শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ২৫ মার্চ, ২০১৮, ০৯:০১ সকাল
আপডেট : ২৫ মার্চ, ২০১৮, ০৯:০১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মাছে ভরপুর দেশ

ডেস্ক রিপোর্ট : মাছে ভরপুর এখন গোটা দেশ। মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতায় জাদুকরি অর্জন এসেছে। দেড় যুগের ব্যবধানে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ছয় গুণ। গত ২০০০-০১ সালে দেশে মাছ উৎপন্ন হয় মাত্র ৬ লাখ ৫৭ হাজার মে. টন। গতবছর (২০১৬-১৭) মৎস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ লাখ ৫০ হাজার মে. টন। চাহিদার পরিমান ৪১ লাখ ৩০ হাজার। আর উৎপাদন হয়েছে ৪১ লাখ ৩৪ হাজার মে. টন। টার্গেটের তুলনায় ৮০ হাজার মে. টন মাছ বেশি উৎপাদন হয়েছে। মৎস্যখাত বিকাশের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামী ৫ বছর পর ২০২৩ সাল নাগাদ মাছ উৎপাদন বার্ষিক ৫০ থেকে ৫৫ লাখ মে. টনে উন্নীত হবে। দশ বছরে পৌঁছাবে দ্বিগুণের কাছাকাছি। বর্তমানে দেশে মৎস্য-আমিষের মাথাপিছু দৈনিক গড় চাহিদা ৬০ গ্রাম। সেখানে আজ খাদ্যগ্রহণে মাছ থাকছে ৬২.৫৮ গ্রাম। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গত ফেব্রæয়ারি মাসে বাংলাদেশকে মৎস্যসম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ ঘোষণা করেছে। সরকারি-বেসরকারি সূত্রগুলো এ তথ্য জানায়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, আয়তনে ছোট হলেও বাংলাদেশ মাছ আহরণে সারাবিশ্বে চতুর্থ ও চাষে টপ ফাইভে আছে। মৎস্যখাত-উপখাতে এক কোটি ৭৮ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। বার্ষিক লেনদেন এক লাখ কোটি টাকারও বেশি। গতবছর ৬৮ হাজার ৪৫৭ মে. টন মৎস্যপণ্য রফতানি বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় ৪ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। তবে ইলিশসহ অন্যান্য মৎস্য চোরাপথে যাচ্ছে বিরাট অংশ। জিডিপি’র ৪.৪১ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপির এক-চতুর্থাংশ (২৩.৫৬ শতাংশ) মৎস্যখাতের অবদান। যার কৃতিত্ব মাঠের মাছচাষিদের। দেশজুড়ে গ্রামে-গঞ্জে ব্যক্তি, সামাজিক ও সমবায়ভিত্তিক মাছচাষ বিস্তৃত হচ্ছে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও চীনের উদ্ভাবিত উফশী বিভিন্ন মাছের জাত এদেশে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। হাইব্রিড মৎস্যবীজ রেণু পোনা ছেড়ে হরেক জাতের মাছ চাষে ঘটছে নীরব বিপ্লব। মিঠাপানির ২৬৪ জাতের মাছ চাষ ও আহরণ হচ্ছে। পুকুর-দীঘি, মুক্ত জলাশয়, খাল-বিল-হাওড়-বাওড়, ঘের, নদী-জলাশয়ে, ভাসমান খাঁচায়ও হচ্ছে মাছচাষ। বেকার যুবকরা আত্মকর্মসংস্থানে বেছে নিয়েছেন মাছচাষকে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণতা জাতির বড় অর্জন। সঠিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকাÐকে পৌঁছে দিয়েছি মাঠে পর্যায়ে। আমি প্রায় সময়ই মাঠে থাকি। মাছচাষিদের সঙ্গে থেকে উদ্বুদ্ধ করছি। মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য রেখে প্রাকৃতিক, চাষের ক্ষেত্র ও সাগরে বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রæত সমাধান করছি। খাল-জলাশয় খনন, নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রয়োগ, খামারিদের প্রশিক্ষণ, নিবিড় ও সামিিজক মৎস্য ব্যবস্থাপনা, বিপন্ন প্রায় প্রজাতিগুলো সংরক্ষণ, অভয়াশ্রম বৃদ্ধি, মাছের খাদ্য ও বালাইনাশক ওষুধ সরবরাহ করে সবরকম উৎসাহ দিচ্ছে সরকার। ফলে মাছচাষ ও উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ও চাহিদা অতিক্রম সম্ভব হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে দেশের পানিসীমায় মৎস্যসম্পদের জরিপ-গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে ‘আরভি মীন সন্ধানী’ জাহাজযোগে। মন্ত্রী বলেন, ‘মাছে-ভাতে বাঙালী’ কথাটার তাৎপর্য হচ্ছে খাদ্য হিসেবে মাছ অতিপ্রয়োজনীয়। