শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ২৪ মার্চ, ২০১৮, ০৭:৪৭ সকাল
আপডেট : ২৪ মার্চ, ২০১৮, ০৭:৪৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যক্ষ্ণা ঝুঁকির শীর্ষে বাংলাদেশ

ডেস্ক রিপোর্ট : বিশ্বে যক্ষ্ণার ঝুঁকিপূর্ণ ৩০টি দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। রোগ শনাক্ত সংক্রান্ত্ম জটিলতা ও ওষুধের অকার্যকরিতা (এমডিআর) নিয়ন্ত্রণের অভাবে এমনটা হচ্ছে। তাই এ ঝুঁকি মোকাবেলা ও যক্ষ্ণামুক্ত করতে এখন থেকেই সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জরম্নরিভিত্তিতে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম স্থাপনের কথা বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
এমন পরিস্থিতিতেই 'নেতৃত্ব চাই যক্ষ্ণা নির্মূলে, ইতিহাস গড়ি সবাই মিলে' প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আজ বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্বযক্ষ্ণা দিবস।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ বৈশ্বিক যক্ষ্ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৬ সালে বাংলাদেশে এ রোগে ৬৬ হাজার মানুষের মৃতু্য হয়। ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষ নতুন করে যক্ষ্ণার জীবাণুতে আক্রান্ত্ম হয়। আর ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্ণায় (এমডিআর টিবি) আক্রান্ত্মের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৩০০। ডবিস্নউএইচও যক্ষ্ণার প্রকোপ এবং ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্ণা প্রকোপ বেশি এমন দেশের তালিক তৈরি করেছে। দুটি তালিকাতেই বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করছে।
সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে বছরে ৬৬ হাজার মানুষ যক্ষ্ণায় মারা যায় অর্থাৎ দিনে ১৮০ জন মারা যাচ্ছে এ রোগে। এছাড়া আক্রান্ত্মদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ রোগী এখনো চিকিৎসার বাইরে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দেশে যক্ষ্ণা শনাক্তকরণ আধুনিক যন্ত্রের স্বল্পতা আছে। তবে দেশে রোগী শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলেও ফুসফুসের যক্ষ্ণায় আক্রান্ত্ম রোগীর চিকিৎসায় সাফল্য হার ৯৫ শতাংশ।
এছাড়া আন্ত্মর্জাতিক যক্ষ্ণা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির গেস্নাবাল টিবি রিপোর্ট-২০১৭ অনুযায়ী দেশে প্রতিবছর প্রতি লাখে নতুন আক্রান্ত্ম যক্ষ্ণা রোগীর হার ২২১, প্রতি লাখে মৃতু্যর হার ৪০ জন। পাশাপাশি প্রতি বছর প্রতি লাখে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্ণা রোগীর হার ৫ দশমিক ৪ জন।
অন্য এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে সারাবিশ্বে ১০ দশমিক ৪ মিলিয়ন লোক যক্ষ্ণা আক্রান্ত্ম হয় তাদের মধ্যে ১ এক দশমিক ৭ মিলিয়ন মারা যায়। যক্ষ্ণার প্রাদুর্ভাব অনুসারে অঞ্চলভেদে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার জনগোষ্ঠীর ৪৫ শতাংশ, আফ্রিকায় ২৫, পশ্চিম-প্রশান্ত্ম মহাসাগরীয় দেশগুলোতে ১৭, ভূ-মধ্যপূর্ব দেশসমূহে ৭, যুক্তরাষ্ট্রে ৩ ও ইউরোপে ৩ শতাংশ মানুষ যক্ষ্ণায় আক্রান্ত্ম।
যক্ষ্ণা রোগ সংশিস্নষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে শিশুদের যক্ষ্ণা শনাক্তকরণ এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ শহরগুলোতেও যক্ষ্ণার প্রকোপ বাড়ছে। দিন দিন ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্ণার প্রকোপ বাড়লেও এই রোগ শনাক্তকরণের আধুনিক যন্ত্র (জিন এক্সপার্ট) আছে মাত্র ১৯৩টি। অথচ প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মেশিন দরকার রয়েছে।
