শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৮ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২২ মার্চ, ২০১৮, ১১:১১ দুপুর
আপডেট : ২২ মার্চ, ২০১৮, ১১:১১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল আইনের খসড়া চূড়ান্ত

ডেস্ক রিপোর্ট : নৌ-দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য দায়ীরা সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। জাহাজ মালিক, নাবিক (চালক) বা সংশ্লিষ্ট যার বা যাদের অবহেলা, অদক্ষতা বা ইচ্ছাকৃত ভুলের প্রমাণ মিলবে তাকে এ শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় দায়ী প্রত্যেককে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয়ার বিশেষ ক্ষমতা থাকবে নৌ-আদালতের। এমন সব বিধান যুক্ত করে অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে নৌ-পরিবহন অধিদফতর। এ আইন অনুমোেদনের জন্য একনেকে পাঠিয়েছে নৌপরিবহন।

আইনে সব ধরনের ইঞ্জিনচালিত নৌযান রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট নেয়া এবং সনদধারী চালক রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই প্রথম জাহাজের মালিক ও মাস্টারের পাশাপাশি সুকানিদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন অপরাধের সাজার পরিমাণও। এতে সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০ বছর এবং অর্থদণ্ড এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও নৌ-পরিবহন অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে দুর্ঘটনায় মানুষ আহত বা নিহত হলে এর দায় নিতে রাজি নন লঞ্চ ও কার্গো মালিকেরা। এ কারণে খসড়া আইনে মালিকদের সাজার আওতাভুক্ত করার বিধান বাতিল চেয়ে দেন-দরবার করছেন মালিক সংগঠনের নেতারা। দুর্ঘটনার সব দোষ চালকের ওপর চাপানোর প্রস্তাব তাদের। পাশাপাশি খসড়া আইনে প্রস্তাবিত সাজার পরিমাণ কমানোর পক্ষেও অবস্থান নিয়েছেন তারা। দাবি আদায়ে নৌ-মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আইন সংশোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আবদুস সামাদ যুগান্তরকে বলেন, ‘আইন যুগোপযোগী করার কাজ চলছে। এতে বিভিন্ন অপরাধে সাজা বাড়ানোর বিষয়েও প্রস্তাব রয়েছে।’ তবে সাজা কমাতে মালিকদের চাপের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

আইন সংশোধনের সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, মন্ত্রিসভার নির্দেশনা অনুসরণ করে বিভিন্ন অপরাধে ‘সহনশীল’ সাজা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু মালিকেরা এই সাজা কোনোভাবেই মানতে রাজি নন। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তারা নানাভাবে চাপও সৃষ্টি করছেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নৌ-পরিবহন অধিদফতরে নিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যা সাড়ে ১০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে যাত্রীবাহী লঞ্চ প্রায় এক হাজার ২০০টি ও মালবাহী জাহাজ আড়াই হাজার। বালিবাহী জাহাজ রয়েছে প্রায় চার হাজার ৩০০টি। এর বাইরে সারা দেশে ৬-৭ হাজার নিবন্ধনবিহীন বালুবাহী জাহাজ, প্রায় এক হাজার বালু উত্তোলনকারী ড্রেজার, কয়েকশ’ স্পিডবোড অবৈধভাবে চলাচল করছে। এসব জাহাজ নৌ-দুর্ঘটনার জন্য অন্যতম দায়ী। প্রস্তাবিত আইনে এসব নৌযানের রেজিস্ট্রেশন নেয়া ও দক্ষ চালক রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অন্যথায় অবৈধ এসব নৌযান মালিক ও চালকদের সাজা পেতে হবে।

খসড়া আইন প্রসঙ্গে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামান বাদল যুগান্তরকে বলেন, আমরা লিখিত মতামত দিয়েছি। বলেছি, দুর্ঘটনায় মামলা হলে মালিককে জেলহাজতে পাঠানো চলবে না। বর্তমানে যে সাজা রয়েছে তার ২৫ শতাংশ বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু কয়েকশ’ গুন বাড়ানো উচিত হবে না। কিন্তু প্রস্তাব কতখানি আমলে নেয়া হয়েছে তা অফিসিয়ালি আমাদের জানায়নি।

