শিরোনাম
◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের

প্রকাশিত : ২৬ মার্চ, ২০১৮, ০৫:০৩ সকাল
আপডেট : ২৬ মার্চ, ২০১৮, ০৫:০৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাঙালির শৃঙ্খল মুক্তির দিন

মিঠুন মোস্তাফিজ : মহান বিজয় দিবস আজ। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস জড়িয়ে আছে আজকের এই দিনটির সাথে। এদিনেই বিশ্বমানচিত্রে মাথা উঁচুর করে দাঁড়ায় বাংলাদেশ নামের নতুন এক রাষ্ট্র। পৃথিবীর ইতিহাসে জ্বলজ্বল করে ওঠে নতুন এক পতাকা।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে নয় মাসের সশস্ত্র জনযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে বিকেল সাড়ে চারটায় রেসকোর্স ময়দানে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে লাখো বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে এক অসমান লড়াইয়ে হার মানে পৃথিবীর শক্তিশালী এক সুদক্ষ সামরিক বাহিনী।

বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী ও তার দোসরদের দীর্ঘ নয় মাস ত্রিশ লাখ বাঙালিকে হত্যা, দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নেয়ার বিনিময়ে এদিন বিজয়ের লাল রক্তিম সূর্য উদিত হয়। যে অস্ত্র দিয়ে পাকিস্তানী হানাদাররা এ জাতির বুকে রক্তের বন্যা বইয়েছিল শেষ পর্যন্ত সেই অস্ত্র পায়ে ফেলে এক সাগর হতাশা ও পরাজয়ের গ¬ানি নিয়ে লড়াকু বাঙালির কাছে আত্মসমর্পণ করে। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের।

দীর্ঘ সাড়ে চার দশক পর একাত্তরের চিহ্নিত মানবতা বিরোধী যদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হবার ফলে স্বস্তি ও আনন্দ নিয়ে জাতি সশ্রদ্ধ বেদনায় স্মরণ করছে দেশের তরে প্রাণ বিলিয়ে দেয়া বীর সন্তানদের। এবারো জাতীয় স্মৃতিসৌধ জনসমুদ্রে রূপ নেবে, শহীদদের সম্মানে নিবেদিত হবে পুস্পর্ঘ্য।

১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বাংলার মানুষের ভোটে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনার আড়ালে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা।

নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহার কারণে বাংলার মুক্তিকামী মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালরাতে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সারাদেশে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ইতিহাসের বর্বরোচিত গণহত্যা শুরু করে। মধ্যরাতেই অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইপিআরের ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

পাক হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের আগ মুহুর্তে দেওয়া সে ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে দেশবাসীকে অনুরোধ জানিয়ে নির্দেশনা দেন। তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেস থেকে সে বার্তা ছড়িয়ে যায় দেশের সর্বত্র। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণায় সেদিনই ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা বাঙালি জাতি।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার এক আম্রকাননে শপথ নেয় স্বাধীন বাংলার অস্থায়ী সরকার। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত এ সরকারের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক কাঠামো লাভ করে।

চট্টগ্রামে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার বাণী সেই রাতেই সাইক্লোস্টাইল করে শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন। পরে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত বিবৃতিটি সর্বপ্রথম পাঠ করেন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান। এরপর ২৭ শে মার্চ তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

৯ মাস চলা মুক্তিযুদ্ধে একদিকে রচিত হয় ইতিহাসের মহান অধ্যায়, মুক্তিকামী বাংলার মানুষের বীরত্বগাঁথা; আরেকদিকে ছিল হানাদার বাহিনীর নির্বিচার হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজের কলঙ্কিত অধ্যায়।

জাতি আজ শৃঙ্খলমুক্তির দিনে গভীর শ্রদ্ধায় অবনত মস্তকে স্মরণ করছে স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের। শ্রদ্ধা জানাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী, স্বাধীনতার স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর অবর্তমানে যুদ্ধ পরিচালনাকারী তাঁরই যোগ্য সহকর্মী চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও কামরুজ্জামান এবং ৯ মাসে অসামান্য আত্মত্যাগকারী বাংলার অকুতোভয় বীর সেনানী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। পাশাপাশি দেশ আজ মেতে উঠবে স্বাধীনতার উৎসবের আমেজে।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট, গবেষক ও খন্ডকালীন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়