শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৫ মার্চ, ২০১৮, ০৭:৪৪ সকাল
আপডেট : ২৫ মার্চ, ২০১৮, ০৭:৪৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কোটা নিয়ে ভোটের রাজনীতি

ডেস্ক রিপোর্ট  : কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানীতে চাকরি প্রত্যাশিদের মানববন্ধন -ফাইল ছবিসরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি সংস্কার নিয়ে আন্দোলন হয়েছে বহুবার। কোটা সংস্কারের চেয়ে দেশের বুদ্ধিজীবী মহল ও সরকারি কর্মকমিশনও বারবার লিখিত পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু সব সরকারই জনপ্রশাসনের কথা চিন্ত্মা না করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত্ম নিয়েছে ভোট প্রাপ্তির আশায়। ফলে দেশ স্বাধীনের ৪৭ বছর পরও কোটা পদ্ধতির সংস্কার হয়নি।
তাই বছরের পর বছর ধরে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশের লাখ লাখ মেধাবী শিক্ষার্থী বঞ্চিত হয়ে আসছেন। এতে জনপ্রশাসন ক্রমেই মেধাশূন্য হয়ে পড়ছে। এদিকে কোটার কারণে সরকারি বিভিন্ন অফিসে ১৪ লাখের বেশি পদ শূন্য থাকার পরও দেশে প্রায় ২৭ লাখ শিক্ষিত বেকার রয়েছেন।

কোটা সংস্কারের দাবিতে এবার আন্দোলন চলছে সারাদেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। অনেক কোটা প্রার্থীও সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে। জনপ্রশাসনেরও প্রায় শতভাগ কর্মকর্তা কোটা সংস্কার চান। এরপরও সরকার ভোটের কথা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত্ম নিয়েছে সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগে কোটার কোনো পদ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা না গেলে, সে সব পদ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক  বলেন, দেশের সব সরকারই দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের চেয়ে স্বল্পমেয়াদি স্বার্থকেই বেশি গুরম্নত্ব দেয়। ফলে এই কোটা পদ্ধতির সংস্কার জরম্নরি হলেও তা করা হয়নি। এ ছাড়া সব দলের সরকারই মেধার চেয়ে রাজনীতিকে বেশি প্রাধান্য দেয়। এ দেশে মেধার প্রাধান্য কখনই পায়নি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রেও মেধার চেয়ে রাজনীতিকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। ফলে রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক কারণেই কোটার সংস্কার করেনি। আর এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত্মের ব্যাপার। তাই রাজনৈতিক সরকারকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত্ম নিতে হবে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান  বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কার এক প্রকার হয়ে গেছে। ফলে আপাতত এ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই সরকারের। মোজাম্মেল হক খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ খুবই সেনসেটিভ ইসু্য, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত্ম নেয়া অনেক কঠিন। সম্প্রতি যে সিদ্ধান্ত্মটি হয়েছে সেটি প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিয়েছেন। পরবর্তী কোনো সিদ্ধান্ত্ম আসলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেই আসবে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক নির্দেশনা হলো কোনো পদ ফাঁকা রাখা যাবে না। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী তারা কাজ শুরম্ন করেছেন। এ নিয়ে সচিব কমিটির সভাতেও আলোচনা হয়েছে। শূন্যপদ দ্রম্নত পূরণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবও নির্দেশনা দিয়েছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিধি) আবুল কালাম আজাদ  বলেন, কোনো সুবিধা একবার দেয়া হলে সেটি বাদ দেয়া অনেক কঠিন। আর মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত্ম নেয়া আরও কঠিন। এমন সেনসেটিভ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত্ম নিতে পারে না। এটি সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিষয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সঙ্গে জনপ্রশাসনের বেশিরভাগ কর্মকর্তা একমত। এরপরও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত্ম নেয়া হবে কি না এমন প্রশ্নে জবাবে আবুল কালাম আজাদ বলেন, কারো চাওয়ার উপর এ সব বিষয় নির্ভর করে না। এটি সরকারের রাজনৈতিক বিষয়, রাজনৈতিকভাবেই এর সিদ্ধান্ত্ম হবে। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা শুধু এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে পারেন।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা  বলেন, বিষয়টি 'স্পর্শকাতর' বিবেচনায় কোনো সরকারই কোটাব্যবস্থা সংস্কার করে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে সুদূর নয়, নিকট ভবিষ্যতেই প্রশাসন মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। ক্রিকেটে কোটা না থাকায় বাংলাদেশের ক্রিকেট তরতরিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। সামরিক চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা না থাকার কারণেই আমাদের সেনাবাহিনী সারাবিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছে। যার কারণেই জাতিসংঘ শান্ত্মিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সবচেয়ে বেশি দক্ষ। আর বেসামরিক চাকরিতে কোটা প্রথার কারণে জনপ্রশাসন মেধা শূন্যতায় ভুগছে।