লঞ্চ মালিকদের আরেক সংগঠন ‘লঞ্চ মালিক সমিতি, বাংলাদেশ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, মালিকেরা জাহাজে অবস্থান করে না। চলতি পথে দুর্ঘটনা হলে এর জন্য মালিককে দায়ী করা হবে কেন? আমরা বলেছি, এসব অপরাধের জন্য মালিক নয়, চালক দায়ী। আইনে মালিককে শাস্তির দেয়ার বিধান যাতে রাখা না হয় সেই প্রস্তাব দিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি লঞ্চের ত্রুটি, নিরাপত্তা সরঞ্জমাদি না থাকে বা ওভারলোডিংয়ের জন্য মালিককে দায়ী করা যাবে।

জানা গেছে, খসড়াটি আইনে রূপ নিলে ১৯৭৬ সালের অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশটি রহিত হয়ে যাবে। নতুন আইনে আটটি অধ্যায় ও ১২০টি ধারা রয়েছে। খসড়ার ৮৭ ধারায় দুর্ঘটনায় দায়ী (মালিক, চালক বা সংশ্লিষ্ট) ব্যক্তির সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অপরাধ গুরুতর প্রমাণিত হলে নাবিকের সনদ (লাইসেন্স) নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত বা স্থায়ীভাবে বাতিল করা হবে। ৫৫ ধারায় বলা হয়েছে, নৌ-আদালত বিশেষ ক্ষমতাবলে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী প্রত্যেককে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দিতে পারবেন। ক্ষতিপূরণের ওই টাকা আদেশের তিন মাসের মধ্যে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী, আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা পাবেন। লঞ্চে নির্ধারিত সংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করলে যাত্রীপ্রতি ৫০০ টাকা এবং অনূর্ধ্ব দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রী ওঠার সময় মালিক বা তার প্রতিনিধি বা মাস্টার, যে উপস্থিত থাকবে তাকে এ জরিমানা দিতে হবে। তবে এ বিধানের বিরোধিতা করেছেন শ্রমিক নেতারা। একজন শ্রমিক নেতা বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী বা মাল বহন করা হলে বাড়তি আয়ের টাকা মালিক পান। সুতরাং তাকেই এ দায় নিতে হবে। মালিকদের চাপের কারণে এ দায় শ্রমিকের ওপর চাপানো হয়েছে বলে অভিযোগ তার।

জানা গেছে, আইনের ৩ ধারায় সব ধরনের নৌযানকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিবন্ধন ও ফিটনেস সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে কাঠের তৈরি দেশীয় জাহাজ, যা শ্যালোইঞ্জিনে চলে (সর্বাধিক ১৬ বিএইচপি) এমন নৌযানের নিবন্ধন সনদ নেয়ার প্রয়োজন হবে না। আর ৩৩ ধারায় বলা হয়েছে, নিবন্ধন সনদের মেয়াদ হবে ৩০ বছর। অর্থাৎ জাহাজের আয়ুষ্কাল হবে ৩০ বছর। তবে বিশেষ ডকিং (মেরামত) করে পাঁচ বছর করে মোট ১০ বছর মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে এক বছর কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। খসড়া আইনের ৩৬ ধারায় নিবন্ধন ছাড়া যে কোনো ধরনের নৌযান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ আদেশ অমান্য করলে পাঁচ বছর জেল ও এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

খসড়া আইনে, নৌযান নির্মাণে কোনো ত্র“টি করলে ওই জাহাজের মালিক, নির্মাণ সংস্থার (ডকইয়ার্ড) মালিক, নকশা প্রণয়নকারী, তদারককারী ব্যক্তি, প্যানেল সুপারভাইজারের পাঁচ বছর জেল ও তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এবারই প্রথম প্যানেল সুপারভাইজার ও ডকইয়ার্ড মালিককে এ অপরাধে সাজার আওতায় আনা হয়েছে। ৮৩ ও ৮৪ ধারায় নৌযানে যোগ্য ও পর্যাপ্ত সংখ্যক মাস্টার, ইঞ্জিনিয়ার ও ইঞ্জিন ড্রাইভার না থাকলে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া কোনো জাহাজ উপকূলীয় এলাকায় চলাচল করলে সংশ্লিষ্ট মালিক, মাস্টার ও সুকানির সর্বোচ্চ তিন বছর জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। জাহাজে টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্র না থাকলে তিন বছর জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং জীবন রক্ষাকারী যন্ত্রপাতি না থাকলে দুই বছর জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। আইনে নদী দূষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের সাজার বিধানও রাখা হয়েছে। সূত্র : যুগান্তর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়