শিরোনাম
◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ২০ মার্চ, ২০১৮, ০৪:৪৭ সকাল
আপডেট : ২০ মার্চ, ২০১৮, ০৪:৪৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এভাবে আমরা বারবার কাঁদতে চাই

মোহাম্মদ আবু নোমান : দেশে ঘুষ ছাড়া চাকরি কতটা দুষ্প্রাপ্য এ কান্না তার প্রমাণ। বর্তমান সময়ে যা অকল্পনীয়, অচিন্তনীয় ও অভাবনীয় ঘটনা। ঘুষ ছাড়া চাকরি! সোনার বাংলায় এটাও আবার তাহলে সম্ভব?

এতদিন কি তাহলে সব চাকরি ঘুষ দিয়ে হয়েছে? আজ ঘুষ ছাড়া হয়েছে মানে আগে ঘুষ লাগত? বগুড়ায় পুলিশ কনস্টেবল পদে পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হওয়া প্রার্থীর অনেক অভিভাবকের দাবি, এবার ঘুষ ছাড়াই চাকরি হয়েছে। সন্তানদের ঘুষ ছাড়াই চাকরি হয়েছে এই খুশিতে শতাধিক অভিভাবক বগুড়ার পুলিশ সুপারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় অনেকে আনন্দে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন।
এমন কান্না, এভাবে কান্না আমরা বার বার কাঁদতে চাই। তবে একথা মনে রাখতে হবে, ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়ে যেমন অনেক তরুণ-তরুণী ও অভিভাবক আজ কাঁদলেন, তদ্রুপ ঘুষ ছাড়া চাকরি না পেয়ে দেশের হাজার হাজার অভিভাবক এখনও কাঁদছেন।

অভিভাবকদের উদ্দেশে পুলিশ সুপার মো. আলী আশরাফ ভুঞা বলেন, শতভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবারে কুলি, শ্রমিক, ভ্যানচালক, ভূমিহীন বর্গাচাষি, দিনমজুর ও ডাব বিক্রেতার সন্তানেরাও নিয়োগের জন্য উত্তীর্ণ হয়েছেন।
আমাদের দেশে সব পুলিশ যদি পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞার মত হতো তাহলে দেশটা বহু আগেই অনেক দূর এগিয়ে যেত। ভালো মানুষ সব সেক্টরেই আছেন, তবে সংখ্যাটা নিতান্তই কম।

ভাল কাজকে ভাল বলেই গণ্য করতে হবে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সে যেই করুক। সবকিছু দলীয়ভাবে দেখলে চলবেনা। আলী আশরাফ ভুঞার এই কাজকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হবে। দেশব্যাপী এর সাথে পুলিশ দ্বারা হয়রানি কমিয়ে আনতে পারলে ধীরে ধীরে পুলিশ মানুষের আস্থার জায়গা দখল করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

পুলিশের চাকরির মতো সরকারী অন্যান্য চাকরির বেলায়ও ঘুষ ছাড়া লোক নিয়োগ করতে হবে।
ঘুষখোর হানাদার বাহিনীর চাইতেও নিকৃষ্ট, তারা বাঙ্গালী জাতিকে একসময়ই মেরেছিল। আর ঘুষখোররা প্রতি পদেপদে স্বাধীন দেশের সাধারণ মানুষদের মারছে। ঘুষ ছাড়া চাকরি বিশ্বের সর্বত্রই স্বাভাবিক ও নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হলেও বাংলাদেশে তা আকাশের তারা হাতে পাওয়ার সমতুল্য। এটা বিরাট আশার কথা।

এই দৃষ্টান্ত সর্বত্র প্রয়োগ হবে এ আশাই সর্বসাধারণের। পৃথিবীর অন্য দেশ পারলে আমরা পারব না কেন? বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা প্রমাণ করলেন আমরাও পারি সৎ পথে চলতে।
তবে একথা ঠিক যে, ঘুষ ছাড়া চাকরি হলো এটা যেমন সত্যি, আবার বেশীরভাগ যায়গায় ঘুষ ছাড়া চাকরি হচ্ছে না এটাও সত্যি। এই ঘুষ ছাড়া চাকরি যেন, ঘুষ খাওয়া ছাড়া চাকরির জীবন হয়, তাহলেই একদিন বাংলাদেশের সব বদলে যাবে।
এ ধরনের সংবাদ সত্যি আশা জাগানিয়া। বেশীরভাগ তরুণদের জীবনের সঙ্গে মিলছে না। এটাও আবার সম্ভব নাকি?