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আমরা আন্তরিক।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ গোলজার হোসেন ইনকিলাবকে জানান, প্রাণিজ আমিষের বড় উৎস হিসেবে মাছ সুলভ হয়ে উঠেছে। উন্নতির এই ধারা অব্যাহত রাখা একটি চ্যালেঞ্জ। মৎস্যখাতে সরকারের আরও সুনজর দরকার। পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, কার্প প্রভৃতি মাছের উৎপাদন খরচ আর বাজারদর প্রায় কাছাকাছি। মাছের খাবার (ফিশ মিল) সুলভ করতে হবে। এরজন্য ভূট্টা ও গমের চাষ বৃদ্ধি পেলে খরচ সহনীয় হবে। মাষচাষে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ভূট্টা ও গমের আবাদ বাড়ানোর বিষয়ে স¤প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া মাছের উচ্চ পুষ্টিযুক্ত ও বিকল্প খাবার, চাষের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে গবেষণা চলছে। ফলাফল আশাব্যঞ্জক।
এদিকে মাছচাষ ও আহরণ পর্যাপ্ত হওয়ার সুবাদে এখন প্রতিকেজি মাত্র এক-দেড়শ টাকায় মিলছে জ্যান্ত মাছ। শহর ও শহরতলীর অলিগলি থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের হাট-বাজারে দেখা যায়, খাঁচায় পলিথিনে পানি ভরে অথবা প্লাস্টিকের বড় গামলা ও বালতিতে জীবিত তেলাপিয়া, নাইলোটিকা, কার্প, পাবদা, সিলভার কার্প, রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ, কৈ, মাগুর, সরপুঁটি, পাঙ্গাস, মিঠাপানির কোরালসহ হরেক জাতের মাছ সহনীয় দামে বিক্রি হচ্ছে। ইদানীং অভিজাত হোটেল-রেস্তোঁরা ফাস্টফুড শপে মাছের তৈরি বিচিত্র খাদ্যসামগ্রী যেমন- ফিশ ফিঙ্গার, ফিশবল, কাটলেট, অনথন, গ্রিল, কাবাব, শর্মা, বিবিকিউ-ফিশের প্রতি তরুণশ্রেণি আকৃষ্ট হয়েছে। ফরমালিনসহ বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো কিংবা পচাগলা বর্জ্য-আবর্জনার ভাগাড়ে চাষ করা ভারতীয় অখাদ্য রুই-কাতলা মাছকে ক্রেতারা ‘গুডবাই’ জানিয়েছেন। লাফিয়ে ওঠা জ্যন্ত তরতাজা দেশীয় মাছ কিনছেন দেখেশুনেই। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোঃ আবুল কালাম জানান, গরু-খাসির গোশতের মূল্যবৃদ্ধি ছাড়াও ‘রেডমিটে’র ক্ষতিকর দিক রয়েছে। মাছে পুষ্টিগুণ সেই তুলনায় অনেক বেশি। ইলিশ হার্ট ভাল রাখে। ফলে স্বাস্থ্য সচেতন ভোক্তারা খাবার তালিকায় মাছের উপর বেশি ভরসা রাখছেন।
গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশের ইলিশ মাছ জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতীয় মাছ ইলিশে বাড়ছে বড়ধরনের আশার ঝিলিক। রূপালী ইলিশ আহরণ ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। চার দশকের ব্যবধানে ইলিশের উৎপাদন আড়াই গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত ২০০৭-০৮ সালে ইলিশ আহরণ ছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার মে. টন। ১০ বছরের নিবিড় প্রচেষ্টায় ইলিশ উৎপাদন ২ লাখ টন (৬৭ শতাংশ) বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৯৬ হাজার মে. টন। দেশে উৎপাদিত মাছের ১২ শতাংশই ইলিশের অবদান। যার বাজার মূল্য প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী জানান, মন্ত্রণালয় নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে ইলিশ এবং সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ রক্ষায় একযোগে কাজ করছে। জাটকা ও মা-মাছ নিধন রোধ, প্রজনন