইন লঙ্ঘনের সাজাপ্রাপ্ত মামলায় স্থায়ী জামিন চাইবেন ড. ইউনূস ◈ ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছে কর্মজীবী মানুষ ◈ স্বাস্থ্যখাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী  ◈ কৃষি খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে তিন  বছরে সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ◈ বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.১ শতাংশ: এডিবি ◈ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বিজিপির ১৪ সদস্য ◈ ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলার তালিকা প্রকাশ করুন: মির্জা ফখরুলকে ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত : ২৬ মার্চ, ২০১৮, ০৫:২১ সকাল
আপডেট : ২৬ মার্চ, ২০১৮, ০৫:২১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আজও ভুলতে পারিনি ২৬ শে মার্চের সেই সকাল

কামরুল হাসান : আমার বাবার নাম মোহাম্মদ সাদেক। তিনি ইউনির্ভাসিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন। আমাদের বাসা ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে। ২৫ শে মার্চ রাতে জগন্নাথ হল ও সলিমুল্লাহ হল থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্থানেই গণহত্যা চালাতে চালাতে শেষ পর্যায়ে সকালের দিকে আমাদের গলিতে আসে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী। আমাদের বাসার সামনেই পতাকা ছিলো। আমার বাবাসহ পরিবারের সবাই অসহযোগ আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন।

তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সকল প্রকার মিছিল, মিটিং এ সবসময় উপস্থিত থাকতেন। এজন্য তিনি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কাছে টার্গেটেড ব্যক্তি হয়ে যান। ২৬ শে মার্চ ভোর ৫টার দিকে আমাদের বাসার মূল দরজায় প্রচন্ড লাঠির আওয়াজ শুনতে পাই।

সে সময় আমরা আনেক ছোট ছিলাম। আমি তখন ক্লাস টুতে পড়ি। ছোট হলেও আমার ওই দিনের সব ঘটনা স্পষ্ট মনে আছে। এক পর্যায়ে মনে হলো আমাদের বাসার দরজা ভেঙ্গেই ভেতরে ঢুককে। আমার বাবা তখন ভাবলেন যদি দরজা ভেঙ্গেই তারা বাসায় ঢুকে তাহলে বাসার সবাইকেই মেরে ফেলতে পারে। হানাদার বাহিনীকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেটারো তিনি চিন্তা করেছিলেন। পরে বাবা বাসার দরজা খুলে দিলেন।

দরজা খুলতেই অনেকগুলো হানাদার বাহিনী বাসায় ঢুকে পড়লো। বাবা তাদের কে বুঝানোর চেষ্টা করছিলেন কিন্তু তারা কোনো কথাই না শুনে বাবার বুকে গুলি চালিয়েছে। আমাদের বাসার সবাই কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ আগেই আমরা এক সাথে ছিলাম, কথা বলছিলাম। কিন্তু তখন আমার বাবার নিথর দেহ আমাদের বাসার মেজেতে পড়ে আছে। এরপর ব্রাশফায়ার করার জন্য আমাদের সবাইকে লাইনে দাড় করালো । আমরা সবাই আতঙ্কিত অবস্থায় দাড়ালাম।

তখন বাসায় আমার মামা এবং চাচাও আমাদের সাথে ছিলেন। হঠাৎ কি যেন মনে করে ওরা গুলি না করে আমাদের বললো আমরা আবার আসবো, এসে লাশ নিয়ে যাবো। আমার মামা ও চাচাকে বললো যে রক্ত পরিষ্কার করে রেডি থাকতে যাতে তারা আসলেই বাবার লাশ নিয়ে বের হয়ে যেতে পারে।

এখানে ওদের ইচ্ছা ছিলো লাশ নিয়ে গেলে আমার মামা ও চাচাকেও মেরে ফেলার। কিছুক্ষণ পর আবার এসে দেখে গেছে আমরা কী করছি। তখন আমার মামা আর চাচা পারিয়ে যাওয়ার চিন্তা করলো।

আমার পরিবারের সবাই তখন বাসা থেকে পালিয়ে আমার এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে উঠি। আমরা পালানোর পরও ওরা এসে আমাদের খোঁজ করেছিলো। কোনো রকম আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে ওই দিন পার করলাম। পরের দিন বাসায় গিয়ে আমার পরিবার বাবার দাফন কাজ শেষ করলো। আজও ভুলতে পারিনি ২৬ শে মার্চের সেই সকাল।

সেই দিনের ভয়াবহতা আজও মনে পরে কাঁদায়। আমাদের সামনেই কীভাবে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছিল। সেইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আরেকটি বুদ্ধিজীবী হত্যাকা- করেছিল পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষককে ওরা হত্যা করেছিল।
পরিচিতি : শহীদ মোহাম্মদ সাদেকের ছেলে/ মতামত গ্রহণ : মারুফ হাসান নাসিম/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়