শিরোনাম
◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক

প্রকাশিত : ২১ মার্চ, ২০১৮, ০৯:২২ সকাল
আপডেট : ২১ মার্চ, ২০১৮, ০৯:২২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কৌশল পাল্টাচ্ছে দুই দলই

ডেস্ক রিপোর্ট : দিন যত গড়াচ্ছে, স্পষ্ট হচ্ছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বাস্তবতা। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ভেতর ও বাইরে নানাভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি উঠে আসছে। আলোচনা হচ্ছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রসঙ্গ। সে জন্য সাংগঠনিক প্রস্তুতি যেমন নিচ্ছে দল দুটি; তেমনি আঁটছে নির্বাচনী রাজনীতির নানা কৌশল। একদিকে, আওয়ামী লীগ চাইছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে। অন্যদিকে, বিএনপিও চাইছে নির্বাচনে অংশ নিতে। তবে দলের মূল লক্ষ্য আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা।

দেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি বিশ্লেষণ করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে এক ধরনের ইতিবাচক ধারণা মিলেছে। সরকার, নির্বাচন কমিশন (ইসি), ক্ষমতাসীন দল ও শরিকদের বিভিন্ন বক্তব্য, বিএনপির নমনীয় অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নানা পরামর্শ ও আকাক্সক্ষা প্রকাশের মধ্য দিয়ে এমন নির্বাচনের আভাস মিলছে। বিশেষ করে সরকার এ ব্যাপারে তাদের সদিচ্ছা আরো স্পষ্ট করেছে। এ ধরনের নির্বাচন ঘিরে যে সংকট, তা সমাধানের জন্য ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন কূটনৈতিক মহলে তৎপরতাও শুরু করেছে। সরকার চাইছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠেয় আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব দলকে আনতে। এ জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ নানা পর্যায়ে ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানানো হচ্ছে।

যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ ছাড়া তারা এবারও নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু দুর্নীতির দায়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর সে অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। এই মুহূর্তে দলটি নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি কৌশলে এড়িয়ে খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার অবস্থান জানান দিচ্ছে।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রশ্নে ইতিবাচক আভাস দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। তাদের মতে, সরকার প্রকৃতই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে। পরপর দুই দফা ক্ষমতায় থাকার ফলে তাদের উন্নয়ন কর্মকান্ড ও ইতিবাচক রাজনীতি এ ধরনের নির্বাচনের প্রতি আস্থা বাড়িয়েছে। সরকার মনে করছে, রাজনীতির মাঠে বিএনপির যে অবস্থা, তাতে এবারও ক্ষমতায় যেতে পারবে তারা। বরং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক মহলেরও আস্থা বাড়বে। অন্যদিকে, বিএনপি গতবারের মতো নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে কঠোর অবস্থানে যাবে না বলেই মনে হচ্ছে। দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা ও কারান্তরীণ হওয়ায় এমনিতেই দলটি অস্তিত্ব ঝুঁকিতে রয়েছে। আবার আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে আইনি বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। ফলে দলের কৌশল বদলাতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যেকোনো পরিস্থিতি মেনে নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নীতি নির্ধারণী মহলে কথা বলে ও দলীয় সূত্র থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে দলের এমন চিত্র পাওয়া গেছে। তবে দল দুটির নেতারা নির্বাচনী রাজনীতির কৌশল নিয়ে খোলামেলা কিছু বলেননি।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, সাংবিধানিকভাবে যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যেই সরকার কাজ করছে। ইসি তার দায়িত্ব পালন করছে। আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশ নেয় তাহলে সুন্দর পরিবেশ তৈরি হবে।

অপরদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার চেয়ারপারসনকে কারাগারে রেখে একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। আমরা আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করে আনব এবং তাকে নিয়েই আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে।

আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক প্রস্তুতি শুরু করেছে দল। এর অংশ হিসেবে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে কর্মী সমাবেশ শুরু করেছে দলটি। ইতোমধ্যে রংপুর, বগুড়া, কক্সবাজারসহ বেশকিছু জেলায় কর্মী সমাবেশ হয়েছে। চলতি মাসেই আরো দু-তিনটি কর্মী সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। এসব সমাবেশের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে নির্বাচনের আগে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত মিটিয়ে ফেলা। সাংসদদেরও নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় বিরোধ মিটিয়ে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