তবে চলমান কোটা পদ্ধতি নিয়ে প্রতিদিন শত শত তরম্নণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সোচ্চার। তারা সবাই কোটা পদ্ধতিকে মেধাবী তরম্নণদের জন্য অভিশাপ বলে মনে করছেন। তারা এই কোটা পদ্ধতির সংস্কার চান। কোটা সংস্কার নিয়ে শতাধিক তরম্নণ-তরম্নণী লেখেছেন- 'যতদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কার না করবেন ততদিন আন্দোলন চলবে। প্রধানমন্ত্রী তরম্নণ প্রজন্মের কথা বিবেচনা করে আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেবেন।'

পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এসএমএ ফয়েজ  বলেন, তিনি যখন পিএসসির চেয়ারম্যান ছিলেন তখন মুক্তিযোদ্ধার কোটা উপযুক্ত প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা যাচ্ছিল না। মুক্তিযোদ্ধাও কম পাওয়া যাচ্ছিল। বিষয়টি সরকারকে অবহিত করলে তারা মুক্তিযোদ্ধার সন্ত্মানের ভেতর থেকে পূরণের পরামর্শ দেন। তখন পিএসসি থেকে বলা হয়েছিল, এতে উত্তর প্রজন্মে স্পষ্ট দ্বিধাবিভক্তি তৈরি হবে। আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্ত্মানরাও বঞ্চিত হবে- যেহেতু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার অনেকের সনদ নেই এবং অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাও রয়েছে। তিনি বলেন, মেধার স্বীকৃতি বড় স্বীকৃতি। এর বঞ্চনা চিন্ত্মার খোরাক জোগায়।

এর পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্ত্মানদেরও না পাওয়ায় নাতি-নাতনির কোটা চালু করা হয়। আর স্বাধীনতার পর যখন কোটাব্যবস্থা যখন চালু হয়, তখন কোটার প্রার্থী পাওয়া না গেলে পদ শূন্য রাখার বিধান ছিল না। আপনা থেকেই নিয়োগকর্তারা সেই মর্মে সিদ্ধান্ত্ম নিতেন। কিন্তু নির্দয় সিদ্ধান্ত্মটি ২০১০ সালে নেওয়া হয়েছে যে কোটার প্রার্থী পাওয়া না গেলে পদ শূন্য পড়ে থাকবে। বঞ্চিত হবে সেবাগ্রহীতারা। অথচ মেধাতালিকায় থেকে যেত হাজার হাজার যোগ্য প্রার্থীরা। এ সিদ্ধান্ত্মের কারণে ২৮ থেকে ৩৪তম বিসিএস পর্যন্ত্ম এসব কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ার কারণে ৫ হাজার ৬০৬টি পদ খালি রয়েছে গেছে। এতো পদ খালি থাকার পরও বিসিএস পাশ করেও নিয়োগ পাননি কয়েক হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী। ব্যাংক নিয়োগের ক্ষেত্রেও শত শত পদ ফাঁকা রয়েছে। তবে কোটা প্রার্থীদের মধ্যে যারা একটু বেশি মেধা তারা একাধিক চাকরি পেয়ে যান। পরে তারা এক চাকরি ছেড়ে অন্য আর এক চাকরিতে যোগদান করেন। এতে রাষ্ট্রেরও অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

এরমধ্যে আইন লঙ্ঘন করে ৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ফলাফল দেয়া হয়েছিল কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে। পরে এই ফলাফল বাতিলের জন্য ২০১৩ সালের জুলাই মাসে আন্দোলন শুরম্ন করেন হাজার হাজর মেধাবী শিক্ষার্থী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, কোটা নিয়ে যারা সহিংস আন্দোলন করছে তাদের পিএসসি-র অধীনে কোনো চাকরি হবে না। আর সেই সুযোগে বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আগামী দিনে চাকরি হবে মেধার ভিত্তিতে। উভয় সরকারই তখন বেকারদের আবেগকে কাজে লাগান ভোট প্রাপ্তির আশায়।
এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে। তিনি প্রতিবন্ধী, তার জন্য কোটাও আছে। এরপরও তিনি কোটা সংস্কারের বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। প্রতিবন্ধী মাহমুদুল হাসানের কোটা আছে এরপরও কোটা সংস্কারের আন্দোলনে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হয়ে এই ধরনের বৈষম্য মেনে নিতে পারছি না। দেশে যে হারে বেকার রয়েছে সে অনুপাতে চাকরি নেই তার উপর আবার কোটার বৈষম্য। তিনি আরো বলেন, মেধার মাধ্যমে চাকরি পেলেও কোটার কারনে মানুষ আমাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্যর দৃষ্টিতে দেখে। আমি মনে করি মেধার ভিত্তিতেই চাকরি হওয়া উচিত।

