শিরোনাম
◈ অবশেষে মার্কিন সিনেটে সাড়ে ৯ হাজার কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ পাস ◈ কক্সবাজারে ঈদ স্পেশাল ট্রেন লাইনচ্যুত, রেল চলাচল বন্ধ ◈ ইউক্রেনকে এবার ব্রিটেননের ৬১৭ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা ◈ থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ◈ জিবুতি উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবিতে ৩৩ জনের মৃত্যু ◈ লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, চাপ পড়ছে গ্রামে ◈ এফডিসিতে মারামারির ঘটনায় ডিপজল-মিশার দুঃখ প্রকাশ ◈ প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আয়ে ১৫.২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন ◈ প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাত চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন নির্বাচিত ◈ বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগ আহ্বান রাষ্ট্রপতির

প্রকাশিত : ২৩ মার্চ, ২০১৮, ০৪:৪৪ সকাল
আপডেট : ২৩ মার্চ, ২০১৮, ০৪:৪৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সু চির বিরুদ্ধে যে প্রক্রিয়ায় মামলা করা সম্ভব

ডেস্ক রিপোর্ট : অস্ট্রেলিয়ায় থাকা রোহিঙ্গারা সু চির বিরুদ্ধে মামলার উদ্যোগ নিলেও সে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল এক অনানুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, বিদেশে কূটনীতিকদের বিচার সংক্রান্ত আইনের আওতায় সু চি দায়মুক্তি পাবেন। তবে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করেছেন মামলার সঙ্গে জড়িত আইনজীবীরা। তারা বলছেন, সু চি ‘কূটনৈতিক দায়মুক্তি’ পাবেন কি না তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুযোগ নেই। ইউনিভার্সেল জুরিসডিকশন নীতির আওতায় সু চির বিচারের সুযোগ রয়েছে, মনে করছেন তারা। এক্ষেত্রে চিলির স্বৈরশাসক অগাস্তো পিনোশেকে নিয়ে দেওয়া যুক্তরাজ্যের আদালতের সিদ্ধান্তের উদাহরণ টেনেছেন মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। ওই আইনজীবীদের একজন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পরবর্তী পদক্ষেপের আগে অ্যাটর্নি জেনারেলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। বিশ্বজনীন ন্যয়বিচারের ধারণার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বিদ্যমান আইনকে মিলিয়ে পড়তে গিয়ে সু চির বিরুদ্ধে মামলার সুযোগ রয়েছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
সু চি

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংগঠন আসিয়ানের বিশেষ সম্মেলনে যোগ দিতে অস্ট্রেলিয়াতে অন্যান্যদের সঙ্গে উপস্থিত হয়েছিলেন মিয়ানমারের অং সান সু চি। তার পৌঁছানোর পূর্বেই অস্ট্রেলীয় আইনজীবী ও অ্যাকটিভিস্টদের একটি দল মেলবোর্নের আদালতে সু চির বিরুদ্ধে মামলার উদ্যোগ নেন। সু চির বিরুদ্ধে দাখিল করা অভিযোগের বর্ণনার বড় অংশই প্রস্তুত করেছেন ‘হিউম্যান রাইটস ফর অলের’ প্রধান পরিচালক অ্যালিসন ব্যাটিসন। তিনি জানিয়েছেন মেলবোর্নের আইনজীবী রন মার্কেল কিউসি, দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ফেডারেল কোর্টের সাবেক বিচারক ম্যারিওন ইসাবেল এবং কমনওয়েলথ আইন বিশেষজ্ঞ রাইলেনে সার্পের মতো তিনজন আইন বিশেষজ্ঞ তাদের সঙ্গে কাজ করছেন। দলের অপর সদস্য সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী নিনা ডিলন ব্রিটন।

মামলা দায়ের করার উদ্যোগ নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াতে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আগে থেকেই কাজ করা সিডনিভিত্তিক আইনজীবী ড্যানিয়েল টেইলর এ বিষয়ে কাজ করতে ব্যাটিসনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আর্জিতে কোনও রোহিঙ্গার নাম না থাকার প্রসঙ্গে ব্যাটিসন মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভাইস নিউজকে বলেছেন, ‘অভিযোগনামায় কোনও রোহিঙ্গার নাম থাকলে পরবর্তীতে তাদের বা তাদের পরিবারের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া হতে পারে, এই ভয়ে রোহিঙ্গাদের কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি।’ ব্যাটিসন মনে করেন, সফল হলে এই মামলাটি অস্ট্রেলিয়া ও পুরো বিশ্বের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।