ক্ষমতাসীনরা এমন ভাবনাও মাথায় রেখেছে যে, এবার সাংবিধানিক সব বাস্তবতা মেনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছাড়া বিএনপির সামনে খুব একটা বিকল্পও নেই। কারণ, পরপর দুবার জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল হওয়ার মতো আইনি জটিলতায় পড়বে বিএনপি। পাশাপাশি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিকে রাজনৈতিক চাপে রাখার কৌশলও নিয়েছে দল। নেতারা মনে করছেন, বিএনপির অবস্থা এমনিতেই খারাপ ও দলটি নানামুখী চাপের মধ্যে রয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে সরকারের কোনো হাত নেই; কিন্তু বিষয়গুলোকে রাজনীতির মাঠে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকি নির্বাচনী মাঠে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে নতুন কৌশলের কথাও ভাবছে ক্ষমতাসীনরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের দুই দায়িত্বশীল নেতা বলেন, এই মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক যে পরিস্থিতি এবং এই পরিস্থিতি যে ভবিষ্যৎ রাজনীতির আভাস দিচ্ছে, তাতে বিএনপিকে এবার শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। অবস্থা এমন দাঁড়াবে যে তাদের জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বাইরে কোনো বিকল্প থাকবে না। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে আওয়ামী লীগকে। সে জন্য সাংগঠনিক অবস্থার দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। ঘর গোছানো হচ্ছে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা বা ঐক্যের প্রক্রিয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রশ্নে ইসির ভূমিকাও ইতিবাচক বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্রমতে, এখন পর্যন্ত ইসিকে নিয়ে বিএনপি বড় ধরনের কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারেনি। বরং ইসিকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। ফলে বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে ভবিষ্যতে আরো সোচ্চার হলেও আওয়ামী লীগ বা সরকার কোনো ছাড় দেবে না। সরকারের নির্বাচনী ব্যবস্থা মেনেই নির্বাচনে অংশ নিতে হবে।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, আমরা চাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করুক। বিএনপিও একটি গণতান্ত্রিক দল, আশা করছি তারাও এ নির্বাচনে অংশ নেবে। নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের কিছু নেই। কারণ আমরা এরই মধ্যে বিভিন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছি- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বাধীন নির্বাচন করা সম্ভব। যারা ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে ভুল করেছে নিশ্চয় এতদিনে তারা সে ভুল বুঝতে পেরেছে।

অন্যদিকে, নির্বাচনে অংগ্রহণের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত ইতিবাচক বিএনপি। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, পরিস্থিতি যেমনই হোক এবার নির্বাচনের বাইরে থাকতে চাইবে না বিএনপি। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট দাবি দাওয়া পূরণ হোক বা না হোক দলটি এবার নির্বাচনী মাঠে থাকবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে কারণ দেখিয়ে নির্বাচনে যায়নি বিএনপি; এবার সেই একই কারণ রাজনীতির মাঠে থাকলেও নির্বাচনে অংশ নেবে দলটি। যদিও দলের একটি কট্টর অংশ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এবং খালেদাবিহীন নির্বাচন নয় বলে যে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন; তা শেষ পর্যন্ত থাকবে বলে মনে হয় না। দুর্নীতির মামলায় খালেদার জিয়ার সাজা ও জেল পরবর্তী বিএনপির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনী রাজনীতির কৌশল অনেকটাই পাল্টে যাচ্ছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া বিএনপির সামনে করণীয় নেই বলে মনে করা হচ্ছে। দলে নেতারা মনে করেন, সামনের দিনগুলোতে বিএনপির রাজনৈতিক কৌশলই হবে নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করা। সম্ভবত দলটির নেতারা সেই দিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন।

দলীয় সূত্রগুলো জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সরকারের অধীনে হলে নিজেদের করণীয় কী হবে, খালেদাবিহীন নির্বাচনের পরিণতি কেমন হতে পারে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে খালেদাবিহীন সংগঠন দিয়ে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করা কতটা সম্ভব- সেসব হিসেব নিয়ে অঙ্ক কষছে দলের নীতিনির্ধারকরা। তাদের মতে, বিএনপি নির্বাচনে না গেলে সরকার একটি ‘ব্র্যাকেট বিএনপি’ বানিয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করতে পারে। সেক্ষেত্রে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ওয়ান ইলেভেনের মতো ধানের শীষও কেড়ে নিতে পারে। এমন সব চিন্তা থেকে দলটির নেতারা নির্বাচনে অংশ নেয়াকেই বর্তমান সময়ের সঠিক কাজ বলে মনে করছেন। এর বাইরে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে দলের নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকিও কম নয়। তারা এমনও মনে করছেন, নির্বাচনে না গেলে দলের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। এমতাবস্থায় আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ জরুরি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দলের ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমাদের দলীয় চেয়ারপারসনকে ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। তাকে মুক্ত করেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি। সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়