এদিকে বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯ (১) ধারায় বলা আছে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে। তবে ২৯ (৩) (ক) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রসর অংশকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভের উদ্দেশ্যে তাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করতে পারে। নাগরিকদের অনগ্রসর অংশকে অগ্রগতির মূল স্‌ে্রাতধারায় আনয়নের জন্য ১৯৭২ সালে এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধার সন্ত্মান ও নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশসহ নারী, জেলা, উপজাতি ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত আছে। আর মেধা কোটা রয়েছে মাত্র ৪৪ শতাংশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক  বলেন, সংবিধানের ২৯ (৩) (ক) অনুচ্ছেদ নাগরিকদের 'অনগ্রসর অংশের' জন্য চাকরিতে বিশেষ কোটা প্রদান অনুমোদন করেছে, 'অনগ্রসর অঞ্চলের' জন্য নয়। ফলে জেলা কোটার সাংবিধানিক ভিত্তি নেই বলা যায়। সংবিধান অনুসারে মুক্তিযোদ্ধা কোটারও কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। সমাজের সব শ্রেণির মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে, তাই মুক্তিযোদ্ধারা, বিশেষ করে তাদের সন্ত্মানেরা ঢালাওভাবে অনগ্রসর অংশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন না। তিনি বলেন, কোটা সুবিধার কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা নিয়েও রয়েছে অনিয়ম। অনেক সচিবও ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। নাতি-নাতনি ও সন্ত্মানদের ক্ষেত্রে এ অনিয়মের পরিমাণ আরো বেড়েছে।

জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতেও রয়েছে ৫ শতাংশ কোটা। এ ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা সনদ ভালোভাবে যাচাই-বাছাই না হওয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ভূয়া সনদ দিয়ে ভর্তি হয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ নিয়ে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বার্ষিক প্রতিবেদনে পিএসসি বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংস্কারের সুপারিশ করে আসছে, 'বর্তমানের কোটা সংক্রান্ত্ম নীতিমালা প্রয়োগ অত্যন্ত্ম জটিল, দুরূহ ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। প্রচলিত কোটা পদ্ধতির জটিলতার কারণে উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন শতভাগ নিখুঁতভাবে সম্পাদন করা প্রায় অসম্ভব। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়নের জন্য বর্তমানে প্রচলিত কোটা পদ্ধতির সরলীকরণ অপরিহার্য। অন্যথায় কোটা প্রয়োগ জটিলতা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।'

পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক  বলেন, 'আমরা বহুবার কোটা পদ্ধতি সহজীকরণের সুপারিশ করেছি। কমিশনের উক্ত সুপারিশ সরকারের বিবেচনাধীনও আছে।' তিনি বলেন, কোটা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব তাদের নয়। কোটা নির্ধারণ করে দেয় সরকার, তা আমাদের বিষয় নয়।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলি খান  বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, অধিকাংশ কোটাই অসাংবিধানিক ও ন্যায়নীতির পরিপন্থি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কার করা জরম্নরি। এখন মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের জন্য এ কোটা প্রযোজ্য হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তীব্র বিতর্ক রয়েছে। বর্তমানে যে কোটা ব্যবস্থা আছে তাতে মেধাবীদের চাকরি পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

সরকারি চাকরিতে এখন ২৫৮ ধরনের কোটা আছে। এমন অবস্থায় দীর্ঘদিন প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেয়ার পরও কোটা ব্যবস্থার কারণে অনেক মেধাবী প্রার্থী চাকরি পাচ্ছে না। আকবর আলি খান আরো বলেন, আমাদের সংসদে মহিলাদের জন্য যে আসন, সেটা চিরস্থায়ী ভিত্তিতে করা হয় না। বলা হয় যে, আগামী ১৫ বছর কিংবা ২০ বছর এ ব্যবস্থা থাকবে। তারপর সেটাকে পুনর্মূল্যায়ন করে সময় সময় ঠিক করা হয়। বাংলাদেশে সেই যে ১৯৭২ সালে কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, এরপর এটার কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি।

উলেস্নখ্য, দেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত্ম সিভিল সার্ভিসে ২০ শতাংশ পদ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৭৬ সালে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ২০ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। ১৯৮৫ সালে আবার একে ৪৫ শতাংশে এ উন্নীত করা হয়। তবে ১৯৭৭ সালে তৎকালীন পে-সার্ভিস কমিশনের একজন সদস্য বাদে সবাই সরকারি নিয়োগে কোটা ব্যবস্থার বিরোধিতা করেন। তখন কোটার পক্ষে অবস্থা নেয়া এমএম জামান প্রচলিত কোটাগুলো প্রথম ১০ বছর বহাল রেখে ১৯৮৭ সাল থেকে পরবর্তী ১০ বছরে ধীরে ধীরে কমিয়ে দশম বছরে তা বিলুপ্ত করার পক্ষে মত দেন। কিন্তু পরবর্তীকালে ১৯৯৭ সালেই এই কোটা ব্যবস্থাকে আরও সম্প্রসারিত করে মুক্তিযোদ্ধার সন্ত্মানদের আওতাভুক্ত করা হয়। যায়যায়দিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়