মওসুমে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ রেখে ১৮টি জেলায় ৮৭ উপজেলার প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার জেলে পরিবারকে চালসহ ভিজিএফ খাদ্য ও বিকল্প কাজে সহায়তা প্রদান, জনসচেতনতা বৃদ্ধির ফলে উৎপাদনে সাফল্য এসেছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের বলিষ্ঠ আইনি ফয়সালায় বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের পানিসীমার আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে। এরফলে বঙ্গোপসাগরের এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার অর্থাৎ আরেকটি বাংলাদেশের প্রায় সমআয়তনের বিস্তীর্ণ পানিসীমায় বিচরণশীল ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি ও ৪৭৫ প্রজাতির মৎস্য আহরণে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা জানান, সামুদ্রিক মাছ শিকার চলছে ভারসাম্যহীন অবস্থায়। গত ২৮ বছরে বঙ্গোপসাগরে মৎস্যসম্পদ জরিপ গবেষণা পরিচালনা করা হয়নি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. হোসেন জামাল ইনকিলাবকে জানান, সমুদ্র উপকূল অগভীরে (আর্টিশনাল) মৎস্য আহরণে চাপ পড়ছে অতিবেশি। অথচ গভীরতলে (পেলাজিক) মাছ শিকার হচ্ছে খুবই কম। সেখানে ২০/৪০ বছর বয়সী ৩শ’ কেজি ওজনের টুনা জাতীয় অর্থকরী মাছ আহরণ তেমন হচ্ছে না। বিদেশি গবেষকদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, গভীর বঙ্গোপসাগরে টুনা জাতীয় মাছের প্রাচুর্য আছে। টুনা আহরণে নজর দেয়া দরকার। জলবায়ু পরিবর্তনের সুদূরপ্রসারী প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে মৎস্য ও জীবজগতের খাদ্য-শৃঙ্খল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি। এদিকে রূপচান্দা, কোরাল, কালাচান্দা, লাক্ষ্যা, পোয়া, ছুরি, মাইট্টা, সুন্দরী, কইকোরাল, পোয়া, সুরমা, বাইলা, চিংড়ি ও লবস্টারসহ হরেক জাতের সামুদ্রিক মাছের প্রজনন, বিচরণশীল, আহরণ কমে গেছে। বাজারে দামও চড়া। অপরদিকে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের ফলে মিঠাপানি এবং উপকূলে চিংড়িসহ বিভিন্ন ধরনের চাষের মাছের ক্ষেত্রে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে গেছে দেশ। প্রাচীনকাল হতেই প্রচলিতÑ ‘মাছে-ভাতে বাঙালী’। ‘মৎস্য মারিব খাইব সুখে’। যা বাস্তবে ধরা দিয়েছে। কিন্তু দেশের শত শত নদ-নদী, উপনদী ও শাখানদীর মূল উৎসস্থল উজানভাগে ভারতের পানি আগ্রাসন বন্ধ হলে মাছে-ভাতে হতো বাঙালীর বিপ্লব। তাছাড়া মাছের বিপ্লব সফলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি, সমস্যা-সঙ্কট আজও রয়ে গেছে। স্থানীয় ফিশ মিল উৎপাদন স্বল্পতা, বিদেশ থেকে বিভিন্ন উপকরণ আমদানি খরচ, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি বেশি হওয়ায় উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। মাছের খাদ্য সুলভ নয়। ফলে খরচ পোষাতেই চাষিরা দিশাহারা।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগীয় প্রধান ড. শেখ আহমদ আল-নাহিদ ইনকিলাবকে বলেন, কৃষি-খামার শিল্পই হচ্ছে টেকসই খাত। এরমধ্যে মৎস্যখাত সম্ভাবনাময়। জনগণের খাদ্য নিরাপত্তায় এ খাত এগিয়ে। চিংড়ি ছাড়াও এখন বিভিন্ন জাতের চাষের মাছ রফতানি হচ্ছে। ‘ডাল-ভাত কর্মসূচি’র কথা একসময় বলা হলেও আজ ভাতের পাতে মাছই সুলভ। গরিব পরিবারেও সপ্তাহে অন্তত ৩/৪ দিন মাছ খাওয়া হয়। জাতির জন্য আমিষ ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছে মাছ। উৎপাদন বৃদ্ধির ফলেই তা সম্ভব হচ্ছে। সিভাসু সূত্র জানায়, দেশের বৃহত্তম কর্ণফুলী মৎস্যহ্রদে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মালয়েশিয়ার আদলে বিশেষায়িত জাহাজযোগে জরিপ ও গবেষণা পরিচালনা করা হবে। এরজন্য প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নারায়ণগঞ্জের শিপইয়ার্ডে জাহাজ নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে।