সরকারের জাতীয় যক্ষ্ণা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সূত্রে জানা গেছে, পূর্বের তুলনায় বর্তমানে দেশে এ রোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাফল্য আশাব্যঞ্জক হলেও ডায়াগনসিস সংক্রান্ত্ম জটিলতার কারণে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্ণা বা মাল্টিড্রাগ রেজিসট্যান্স (এমডিআর) নিয়ন্ত্রণ এখনও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। তবে এটি নির্ণয় ও নির্মূলে কাজ হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে সারাদেশে ২ লাখ ৪৪ হাজার ২০১ জন রোগীর শনাক্ত ও তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে শিশু যক্ষ্ণা রোগী (১৫ বছরের নিচে) শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ১৮৯ জন। আর সব ধরনের যক্ষ্ণা রোগী শনাক্তের হার ৬৭ শতাংশ। মারাত্মক ড্রাগ রেজিসট্যান্স রোগীর সংখ্যা ১২ জন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় যক্ষ্ণা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডা. আহমাদুল হাসান খান যায়যাযদিনকে বলেন, এমডিআর রোগী শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে যে সংখ্যক জিন এক্সপার্ট মেশিন থাকার কথা, তা নেই। তাছাড়া সচেতনতার অভাবেও অনেকে নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন না। তবে সফলতার দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্ণার চিকিৎসা সাফল্যের হার ৭৭ ভাগ, যেখানে বিশ্বে সফলতার হার হচ্ছে ৫৪ ভাগ। বর্তমানে যক্ষ্ণা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে ২৬টি বেসরকারি সহযোগী সংস্থা কাজ করছে। এটির চিকিৎসায় দেশে ১ হাজার ১৩১টি ল্যাবরেটরি, ৪০টি ইকিউএ ল্যাবরেটরি এবং ১৯৩টি জিন এক্সপার্ট মেশিনের দ্বারা যক্ষ্ণা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চলছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমবিডিসি) ও জাতীয় যক্ষ্ণা নিয়ন্ত্রণ, কুষ্ঠ ও এইডস এসটিডি কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সামিউল হক যায়যায়দিনকে বলেন, যক্ষ্ণা একটি নিরাময় যোগ্য রোগ হলেও সব যক্ষ্ণারোগীকে চিকিৎসা সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এমনকি বর্তমানে দেশে প্রতিবছর যত লোক এ ব্যাধিতে আক্রান্ত্ম হচ্ছে তাদের প্রায় ৪০ শতাংশ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আক্রান্ত্ম এসব রোগী মূলত দুর্গম এলাকা বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ যেমন- হাওর-বাঁওড়, উপকূলীয় অঞ্চল, পবর্ত এলাকা ও বস্ত্মিতে বসবাস করছে। এদের অধিকাংশই অতিদরিদ্র ও যক্ষ্ণার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অন্ত্মর্ভুক্ত। এছাড়া জেলখানার কয়েদি, অভিবাসী, মাদকাসক্ত, কল-কারখানার কর্মী ও যৌনকর্মীও রয়েছে। তাই যক্ষ্ণার বিরম্নদ্ধে লড়তে হলে একজন রোগীকেও চিকিৎসার বাইরে রাখা যাবে না। যে সমস্ত্ম রোগী চিকিৎসার বাইরে আছে তাদের শনাক্ত করে আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে এ রোগে আরোগ্য লাভের হার ৯৫ শতাংশে উন্নীত করা এবং প্রকোপের হার কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
উলেস্নখ্য, এ বছর দিবসটি উপলক্ষে জনগণের মধ্যে যক্ষ্ণা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করার জন্য উপজেলা-জেলা, বিভাগীয় শহর ও রাজধানীতের্ যালি, কর্মশালা, গোলটেবিল বৈঠকসহ নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। সূত্র : যায়যায়দিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়