পুলিশ সুপার আলী আশরাফ দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। যা তার ক্যারিয়ারের জন্য গর্বের কারণের সাথে অধস্তন অন্য তরুণ অফিসারদের রোল মডেলসহ উজ্জ্বল ভবিষৎতে জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। নষ্ট সময়ে চারপাশ যখন কালো ছায়ায় ঢেকে গেছে তখন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের গোস্সা, সুপারিশ ও রক্ষচক্ষু উপেক্ষা করে এ ধরনের নিয়োগের ঘটনা পরিবর্তনের বার্তা দিয়ে যায়। যদিও পুলিশ সুপার আলী আশরাফের ডুবন্ত তরী উদ্ধারে ক্ষুদ্র চেষ্টা মাত্র।

তারপরও অনেক তরুণ-তরুণী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেনÑ ‘পুলিশ সুপার আলী আশরাফকে সহস্র স্যালুট ও তার পায়ে সালাম’। আসলে যে কোন দৃষ্টান্তকে উৎসাহিত করা হলে সেটা ভবিষ্যতে অন্যদের পরিবর্তনের সূচনার কারণ হতে পারে। তাছাড়া ঘুষ ছাড়াও চাকরি হয়, এই কথা আমাদের মেন্টালিতে গেঁথে নিলে হয়ত অনেকেই সেই আশায় ভাল কিছু করার চেষ্টা করবে। অনেকে হয়ত এই কথা বিশ্বাস করে ঘুষ দিতেও অনাগ্রহী হবে।
ঘুষ ছাড়াই চাকরী প্রাপ্য, এবং যারা পেয়েছেনও। এখন ঘুষ ছাড়া সেবাও জনগণের প্রাপ্য। যাদের টাকা ছাড়া চাকরি হয়েছে, জনগণ আশা করে তারা কখনই খারাপ পথ অবলম্বন করবেন না। নিয়োগের পর তারা কেউ ঘুষ খাবে না এই নিশ্চয়তা দিতে হবে। এমনটা যেন না হয়, আজ যারা ঘুষ ছাড়া চাকুরী হওয়াতে খুশিতে কাঁদছেন, তারাই একদিন ঘুষ নিয়ে কত জনকে কাঁদাবেন। যেভাবে তারা কোনো দুর্নীতি ছাড়া চাকরি পেয়েছেন, এভাবে নিজেদের চরিত্রও দুর্নীতি মুক্ত রাখবেন।

এছাড়াও আপনাদের দারা জনগণের জানমালের ক্ষতি সাধন হবে না। এভাবে দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ হলে। তাহলেই ক্ষুদা মুক্ত, দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ পাওয়া সম্ভব।
বগুড়ার কুলি শ্রমিক তোতা শেখ, বর্গাচাষি তফসির উদ্দিন, ভ্যানচালক শাহিদুল ইসলাম, হতদরিদ্র গৃহবধূ ফাতেমার স্বামী শারীরিক প্রতিবন্ধী মুকুল মিয়া, জান্নাতুল পারভীনের মা সালমা বেগম ও চন্দনবাইশা ডিগ্রি কলেজের পিয়ন মাইনুল ইসলামসহ যাদের সন্তানদের চাকরি হয়েছেÑ আপনার সন্তানটির যেদিন চাকরিতে প্রথম জয়েন হবে সেদিন তার মাথায় হাত রেখে বলুনÑ আজ হতে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজে-কর্মে ও চিন্তায় সৎ তোমারা থাকবে।

জীবনে বেঁচে থাকার জন্য পুলিশের এ চাকুরিটুকু যথেষ্ট।
পরিশেষে এতোগুলি মানুষের আনন্দাশ্রু আর হাসি মুখের কারণ যিনি, সেই বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞাকে আবারও অভিনন্দন, অভিবাদন ও প্রীতিসম্ভাষণ। আপনি অমর, অক্ষয় থাকবেন এই ২শত পরিবারসহ সারা দেশের মানুষের হৃদয়ে। আপনার সততা, সাধুতা, ন্যায়পরায়ণতা হোক দৃষ্টান্ত নতুন প্রজন্মের কাছে। মহান আল্লাহ তায়লা আপনার মঙ্গল করুন।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়