মাছচাষ প্রসঙ্গে আলাপকালে মিরসরাই উপজেলার বারৈয়ারহাট, ফটিকছড়ির তারাখোঁ, চট্টগ্রাম শহরের উত্তর কাট্টলী, কক্সবাজারের পেকুয়ার মৎস্য খামারি মোঃ বেলাল, নিজাম উদ্দিন, শহীদুল হক ও মানিক জানান, মাছচাষ ও এর পাশাপাশি ফল-ফসল, হাঁস-মুরগির মিশ্র খামার তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। বিশেষত প্রতিদিন আড়তদার ও বেপারীরা অগ্রিম অর্ডার দিয়ে খামারে এসেই মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। সরবরাহ করে কুলিয়ে উঠা যায় না। তবে মাছের খাবারের (ফিশ মিল) মূল্য হ্রাস করা জরুরি। আয়-ব্যয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছি না।
ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান ও বিশেষ সংবাদদাতা মোঃ শামসুল আলম খান জানান, ময়মনসিংহে মাছচাষে রূপালী বিপ্লবের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মাছের খাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে বিপাকে মৎস্যচাষিরা। লোকসানের শঙ্কায় আছেন অনেকে। মাছের খাদ্যমূল্য কমাতে তারা সরকারের আকর্ষণ করেছেন। মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ জেলায় মাছের চাহিদা এক লাখ ১৬ হাজার মে. টন। উৎপাদন হচ্ছে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৮২৬ মে. টন। বাড়তি মাছ বাজারজাত করা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। স্থানীয় চাষিরা জানান, সরকারি সহযোগিতা পেলে এ অঞ্চলে আরও চার গুণ মাছ উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে মাছ চাষে নানা সমস্যার কারণে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও আসল নিয়ে ঘরে ফিরতে হচ্ছে। মাছের খাদ্য তৈরির কারখানা, হ্যাচারী, চাষি ও ব্যবসায়ীর পাশাপাশি মাছের খাবার ও রেণু ক্রয়ের হার দিন দিন বাড়ছে। প্রতিষেধকের ব্যবহার, শ্রমিক নিয়োগ ও বিনিয়োগ বাড়ছে। উৎপাদিত মাছের দুই তৃতীয়াংশ বিক্রি হচ্ছে আড়তদারদের কাছে। জেলায় চলতি বছরে ২৭ হাজার ৩২ হেক্টর জমিতে মাছ চাষ হয়েছে। ৯ হাজার ৮৮২ হেক্টর জলমহাল রয়েছে ১১৬২টি এবং খাল-বিল আছে ৩৪০টি। মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, চাষির সংখ্যা বাড়ছে। মৎস্য চাষে ময়মনসিংহে ঋণ নেই। চাষিদের দাবি, বিদ্যুৎ বিল ও জমির খাজনা রেইট বাণিজ্যিক হারে না করে কৃষি রেইটে করা হোক।
খুলনা ব্যুরো প্রধান আবু হেনা মুক্তি জানান, খুলনাঞ্চলে নানা প্রতিকূলতা সত্তে¡ও মৎস্যখাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দু’মাস আগে খুচরা বাজারে চিংড়ির দরপতনে প্রান্তিক চাষিরা বিপাকে পড়েন। তবে গত এক মাসে সে ধাক্কা কেটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যবৃদ্ধি ও রফতানির ফলে লাভবান হচ্ছেন মৎস্যচাষিরা। সুন্দরবন অঞ্চলে ইলিশসহ সাদা মাছ আহরণে খুশি জেলেরা। এ অঞ্চলে ইলিশের আহরণ বৃদ্ধি ও সুন্দরবন নদ-নদী নির্ভর সাদা মাছ সহজলভ্য হওয়ায় আমিষের চাহিদা মিটছে। বৃহত্তর খুলনা মূলত চিংড়ি চাষের প্রধান এলাকা। গলদা ও বাগদা চিংড়ির পাশাপাশি হরেক জাতের মাছ চাষ, নদ-নদী থেকে প্রাকৃতিক মাছ আহরণ করে এ অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠি জীবিকা নির্বাহ করে। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় হাজার হাজার ঘেরে উৎপাদিত চিংড়ি ও বিভিন্ন জাতের মাছ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অবদান রাখছে। খুলনার কসমস সী ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনির হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে গলদার উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। রফতানিমুখী চিংড়িতে বাগদার চেয়ে গলদা চাষে ঝুঁকি কম থাকায় চাষিরা এবার বেশি আগ্রহী। লোনা ও মিঠাপানির পাশাপাশি পুকুর, ডোবা, বিলসহ যে কোনো জলাশয়ে গলদা চাষযোগ্য।
