টিভিএন রিপোর্ট : সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর কথা বলেছি, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছি। এজন্য ৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো নানাভাবেই আমাকে নির্যাতন ও বঞ্চিত করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও একইভাবে বঞ্চিত হচ্ছি। এমন অভিযোগ তুলে বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি নায়ক ফারুক বলেছেন, ৫৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। কখনো দলের কাছে কিছু চাইনি কিন্তু এবার জাতীয় সংসদে যেতে মনোনয়ন চাইবো।
তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছাড়া অন্য কোনো রাজনীতি বুঝি না। সত্যের জন্য, সুন্দরের জন্য ইমোশনাল পৃথিবী ছেড়ে আমাকে রাজনীতিতে আসতেই হবে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোরালোভাবে বলতে চাই আমাকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে দেন। আমি বঙ্গবন্ধুর কথা আরও ভালো করে মানুষের কাছে বলতে পারব।
কোন আসন থেকে নির্বাচন করতে চান? জানতে চাইলে ফারুক বলেন, নির্বাচনে আমাকে বর্তমান বাসস্থান উত্তরা, শৈশবের পুরান ঢাকা অথবা গ্রামের বাড়ি গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থেকে মনোনয়ন দিতে পারে। কালীগঞ্জ থেকে নির্বাচন করলে সেখানকার মানুষ অনেক খুশি হবে। তারা যা চায় তা এখনও পায়নি। সেখানে আমার বাবা ‘বঙ্গবন্ধু বাজার’ করে দিয়েছে। সেই বঙ্গবন্ধু বাজারের ইতিহাস আজ পাথর চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। কারণ যদি আপা জেনে যান? আপার চারপাশে যারা আছেন তারা আমার সম্পর্কে ভালো কিছু বলেন না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর চারপাশে ছিলেন মোশতাক। আর এই সরকারের চারপাশে অনেক মোশতাক রয়েছে। এরাই ঢুকতে দেয় না। অনেকেই বলেন আপার চোখে পড়তে হবে। আপাকে ডাকতে হবে, এটিতো অনেক বড় দুঃখের।
কেন এমপি হতে চান, এমপি হলে কী করবেন? এ প্রশ্নের জবাবে ফারুক বলেন, দেশের মানুষের পরাধীনতার শিকল ছিঁড়েছেন আমাদের নেত্রী। তার প্রচেষ্টায় দেশে উন্নয়নের ধারা তৈরি হয়েছে। আমি সেই উন্নয়নের ধারায় কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। এই উন্নয়নের আরেক নাম সোনার বাংলা। সোনার বাংলা ফলাতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হবে। আর সেটি সম্ভব আধুনিক যুগপোযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে। সে বিষয়ে আমার বেশ কিছু পরিকল্পনাও রয়েছে।
ছাত্র রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের বিষয়ে শৈশবের স্মৃতিচারণ করে ফারুক বলেন, ছোট বেলায় মা মারা যান। পরিবারে অনেক অনাদরেই বড় হয়েছি। যখন বয়স আট বা নয়। তখন গুলিস্তানে আউটার স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু ও ভাসানীর বক্তৃতা শুনতাম। তাদের বক্তব্য আমাকে অনুপাণিত করেছে। কিন্তু রাজনীতি করবো এটি কখনো ভাবিনি।
কিন্তু পরবর্তীতে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পরি। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের দিন আমিও সেই ময়দানে ছিলাম। সিনিয়র নেতাদের নির্দেশে মাঠে ক্যাম্প করে থাকা, রাতে সেখানে ঘুমানো, স্টেজ পাহাড়া দেয়াসহ দলীয় কাজে সহযোগিতা করেছি। ৭ই মার্চের ভাষণে নেতা পরবর্তী দিক নির্দেশনামূলক কথা বলবেন এটিই আমাদের ধারণা ছিল। কিন্তু তিনি তার রাজনীতির সারা জীবনের অর্জনটুকু তুলে ধরলেন। যেটি আমরা কেউ কল্পনাও করতে পারিনি।
মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ ও ঢাকার প্রথম প্রতিরোধের ঘটনা সম্পর্কে ফারুক বলেন, পুরান ঢাকায় প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলি আমরা। প্রথম গুলি করে নাদের। ৭১ সালের মার্চ মাসের ২২ বা ২৩ তারিখ আমার প্রথম সিনেমা জলছবি রিলিজ হয়। আমার একটি ছবি দেখে পাক হানাদার বাহিনী কাজের লোকসহ বাড়িটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
বঙ্গবন্ধু রূপালী তাকে পর্দায় থেকেই রাজনীতি করে যাবার নির্দেশ দিয়েছিলেন জানিয়ে ফারুক বলেন, নেতা বলেছিলেন, যেই জায়গায় তুই আছিস সেটিই তোর জন্য সঠিক জায়গা। এখানে থেকে রাজনীতি করে যা। আমার ও সরকারের সমালোচনা প্রতিবাদ করতে পারবি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কত বড় মাপের সংস্কৃতমনা মানুষ ছিলেন তা বলে শেষ করা যাবে না। সাংস্কৃতিক জগতের মানুষকে কাছে পেলে তিনি কাছে নিয়ে আড্ডা দিতেন। গান শুনতেন গভীর মগ্ন হয়ে। তিনি ছিলেন সাংস্কৃতিক জগতের মানুষের অনুপ্রেরণা।
মিয়া ভাই খ্যাত নায়ক ফারুক বলেন, স্বাধীনতার ওপর আরও অনেক বেশি সিনেমা হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে তা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ওপর খুব অল্পসংখ্যক ভালো সিনেমা হয়েছে। আরও অনেক সিনেমা হওয়া দরকার ছিল। সেসময় অনেক ভালো ছবির শুটিং শুরু করেও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর এখনতো ব্যবসায়ীরা যুদ্ধের সিনেমার প্রতি আগ্রহই দেখান না। যুদ্ধের পর জল্লাদের দরবার নামে একটি ছবির শুটিং কিছুদিন হওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। ওরা ১১জন, আবার তোরা মানুষ হো, এসব ছবিতে মুক্তিযুদ্ধে কিছু সামন্য অংশই তুলে ধরা হয়েছে। ফারুক মনে করেন, নির্মাতা খান আতার এখনো অনেক রাত ছবিটি যুদ্ধের একটি বড় দলিল। কিন্তু এই ছবি নিয়ে কেউ কোন কথা বলে না।
আপনার মতামত লিখুন :