শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ২৪ মার্চ, ২০১৮, ০৬:৩৭ সকাল
আপডেট : ২৪ মার্চ, ২০১৮, ০৬:৩৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

স্থানীয় মার্কেট থেকে যেভাবে বিস্ফোরকের উপাদান সংগ্রহ করে জঙ্গিরা

ফারহান : দেশজুড়ে কোনঠাসা হয়ে আসা জঙ্গিদের পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বিস্ফোরক আনাও অনেকটা বন্ধ হয়ে এসেছে। বোমা, গ্রেনেড, বিস্ফোরক, কিংবা এসব তৈরির নানা উপাদান, বিস্ফোরক জেল ও ডেটোনেটর সবই আগে আনা হতো ভারত থেকে। সীমান্তের চোরাই পথ গুলোতে চলছে বাড়তি নজরদারি। একারণে জঙ্গিরা এখন দেশের ভেতর থেকেই বিস্ফোরক উপাদান সংগ্রহ করে বোমা তৈরির চেষ্টা করছে। নিজেরাই তৈরি করছে ডেটোনেটর কিংবা বিস্ফোরক জেল। কিন্তু কিভাবে বিস্ফোরকের এসব উপাদান স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করে জঙ্গিরা?

ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম-সিটিটিসি ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের ভেতরে একশ্রেণির অসাধু আমদানিকারক এসব রাসায়নিক উপাদান বেশি অর্থের বিনিময়ে খোলা বাজারে বিক্রি করছে। ফলে জঙ্গিরা এসব উপাদান সংগ্রহ করে গ্রেনেড ও বোমা তৈরি করছে। এছাড়া, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরির ভুয়া প্যাড (লেটার হেড) বানিয়েও তারা বিভিন্ন রাসায়ানিক উপাদান সংগ্রহ করে,যাতে বিক্রেতারা সন্দেহ করতে না পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি জঙ্গিরা নাশকতার জন্য যেসব বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে তাকে বলা হয় ‘টিএটিপি’। যা ৩-৪টি রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রণে তৈরি করা হয়। স্থানীয় মার্কেটগুলোতে টিএটিপির উপাদান ট্রাইএসিটোন বা ট্রাইপারঅক্সাইড, এসিটোন, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, সালফিউরিক এসিড ও নাইট্রিকি এসিড সহজেই পাওয়া যায়। এসব উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে বিশেষ কৌশলে সাদা বিস্ফোরক পাউডার তৈরি করা হয়, যাতে ডেটোনেটর লাগিয়ে তৈরি করা হয় বিস্ফোরক ভেস্ট বা বোমা।

সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এসিটোন রঙের দোকান, বার্নিশ বা নেইল পালিশ রিমোভার তৈরির কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ডিটারজেন্ট বা ওষুধ তৈরি, কারখানা এবং পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। সালফিউরিক বা নাইট্রিক এসিডও বিভিন্ন কারখানায় কাজে লাগে। ফলে যে কেউ চাইলেই কেমিক্যাল বিক্রির প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে এসব সংগ্রহ করতে পারে।

গত বছরের ২২ এপ্রিল ঝিনাইদহের পোড়াহাটি এলাকার একটি জঙ্গি আস্তানা থেকে ১৪টি তরল পদার্থ ভর্তি কন্টেইনার উদ্ধার করা হয়। কন্টেইনারগুলোর গায়ে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড লেখা ছিল। ওই আস্তানা থেকে সাদা বিস্ফোরক তৈরি করা একাধিক বিস্ফোরক ভেস্টও উদ্ধার করা হয়েছিল। গত বছরের ৫ অক্টোবর শেরপুরের নকলার চন্দ্রকোনা বাজার থেকে ১৮ ড্রাম তরল কেমিক্যাল উদ্ধার করে স্থানীয় থানা পুলিশ, যা নব্য জেএমবির সদস্যরা সংরক্ষণ করছিল বিস্ফোরক তৈরির জন্য। একই মাসের ২২ অক্টোবর এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আবুল কাশেম ওরফে আবু মুসাব নামে এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আবু মুসাব জানায়— নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনায় সে কেমিক্যাল সংরক্ষণ করেছিল। এগুলো ঢাকার একটি কেমিক্যাল বিক্রির প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করেছিল তারা।

সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, এসব কেমিক্যাল রাজধানী ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ভুয়া কাগজপত্র ও বেশি টাকা দিয়ে সংগ্রহ করে জঙ্গিরা। কোনও রকম যাচাই-বাছাই ছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানটি জঙ্গিদের কাছে এসব কেমিক্যাল বিক্রি করে। প্রতিষ্ঠানটিকে শনাক্তের পর নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গিরা যাতে স্থানীয়ভাবে বিস্ফোরক উপাদান সংগ্রহ করতে না পারে, সেজন্য কেমিক্যাল ব্যবসায়ী এবং বিস্ফোরক অধিদফতর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। তারা এমন একটি পদ্ধতি চালু করার চেষ্টা করছেন, যেখানে বিক্রেতারা ক্রেতাদের বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ করে রাখবেন। যাতে পরবর্তীতে তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা অনুসন্ধান করা যায়। সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এই পদ্ধতি চালু করতে পারলে কারা কী উদ্দেশ্যে রাসায়নিক উপাদান সংগ্রহ করছে, তা সহজেই মনিটরিংয়ের আওতায় চলে আসবে। তখন মিথ্যা পরিচয় দিয়ে জঙ্গিরাও বোমা-গ্রেনেড তৈরির জন্য বিস্ফোরক উপাদান সংগ্রহ করতে পারবে না।

সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার রহমতউল্লাহ চৌধুরী সুমন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি এমন একটা সিস্টেম তৈরি করতে, যাতে খুচরা বাজার বা লোকাল মার্কেট থেকে যারা কেমিক্যাল কিনবে, তাদের বিস্তারিত তথ্য বিক্রেতারা সংগ্রহে রাখেন। এমনকি ক্রেতার ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিও সংরক্ষিত থাকবে। ক্রেতা সন্দেহভাজন হলে যাচাই-বাছাইয়ের পর কেমিক্যাল বিক্রি করবে।’

দীর্ঘ দিন ধরে বোমা ও বিস্ফোরক নিয়ে কাজ করা এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের এখানে দুর্নীতি বা লোভে পড়ে যার-তার হাতে কেমিক্যাল বিক্রি করা হয়, এটা খুবই এলার্মিং। জঙ্গিরা এই সুযোগগুলোই কাজে লাগাচ্ছে। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, বিস্ফোরকের উপাদান সংগ্রহের সোর্সগুলোও বন্ধ করতে হবে। আমরা সেটার জন্য কাজ করছি।’

সিটিটিসি সূত্র বলছে, বেশি অর্থের লোভে খুচরা বিক্রির জন্য অনেক আমদানিকারক ঘোষণা ছাড়াও কেমিক্যাল আমদানি করছে। অঘোষিত কেমিক্যাল বা রাসায়ানিক উপাদান বিক্রি করা হচ্ছে খোলাবাজারে। আর জঙ্গিরাও ছদ্মবেশে নিজেদের কথিত ল্যাবরেটরি বা প্রতিষ্ঠানের নামে এসব সংগ্রহ করছে। বছর তিনেক আগে জঙ্গিদের কাছে কেমিক্যাল সরবরাহ করার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান ও তিন জন কেমিক্যাল ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে এমন অনেক প্রমাণ তারা পেয়েছেন যে, জঙ্গিরা সাবান বা কসমেটিকস কারখানার আড়ালে রাসায়নিক উপাদান সংগ্রহ করে। গত বছরের ২৮ মে সাভারের একটি বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে কসমেটিকস কারখানার নামে জঙ্গিরা বোমা তৈরি করে আসছিল। এছাড়া, বাংলাদেশের একসময়ের সক্রিয় জঙ্গি গোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সোনারবাংলা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ নামে সাবানের একটি কারখানার আড়ালে বিস্ফোরক সংগ্রহ করে বোমা-গ্রেনেড তৈরি করতো।

সূত্র : বাংলাট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়