মোহাম্মদ নওশাদুল হক : সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস কম-বেশি সকল মানুষেরই আছে। ধর্মকর্মের সাথে জড়িতদের এহেন বিশ্বাসের পরিমান বেশি হলেও ধর্মকর্মের সাথে জড়িত নয়, সেরকম মানুষেরও মনের কোন এক কোনায় ¯্রষ্টার জন্য এতটুকুন জায়গা নেই, এমনটি নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।
তাই সকল মানুষের জীবনেই চরম সত্য তার ¯্রষ্টা। কিন্তু এই চরম সত্যটি দেখে না, শুধু বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই। এই দুনিয়াতে দৃশ্যতঃ চরম সত্য আছে।
যা শুধু সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে নয়, ধর্মহীন ব্যক্তিদের কাছেও নিশ্চিত এবং একমাত্র দৃশ্যমান চরম সত্য। আর সেটি হলো মৃত্যু। মৃত্যুর স্বাদ সবাইকে গ্রহণ করতেই হবে।
মৃত্যু বাস্তবতা। মৃত্যু মানুষের জীবনকে দুটি ভাগে ভাগ করে দেয়। যে অংশ দুনিয়াতে পড়ে থাকে, তা লাশ নামে পরিচিত।
আরেকটি অংশ পরজগতে স্থায়ী হয় যা রুহ নামে পরিচিত। রুহ এবং শরীর বা লাশের একত্রতার নামই জীবন। আর এই জীবনকে সুন্দর করতে দুটোরই সঠিক যতœ নিতে হয়। দুটোকেই রাখতে হয় পবিত্র ও সুন্দর
সাথে সাথে দুটোতেই লাগাতে হয় নানাবিধ অলংকার। কারণ, অলংকার যে কোন বিষয়কে ফুটিয়ে তুলে, জাগিয়ে তুলে। সাথে সাথে এনে দেয় সর্বোচ্চ সৌন্দর্যরূপ। তেমনিভাবে জীবনকে সুন্দর করতেও প্রয়োজন অলংকারের। মানুষ জীবনকে সুন্দর করতে কতভাবেই না চেষ্টা করে।
একজন নারী তার সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে স্বাভাবিক পরিধেয় কাপড় চোপড় ছাড়াও এর সাথে ম্যাচিং করে জুতা, অর্নামেন্ট, ঘড়ি, বেসলেট, চুলের হরেক রকম ডিজাইন ও কালার, পার্টস, নেইলপলিস, মেহেদি, লিপস্টিক, কাজল, আইব্রো, চুলের ফিতা, ব্যান্ড, ক্লিপ, খোপায় ফুলসহ আমার না জানা আরও কতশত অলংকার।
তেমনিভাবে একজন পুরুষও তার অবয়বকে সুশ্রী করার জন্য স্বাভাবিক পরিধেয় শার্ট, প্যান্ট জুতা ছাড়াও ঘড়ি, বেসলেট, আংটি, বেল্ট, সানগ্লাস, ব্লেজার, টাই, গলার চেইন, ক্যাপ, বিভিন্ন ডিজাইনের চুল-দাড়ি কাটাসহ আরও কত রকম চেষ্টাই না করে থাকে। ইদানিং কিছু কিছু পুরুষ মহিলাদের ন্যায় পার্লারে পর্যন্ত যাচ্ছে রূপচর্চার উদ্দেশ্যে।
এতশত অলংকার গায়ে জড়ালেই কি জীবন সুন্দর হয়? সোজা উত্তর-না।
এসকল অলংকারে একজন মানুষের শরীরকে সুন্দর করে, জীবনকে নয়। জীবনকে সুন্দর করতে দেহ এবং মন বা রুহ দুটোকেই একত্রে অসংখ্য অলংকারে জড়াতে হয়। সে অলংকার সমূহ দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান দুধরনেরই সমন্বিত প্রয়াস।
তাদের জীবনই দ্রুতগতিতে সুন্দরের পথে এগিয়ে চলে যারা শরীরে অলংকার পড়ানোর পূর্বেই রুহ বা আত্মাতে অলংকার পড়ায়। আর আত্মার অদৃশ্যমান এই অলংকারের সংখ্যা শারীরিক দৃশ্যমান অলংকারের চেয়ে কম নয়।
নৈতিকতা, মূল্যবোধ, পরোপকার, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, ধর্মীয় সংস্কৃতি চর্চা, সুশিক্ষা, কর্তব্যপরায়ণতা, নিষ্ঠা, ক্ষমা, ন্যায়বিচার, সামাজিকতা, অতিথিপরায়ণতা, সুস্থ সংস্কৃতি, স্বার্থহীনতা, অন্যের ক্ষতি না করা, অন্যায়ের প্রতিবাদ, দয়া, মায়া, সাহায্য-সহযোগিতা, অহিংসা, নির্লোভ, সচ্চরিত্র, মানবিকতা, লজ্জা, সম্প্রীতি, সৎসাহস, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা, নিস্পাপ থাকার মনোভাব, ধর্মের প্রতি আনুগত্য, পবিত্রতা, মহানুভবতা, মানবতা, পরিচ্ছন্নতা, সুশৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, গণতান্ত্রিকতা, উদারতা, মেধার চর্চা, মনন, অপচয়হীনতা, ভালোবাসা আরও অনেক অদৃশ্য এই সকল অলংকার মন বা আত্মাকে করে অনেক সমৃিদ্ধশালী।
পাশাপাশি, দেহকে রাখে মার্জিত ও রুহকে করে পবিত্র। আর অদৃশ্যমান এই অলংকারের চাদরে মুড়িয়ে দিয়েই কেবল সম্ভব জীবনকে পরিপুর্ণ সুন্দর করে নিজেকে ও পরিবেশকে শান্তিতে রাখা ও স্বস্তিতে রাখা।
লেখক : প্রকৌশলী, গণপূর্ত বিভাগ/সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
আপনার মতামত লিখুন :