দীপক চৌধুরী : আইনের কথা এটি যে, বর্তমান সংসদে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিত্ব না থাকায় নির্বাচনকালীন ওই মন্ত্রিসভায় তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকবে না। বিএনপির চিন্তার মধ্যে তা আছে কিনা জানি না। শুধু চিৎকার করা, প্রতিবাদ জানানো আর কান্না করা এক কথা নয়। বিএনপি যা করছে তা কোনোটিই না। পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে কয়েক ধাপে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা হবে। রাজনৈতিক অবস্থার গতিপথ দেখে মনে হচ্ছে, বিএনপির চিন্তা-কল্পনাতেও যা ছিল না, তাই হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত হতে পারে, আমরা এটা চিন্তাও করতে পারিনি।’ কুমিল্লার অপেক্ষমান (পেনডিং) মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো।
স্বাভাবিকভাবে অরফানেজ মামলায় তাঁকে জামিন দেওয়া হলেও কুমিল্লার মামলায় যদি জামিন না হয়, তাহলে তিনি বের হতে পারবেন না। বিএনপি ভেবে নিয়েছিলো, খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর সাহস হবে না, এরপর ভেবেছিলো, জামিন বিলম্ব করার সাহস হবে না কারো। আসলে এখানে আদৌ কী ভাবনা-চিন্তার কিছু আছে? দলটির নেতারা কখনো কী ভেবে দেখেছেন, যাঁর ডাকে দেশের ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে, কয়েকলাখ মা- বোনের ইজ্জত সম্ভ্রম গেছে, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে; পৃথিবীর ইতিহাসে অভ্যূদ্বয় হয়েছে বাংলাদেশের! কার ডাকে? কেবল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে। তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে আস্ফালন চলবে না, কোনো ‘হম্বিতম্বি’ চলবে না। গায়ের জোরে ঝগড়া বাঁধানো সম্ভব। বিচার বিভাগকে জিম্মি করার খেলা কিন্তু কম দেখিনি। টাকা ঢেলে রাজনীতি করানো হতো। সেই অভিজ্ঞতা যাদের রয়েছে; কেবল তারাই জানেন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর রাজনীতির নামে কী ধরনের অপসংস্কতি হয়েছে। আজ বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমরা কিছুটা হলেও বের হতে পেরেছি।
শাসন ব্যবস্থা পাল্টেছে। ইঙ্গিতে খুন করা কঠিন, ইঙ্গিতে জামিন হওয়াও কঠিন। বাস্ক-পোঁটরা আর ছেঁড়া স্যুটকেস থেকে কোটি কোটি ডলার বের হয়েছে এক সময়। এখন তা সম্ভব নয়। দিন বদলেছে, সময় বদলেছে, এই দিন আর সেইদিন নেই। সকল ক্ষেত্রেই অগ্রগতি হয়েছে। দরকার তো দূরদর্শিতার। আজ বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলো পুলিশ নিয়ে কতো রঙের কথা বলে। নারী পুলিশতো তারা চিন্তাই করতে পারতো না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ উদ্যোগে বাংলাদেশ পুলিশে নারীর অন্তর্ভুক্তি ঘটে ১৯৭৪ সালে, মাত্র ১৪ জন নারীর যোগদানের মধ্য দিয়ে। তাঁরা নারী পুলিশের যে প্রগতির সূচনা করেছিলেন তা আজ সাফল্য ও দক্ষতার মানদ-ে সুসংহত হয়েছে। বর্তমানে পুলিশে নারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৭৬৭ জন, যা পুলিশের মোট জনবলের প্রায় ৬.৬৬ ভাগ। এখন দিন বদলেছে, স্পিকার নারী, বিরোধীদলের নেতা নারী, সচিব নারী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও নারী।
যে বাধা ছিল; তা অতিক্রম করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। রাজনীতি, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে সশস্ত্র বাহিনী, বিচার বিভাগ, ব্যবস্থা ও ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের পদচারণার চোখে পড়ে। নিশ্চয়ই অনেকে জানেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাজে বদল ঘটে, চিন্তা-চেতনা বদলায়। পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কয়েক ধাপে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ১৭ মার্চ টাঙ্গাইলে এক অনুষ্ঠানে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, সংসদ নির্বাচন কয়েক ধাপে করার পরিকল্পনা রয়েছে। ছবিসহ ভোটার আইডি কার্ড হওয়ায় ফলে এখন আর জালিয়াতির নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তবে প্রয়োজনে প্রচুর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকবে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ঔপন্যাসিক/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
আপনার মতামত লিখুন :