সু চির বিরুদ্ধে তারা যে আর্জি দাখিল করেছেন তাতে অভিযোগ করা হয়েছে, সু চি রোহিঙ্গাদের বলপূর্বক দেশ ছাড়া করার জন্য দায়ী। আর্জিটির বক্তব্য ব্যাখ্যা করতে ব্যাটিসন জানিয়েছেন, ‘আমরা মূলত বলতে চেয়েছি, মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনীর যারা এই অত্যাচারের সঙ্গে জড়িত তাদের নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে সু চির হাতে কার্যকর ক্ষমতা রয়েছে। অস্ট্রেলিয়াতে এটা আগে কখনও করা হয়নি। তবে রোম চুক্তির বিষয়ে অস্ট্রেলিয়াতে আইন আছে, এবং এটা সেরকমই একটি বিষয় যেসব বিষয় ফয়সালা করার জন্য ওই আইনটি করা হয়েছে।’

আইনজীবীরা গত শুক্রবার মেলবোর্নের আদালতে মামলা দায়ের করার পাশাপাশি আর্জিটির একটি অনুলিপি অস্ট্রেলিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে পাঠিয়েছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল ক্রিশ্চিয়ান পোর্টার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়াতে সু চির বিচারের কোনও উদ্যোগকে সমর্থন করা সম্ভব নয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ দায়মুক্তির আওতায় রয়েছেন সু চি। এমনকী আদালতের নথির ভিত্তিতেও তার বিরুদ্ধে কোনও কিছু করার সুযোগ নাই। কারণ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আরও অনেকে পদে আসীন ব্যক্তিদের কূটনৈতিক দায়মুক্তি রয়েছে। তাদের গ্রেফতার, আটকসহ কোনও ধরনের বিচারিক প্রক্রিয়ার আওতায় নেওয়ার সুযোগ নাই। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকেও একই কথা বলেছেন তিনি।

ব্যাটিসনকে মামলার নথি তৈরিতে সহায়তাকারী ইউনিভার্সিটি অফ সিডনির আইনের ছাত্রী নিনা ডিলন ব্রিটনের ভাষ্য, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল মনে করেন, সু চির কূটনৈতিক দায়মুক্তি রয়েছে এবং সে কারণে তার বিচারের আবেদনে তিনি সম্মতি দেবেন না। কিন্তু কূটনৈতিক দায়মুক্তির বিষয়টি প্রশ্নসাপেক্ষ। কূটনৈতিক দায়মুক্তি তার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে। মিয়ানমারের সরকার চলছে সু চি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে। সু চি কার্যত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ঠেকানোর বিষয়টি দেখভাল করছেন এবং রোহিঙ্গাদের বিদেশি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গণহত্যার কাজটি জায়েজ করার পটভূমি নিশ্চিত করে দিচ্ছেন।’

সু চির বিরুদ্ধে মামলা করার আগে ব্যাটিসন ও তার সহযোগীরা কয়েকটি বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন। যেমন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে সহিংসতা হয়েছে তা কতটা ব্যাপক মাত্রার ছিল, সহিংসতা সাধারণ জনগণের ওপর হয়েছিল কি না, রোহিঙ্গারা আইনানুগভাবে ওই স্থানের বাসিন্দা কি না, তাদেরকে কিভাবে স্থানান্তর করা হয়েছে ইত্যাদি। আইনি কার্যক্রম চালিয়ে নিতে অ্যাটর্নি জেনারেল পোর্টারের মন্তব্য কোনও প্রভাব ফেলবে না জানিয়ে ব্যাটিসন বলেছেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল যদি সরাসরি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন তাহলেই তা বেশি গ্রহণযোগ্য হতো। আমরা এখনও তার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।’ যুক্তরাজ্যের অগাস্তো পিনোশের মামলার উদাহরণ টেনে তিনি বলেছেন, সেখানকার আদালত কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধে তার বিচারের আদেশই দিয়েছিল।’

চিলিতে গণহত্যা চালানোর দায়ে অভিযুক্ত পিনোশের গ্রেফতার কার্যকর করাতে আইনজীবী গ্রেস ও অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ‘বিশ্বজনীন ন্যায়’ ধারণার বলেই উদ্যোগ নিয়েছিল। স্পেনের আদালত ‘ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন’ নীতির বলেই চিলিতে সংগঠিত অপরাধের জন্য চিলির স্বৈরশাসক পিনোশেকে গ্রেফতারের আদেশ দিয়েছিল, যা স্থানীয় আদালতের অনুমোদনের পর কার্যকর করেছিল যুক্তরাজ্য। পরবর্তীতে রাজনৈতিক চাপে পড়া যুক্তরাজ্য সরকার মানসিক স্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়ে পিনোশেকে মুক্ত করে দিলেও তার গ্রেফতারির মাধ্যম এটা প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল, স্পেন এবং যুক্তরাজ্যের আইনে বিশ্বজনীন ন্যায়বিচার নীতির বলে সাবেক রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানকেও বিচারের আওতায় আনা যায়।

বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় এ নিয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ব্যাটিসন। তবে রয়টার্সকে তিনি এটুকু বলেছেন, এই আইনি সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকার কারণেই তারা মামলার উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি ইউনিভার্সেল জুরিসডিকশন নীতির আওতায় সু চিকে যে বিচারের আওতায় নেওয়া সম্ভব তার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ইউনিভার্সেল জুরিসডিকশন নীতি অনুযায়ী, কিছু অপরাধের গুরুত্ব এত বেশি যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সবারই সেগুলোর দিকে নজর দেওয়া উচিত। এ ধরণের অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত হওয়াটাই কাম্য এবং দোষীদের বিচার ও শাস্তি বিধান হওয়া দরকার। এসব অপরাধের বিষয়ে কোন দায়মুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কূটনৈতিক দায়মুক্তি প্রসঙ্গে বলেছিল, ‘কিছু কিছু অপরাধ পুরো বিশ্ববাসীর জন্যই এমন হুমকি তৈরি করে যে সেসব অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা দেশগুলোর যৌক্তিক ও নৈতিক দায়িত্ব: গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, যুদ্ধাপরাধ, নির্যাতন এবং গুমের মতো অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত, কোনও দেশ তাদের জন্য নিরাপদ স্থান হতে পারে না।’

জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির স্থায়ী প্রতিনিধির ২০১৬ সালের ৩ মে তারিখে দেওয়া প্রতিবেদনে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান ব্যাখ্যা করে জানানো হয়েছে, ‘অপরাধ যেখানেই সংগঠিত হয়ে থাকুক না কেন ইউনিভার্সেল জুরিসডিকশন নীতির আওতায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে আসা কিছু চরম ঘৃণ্য অপরাধের শাস্তি বিধানের উদ্যোগ নেওয়ার অধিকার সব দেশেরই আছে।...গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, দাস ব্যবসা এবং নির্যাতনের মত অপরাধ এই ‘বিশ্বজনীন ন্যায়বিচারের’ ধারণার আওতাভুক্ত। অস্ট্রেলিয়া জাতিসংঘকে দেশটির আইনের সঙ্গে বিশ্বজনীন ন্যায়ের ধারণার সমন্বয়সাধন প্রসঙ্গে বলেছে, ‘দেশিয় আইনে কার্যকর করার জন্য আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতাগুলোকে অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় আইনের সঙ্গে সমন্বিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উৎকণ্ঠার কারণ হওয়া গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, জলদস্যুতা, দাস ব্যবসা, নির্যাতন এবং এসব অপরাধ সংগঠনের চেষ্টা করা, উস্কানি দেওয়া ও অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের সাহায্য করার মতো অপরাধগুলো যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ তা আইনে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করার বিষয়টি অস্ট্রেলিয়ার সংসদ নিশ্চিত করেছে। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার আইনে এটা বর্ণিত হয়েছে, ইউনিভার্সেল জুরিসডিকশন নীতির বলে ওইসব অপরাধের তদন্ত ও বিচার করার আইনি এখতিয়ার অস্ট্রেলিয়ার রয়েছে। বাংলাট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়