শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৩ মার্চ, ২০১৮, ০৯:০০ সকাল
আপডেট : ২৩ মার্চ, ২০১৮, ০৯:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এমপির জামাতা গডফাদার!

সৈয়দ আতিক :তার নামের অদ্যাক্ষর ‘আ’। নামের শেষে রয়েছে খান শব্দ। গুলশান এক নম্বরে নাভানা টাওয়ারের আশপাশেই তার অফিস। বিলাস বহুল অফিসের রং দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এখানে আসা-যাওয়া হয় মাফিয়াচক্রের। তাদের চলনের ধরন, গাড়ির মডেল আর শানশওকত দেখে মনে হবে অতি ভদ্র। আসলে এসবের আড়ালে লুকিয়ে আছে অবৈধ বিট কয়েনের বাণিজ্য। জনৈক খানের আছে সিলেটভিত্তিক গোপন নেটওয়ার্ক। আর গুলশান অফিস থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই খান সরকারের একটি বাহিনীর নজরদারির মধ্যে রয়েছে। গডফাদার এই ব্যক্তিকে যে কোনো সময় গ্রেফতার করা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে এ সংক্রান্ত তথ্য।

অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খান একজন এমপির জামাতা হওয়ায় তাকে আটকের ক্ষেত্রে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান সংশ্লিষ্টরা হিসাব নিকাশও করছেন। তবে তার অপরাধের মাত্রা ও কৌশল দেখে বিস্মিত গোয়েন্দারা। এ কারণে খান যতই ক্ষমতাসীন দলের নেতার কেউ হোক না কেন আইনের কাঠগড়ায় তাকে আনা হবে। এজন্য যে ধরনের তথ্য প্রমাণ প্রয়োজন, গোয়েন্দারা ইতিমধ্যে তা হাতে নিয়েছেন।

দায়িত্বশীল এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তির পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। তাকে গোয়েন্দা গণ্ডিতে রাখা হয়েছে। তার চলাচল রয়েছে সীমিত পর্যায়ে। বাইরে কোথাও যোগাযোগের ক্ষেত্রেও তাকে সংক্ষিপ্ত তালিকা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া অবৈধ বিটকয়েনে লেনদেনের ক্ষেত্রে গোয়েন্দা অনুসন্ধানে খানের যে নেটওয়ার্ক মিলেছে, সেখানে বেশকিছু ডিভাইস থেকে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের হিসাব বের হয়েছে।

কীভাবে কোন ব্যক্তি কোন দিন কোন তারিখে কত টাকা কয়েন করে বিভিন্ন দেশে লেনদেন করেছে তার আদৌপান্ত বের হয়েছে ডিভাইস থেকে। খানের ব্যবহৃত ল্যাপটপ থেকেও মিলেছে অনেকের নাম। এই তালিকায় আছেন বহু রাঘব বোয়াল। যাদের প্রায় সবার কানেকশন উচ্চ পর্যায়ে।
ডিভাইস পর্যালোচনা করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন- বিট কয়েনে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে খানের সিন্ডিকেটের লোকজন চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা এবং যশোরেও রয়েছে। তবে বেশিরভাগ লেনদেনের ক্ষেত্রে সিলেটভিত্তিক নেটওয়ার্ক সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। এখান থেকে মোটা দাগের আর্থিক লেনদেন হয়। এক এমপির জামাতা পুরো নেটওয়ার্কেরহোতা। সেই মূলত গডফাদার হিসেবে গোয়েন্দা অনুসন্ধানে চিহ্নিত হয়েছে।

সাইবার দক্ষ গোয়েন্দারা তাদের অনুসন্ধানে আরো জানতে পারেন যে, খানের চট্টগ্রামভিত্তিকও একটি নেটওয়ার্ক আছে। এ চক্রের হাতে বেশকিছু বিট কয়েন রয়েছে। সম্প্রতি তারা কয়েক কোটি টাকার লেনদেন করেছে ডলারে। এদের ধরার জন্য গোয়েন্দারা কয়েকদিন আগে অভিযানও চালান। কিন্তু গডফাদার খানের ওপর নজরদারির পর তারা স্থান বদল করেছেন। তবে গোয়েন্দারা তাদের ধরতে প্রযুক্তিগতভাবে অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
একই চক্রের রাজশাহীকেন্দ্রীক আছে গোপন এজেন্ট। এখান থেকে একজনকে ইতিমধ্যে কব্জায় নিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। তার কাছ থেকে বিট কয়েনে লেনদেন সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। রাজশাহী অঞ্চল থেকে বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে বিট কয়েনে কারা কারা আর্থিক লেনদেনে তাদের তালিকা পাওয়া গেছে।

গুলশানে খানের সিন্ডিকেট ছাড়াও বিট কয়েনে লেনদেন করা হয় বলে সামাজিক মাধ্যমে পেজ খোলা হয়েছে। এরমধ্যে বিট কয়েন বাই অ্যান্ড সেল বাংলাদেশ, লোকাল বিট কয়েনস ডটকম পেজ থেকে বেশ কিছু তথ্য উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। এ ছাড়া ক্রিপ্টোকারেন্সি তালিকায় বিট কয়েনের মতোই আরো সাংকেতিক মুদ্রা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ইথেরিয়াম, লিট কয়েন, রিপল, অল্ট কয়েন, সুইফট কয়েন, বাইট কয়েন, পিয়ার কয়েন, ডোগে কয়েন, গ্রিড কয়েন, ওমনি, ব্লাক কয়েন, পেট্রো উল্লেখযোগ্য।

খান সিন্ডিকেটের ডিভাইস পর্যালোচনা করে গোয়েন্দারা তথ্য পান যে, বিট কয়েন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেহেতু কঠোর হচ্ছে, তাই তারা উপরোল্লিখিত যে কোনো একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে নতুন কৌশলে একই ব্যবসা চালিয়ে যাবে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা মানবকণ্ঠকে বলেন, বিট কয়েন ব্যবস্থা একটি ভার্চুয়াল পদ্ধতি। যেখানে লেনদেনকারীর তথ্য গোপন থাকে। চাইলে ছদ্মনামেও লেনদেন করা যায়। কার কাছে অর্থ যাচ্ছে, কে পাঠাচ্ছে সবকিছু গোপন রেখে এ ধরনের লেনদেন হচ্ছে। এতে করে অর্থ পাচারের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, এই পদ্ধতি এতটা গোপনীয় যে জঙ্গি বা অন্য ভয়ঙ্কর অপরাধীরাও এখানে লেনদেন করছে বলে তথ্য রয়েছে। এমনকি মাদক ব্যবসা ও অস্ত্র কেনা বেচাও হচ্ছে।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামের একদল সফটওয়্যার ডেভেলপার নতুন ধরনের ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি’ প্রচলন করে। এর নাম দেয়া হয় বিট কয়েন। ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অনলাইনে দু’জন ব্যবহারকারীর মধ্যে এটি সরাসরি (পিয়ার-টু-পিয়ার) আদান প্রদান হয়। নিজের পরিচয় প্রকাশ না করে এই পদ্ধতিতে লেনদেন করা যায়। অনলাইনে একটি বিশেষ সফটওয়ারের মাধ্যমে করা লেনদেনটি যে সার্ভারে সুরক্ষিত থাকে সেটির নাম হলো মাইনার। এই মাইনারের মাধ্যমে বিট কয়েন তৈরি হয়। একটি লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন বিট কয়েন তৈরি হয়। বিট কয়েন মূলত ইন্টারনেট সিস্টেমে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কে প্রোগ্রামিং করা থাকে, যা চাইলে কেনা যায়। এটি কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা কোনো দেশের জারি করা মুদ্রা নয়।

সাইবার নিরাপত্তা ও সোশ্যাল মিডিয়া স্পেশালিস্ট পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল ইসলাম মানবকণ্ঠকে বলেন, বিট কয়েনে যারা লেনদেন করছে এ ধরনের একটি শক্তিশালী চক্রকে শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে। সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন বিভাগের নজরদারিতে আছেন কয়েকজন। তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা দল ব্যাপক অনুসন্ধান করেছে। এদের সঙ্গে মাফিয়াচক্রের যোগসূত্রের তথ্য মিলেছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম আরো বলেন, বিট কয়েন বাংলাদেশে বৈধ নয় বলে সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সতর্ক বার্তায় এ ধরনের লেনদেন না করার নির্দেশনাও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা যায়, গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক জারি করে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা। নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয় যে, বিট কয়েনের আইনি কোনো ভিত্তি নেই। ঝুঁকি এড়াতে এ দিয়ে লেনদেন কিংবা এর প্রসারে সহায়তা কিংবা প্রচার থেকে বিরত থাকতে সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে। নামবিহীন বা ছদ্মনামে প্রতিসঙ্গীর সঙ্গে অনলাইনে ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের দ্বারা মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ও সাইবার অপরাধ সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। অনলাইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে লেনদেনকারী গ্রাহকরা ভার্চুয়াল মুদ্রার সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকিসহ বিভিন্ন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন বলে সতর্ক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কিন্তু নিষিদ্ধ হওয়ার পর এই বিট কয়েনের লেনদেনের ক্ষেত্রে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেছেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা। বিশেষ করে গুলশানের খান সিন্ডিকেট একটি মাফিয়াচক্রকে সহায়তা করে আসছে। খানচক্রের অনেকেই এখন গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়