শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ২১ মার্চ, ২০১৮, ১০:১৮ দুপুর
আপডেট : ২১ মার্চ, ২০১৮, ১০:১৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে ২০ বছর ঘুরছেন ফাতেমা

ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীর মিরপুরে পাইকপাড়ার আহমদনগরে স্ত্রী এবং চার মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে থাকতেন হকার জুম্মন মিয়া। ১৯৯৮ সালে সন্ত্রাসীরা তাঁকে তুলে নিয়ে হাতুড়িপেটায় হত্যার পর অকূল পাথারে পড়ে যান জুম্মনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম। বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে ছেলে-মেয়েদের বড় করেছেন। কিন্তু ২০ বছরেও স্বামী হত্যার বিচার পাননি তিনি।

আদালতে ঘুরতে ঘুরতে হয়রান ফাতেমা সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কুড়ি বছর আগে স্বামীকে ধইরা নিয়া মাইরা ফালাইছে। বিচারের অপেক্ষায় আছি। কিন্তু আর কত দিন? আমার টাকা-পয়সা নাই। স্বামী হত্যার বিচার কি পাব?’

থানা পুলিশ সাক্ষী হাজির করতে না পারায় মামলা ঝুলে আছে জানিয়ে বাদী ফাতেমার প্রশ্ন, ‘২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিতে কত বছর লাগবে? জীবন থাকতে কি বিচার শেষ হবে?’

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ৩ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের সামনে থেকে দুর্বৃত্তরা জুম্মন মিয়াকে ধাওয়া করলে তিনি দৌড়ে পাইকপাড়ার আবদুল হালিমের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে সেখান থেকে তাঁকে টেনে-হিচড়ে ধরে দারুস সালামে এশিয়া সিনেমা হলের পেছনে নিয়ে হাতুড়ি ও ইট দিয়ে পিটিয়ে শরীর থেঁতলে দেওয়া হয়। সেখানে কয়েক ঘণ্টা অজ্ঞান অবস্থায় পড়েছিলেন জুম্মন। উদ্ধার হওয়ার পর স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় দুই দিন পর ৫ ডিসেম্বর তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় ১৯৯৮ সালের ৫ ডিসেম্বর মিরপুর থানায় হত্যা মামলা করেন জুম্মনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম। তাতে মৃত্যুর আগে জুম্মনের বলে যাওয়া হামলাকারী হিসেবে আনিস, আলেক, সামছুদ্দিন, জাবেদ, মনির ওরফে মন্টু ও আবুলকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, হকার সমিতির টাকা-পয়সা লেনদেন নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে জুম্মনকে হত্যা করা হয়েছে।

মামলা দায়েরের পর থেকে ফাতেমা বেগমের অপেক্ষা যেন আর ফুরাচ্ছে না। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কুড়ি বছরেও বিচার অইব না, হেইডা জানতাম না। আমরা গরিব সেই কারণেই বিচার অইত্যাছে না। তবে বিচার অইব কি না হেইডা একটু জানতে চাই।’

মামলার নথি থেকে আরো জানা গেছে, আনিস, আলেক, সামছুদ্দিন, জাবেদ ও মনির ওরফে মন্টুর বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সালের ১৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। এ মামলা বিচারের জন্য ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে ২০০১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। পরে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য নথি পাঠানো হয় ২০০২ সালের ৩ জানুয়ারি। ওই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে একই বছরের ১৬ জুলাই অভিযোগ গঠন করেন।

অভিযোগ গঠনের পর প্রায় ১৬ বছর পার হলেও মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। এত বছরে ২০ জন সাক্ষীর মাত্র দুজন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

নথি ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট মামলার বাদী ফাতেমা বেগম সাক্ষ্য দেন। এর প্রায় এক বছর পর ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট সাক্ষ্য দেন মো. আতাউল্লাহ নামে একজন সাক্ষী।

বাদী ফাতেমা বেগম জানান, মামলায় সাক্ষ্য দিতে হবে তিনি এটাই জানতেন না। তাঁকে কোন আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিতে হবে তাও জানতেন না। তিনি ঢাকার এ আদালত থেকে ও আদালতে বছরের পর বছর ঘুরে মামলার সন্ধান পেয়ে দীর্ঘদিন পর একজন আইনজীবীর মাধ্যমে সাক্ষ্য দেন।

বাদী ফাতেমা বলেন, ‘জীবনে এখন চাওয়া-পাওয়ার কিচ্ছু নাই। শুধু স্বামীকে যারা খুন করেছে তাদের বিচার চাই। আমার ছেলে-মেয়েরাও বাবার খুনের বিচার চায়।’

স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন ফাতেমা। তিনি বলেন, আদালতে ঘোরাঘুরি যে কত হয়রানি আর ভোগান্তি তা যারা মামলায় পড়ে তারাই জানে।

নথি থেকে দেখা যায়, সাক্ষীদের বারবার হাজির হওয়ার জন্য সমন দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হয়েছে। কিন্তু থানা পুলিশ তা কার্যকর করতে পারেনি।

ফাতেমাকে আদালতে সাক্ষ্য দিতে সহযোগিতা করা অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, ২০১৪ সালের দিকে ফাতেমার সঙ্গে তাঁর আদালতেই দেখা হয়। ফাতেমা সাক্ষ্য দিতে পারছেন না, মামলার খোঁজও জানেন না জেনে আদালত খুঁজে বের করেন অ্যাডভোকেট দেলোয়ার। পরে বাদীকে সাক্ষ্য দিতে আদালতে নিয়ে যান।

অ্যাডভোকেট দেলোয়ার বলেন, ‘সাক্ষীদের হাজির করতে আদালতের নির্দেশ পালন করে না স্থানীয় থানা পুলিশ। সাক্ষী হাজির করতে না পারলে একসময় সাক্ষীর অভাবে মামলা প্রমাণ হবে না। বিচার পাবেন না এই স্বামীহারা ফাতেমা।’

এ মামলার ২০ সাক্ষীর ঠিকানা বিভিন্ন থানায়। তবে মিরপুর থানার পাইকপাড়ার সামছুদ্দিন মৃধা ও আবদুস সোবহান নামে দুই সাক্ষীকেও হাজির করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মিরপুর থানার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল বলেন, কিছুদিন আগে পুরনো একটি মামলায় আসামিদের ব্যাপারে আদালতের পরোয়ানা নিয়ে দেখা গেছে, ওই ঠিকানায় এখন আর তারা নেই। এ ব্যাপারে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তবে সেটি এই ঘটনা কি না তা নথি না দেখে বলা মুশকিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। সূত্র : কালের কণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়