সাতক্ষীরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার আবদুল ওয়াজেদ কচি জানান, মাছের জেলা সাতক্ষীরায় গলদা ও বাগদা চিংড়ি থেকে হরেক জাতের মাছ উৎপাদন হচ্ছে। নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাওড়সহ সাতক্ষীরার সর্বত্র হয় মাছ চাষ। জেলার চাহিদা মিটিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অবদান রাখে এই মৎস্যসম্পদ। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরায় মাছের বার্ষিক চাহিদা ৪২ হাজার ২শ ৯৩ মে. টন। উৎপাদন হচ্ছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৫শ ১৬ মে. টন মাছ। ফলে বছরে ৮৯ হাজার ২শ ২৩ মে. টন মাছ রফতানি ও দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণ করছে। মৎস্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত ও বিপণনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে জেলার লক্ষাধিক মানুষ। ২০১৭ সালে জেলার ৫৫ হাজার ১শ ২২টি ঘেরে ২৭ হাজার ১শ ৪২ মে. টন বাগদা ও ১১ হাজার ৬শ ৩৮টি ঘেরে ৬ হাজার ১০৬ মে. টন গলদা চিংড়ি উৎপাদন হয়। যা চলতি বছর ৩৪ হাজার ৭শ ৮৫ মে. টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আশাশুনির শোভনালী গ্রামের মৎস্যচাষি উদয় মন্ডল বলেন, আমরা মাছ চাষে ভতুর্কি পাচ্ছি না। বিদ্যুতের মূল্য দিতে হয় বাণিজ্যিক রেটে। সবক্ষেত্রে আমরা বৈষম্যের শিকার। জেলা মৎস্য অফিসার শাহিদুল ইসলাম সরদার বলেন, মৎস্য উৎপাদনে সাতক্ষীরা একটি সম্ভাবনাময় জেলা। মৎস্যচাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সেবা প্রদানে জনবল বাড়ানো, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতসহ খামারিদের ভর্তুকি দিয়ে উৎপাদন আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব।
কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার সাদিক মামুন জানান, জেলায় বছরে মাছের চাহিদা সাড়ে ৯৯ হাজার মে. টন। উৎপাদন হচ্ছে ২ লাখ ১০ হাজার ৬৪২ মে. টন মাছ। চাহিদার দ্বিগুণ মাছ উৎপাদনের ফলে এখানকার ৫০ লাখ জনগোষ্ঠীর আমিষের চাহিদা মিটিয়ে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থায় সিংহভাগ চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন ও তরুণ-যুব কর্মসংস্থানে প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৬টি উপজেলার ৮৪ হাজার ৪২৪টি পুকুরে প্রতি মৌসুমে ১ লাখ ৫ হাজার ৭৩৮ মে. টন মাছ উৎপাদন হয়। প্লাবন ভূমি, খামারে লক্ষাধিক মে. টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। মৎস্য অধিদপ্তর কুমিল্লা অঞ্চলের সহকারি পরিচালক মো. শওকত আলী জানান, মৎস্য উৎপাদনে সারাদেশে কুমিল্লা বিশেষ অবস্থানে রয়েছে। মাছচাষ ও রোগ প্রতিরোধে চাষিদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হয়। কুমিল্লার দাউদকান্দি, মুরাদনগর, মেঘনা, হোমনা, তিতাস, চন্দিনা উপজেলার ৭০টি প্লাবন ভূমিতে প্রায় দেড়শো প্রকল্পে প্রতি মৌসুমে উৎপাদন হয় প্রায় ৪৫ হাজার মে. মাছ। বাংলাদেশে দাউদকান্দিতেই প্রথম প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ শুরু হয়। এখন সারাদেশে তা জনপ্রিয়। সূত্র : ইনকিলব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়