সুশান্ত সাহা : পরিবার-পরিজনের সঙ্গে নেপালে ঘুরতে গিয়ে স্বামী ও এক মাত্র মেয়েকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে গাজীপুরের আলমুন নাহার অ্যানি। মেয়ে তামারা প্রিয়ন্ময়ী ও স্বামী প্রিয়কের মৃত্যু মানতে পাড়ছেনা অ্যানি।
প্লেন দুর্ঘটনায় অ্যানি আহত হয়ে বেশ কিছুদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সোমবার বিকেলে হাসপাতাল ছেড়েছেন তিনি। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শ্রীপুরের গ্রামের বাড়ি নগরহাওলায় পৌঁছান তিনি। সেখানে তাকে তার স্বামী এফএইচ প্রিয়ক ও মেয়ে তামাররা প্রিয়ন্ময়ীর মৃত্যু সংবাদ দেওয়া হয়। তবে তিনি কিছুতেই তা বিশ্বাস করতে চাইছেন না।
তিনি বলেছেন, আপনারা মিথ্যা বলছেন। ওরা আছে। না হলে তাদের দেখান। রাত ৮টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুরের বাড়ি লাশ পৌঁছালে, আর সাথে সাথে ডুপ্লেক্স বাড়িটি থেকে উঠে গগনবিদারী চিৎকার।
চিৎকার করে অ্যানি বলেন, ‘আমার কেউ নেই, তোমরা সবাই চলে যাও। আমাকে একা থাকতে দাও।’ স্বজনরা বেডরুমের দরজাটি বন্ধ করে যতটা সম্ভব ভিড় করা লোকজন সরিয়ে দেন। অ্যানি একবার ডুকরে কেঁদে ওঠেনতো আরেকবার কেঁপে কেঁপে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে চান। ডুপ্লেক্স ওই বাড়িটিতে শত শত মানুষ। সে বাড়ির দোতলায় মূল বেডরুমে পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে শুয়ে ছিলেন ফারুক হোসেন প্রিয়কের স্ত্রী আলিমুন্নাহার অ্যানি। তাকে ঘিরে আপনজনেরা। কেউ পায়ে তেল দিচ্ছেন তো কেউ মাথায় পানি দিয়ে দিচ্ছেন।
অ্যানির দুলাভাই আলতাফ হোসেন বলেন, ‘অ্যানি স্বাভাবিক নেই। একবার বিশ্বাস করে তার স্বামী-সন্তান মারা গেছে তো আবার বলে ওরা মারা যায়নি। আশেপাশে মানুষের ভিড় সহ্য করতে পারছে না।
নিহত প্রিয়কের মামাতো ভাই সানি আহমেদ জানান, বাড়িতে পৌঁছানোর প্রায় ২০ মিনিট পর অ্যানিকে তার স্বামী ও মেয়ের নিহতের খবর জানান তার বান্ধবী রাবেয়া আক্তার রাবু। কিন্তু অ্যানি তার স্বামী সন্তান নিহত হয়েছে তা বিশ্বাস করেনি। এক পর্যায়ে তিনি তার স্বামী সন্তানের মরদেহ দেখতে চান।
এদিকে, ছোট্ট তামারা প্রিয়ন্ময়ী দেহাবশেষ চোখের সামনে দেখার পর তাদের কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। অঝোরে কেঁদেছেন অনেকেই। নেপালের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় হতাহতদের সহযোগিতায় এগিয়ে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছয় চিকিৎসক। সেখানে গিয়ে তারা আহতদের চিকিৎসা ও নিহতদের মরদেহ শনাক্তে ব্যস্ত সময় পার করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় অ্যানির স্বামী ও মেয়ে মারা যাওয়ার পর অ্যানিকে তা জানানো হয় নি। চিকিৎসার জন্য অ্যানি, তার দেবর মেহেদী ও মেহেদীর স্ত্রী স্বর্ণাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।
এর আগে গত ১৬ মার্চ কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অ্যানি, তার দেবর মেহেদী হাসান এবং তার স্ত্রী সৈয়দ কামরুন নাহার স্বর্ণাকে ঢাকায় আনা হয়। এরপর থেকে তারা ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :