শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ১৯ মার্চ, ২০১৮, ০৪:০৯ সকাল
আপডেট : ১৯ মার্চ, ২০১৮, ০৪:০৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গ্যাং কালচার এবং ভেঙে পড়ার গল্প

কাকন রেজা : কদিন আগের ঘটনা। চট্টগ্রামে মুক্তিপণের টাকা নিতে এসে গ্রেপ্তার হয়েছে ‘কিশোর গ্যাং’এর চারজন। এই চার জনের মধ্যে একজন সদ্য কলেজে উঠেছে, বাকী রা স্কুলের দশম শ্রেণির গন্ডিতে। এদের হাতে অপহৃত হয়েছিলো অষ্টম শ্রেণিতে পড়–য়া আরেক কিশোর। শুধু অপহরণ নয় অপহরণের পর গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে অপহৃত ছেলেটিকে। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় মরে গেছে ভেবে তাকে ফেলে আসে তারা। এরপর, দশ লাখ টাকা মুক্তিপন চেয়ে ফোন করে অপহৃতের অভিভাবকদের।

পুরো যেন দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা। ভাগ্য ভালো অপহৃত ছেলেটি মারা যায়নি, জ্ঞান ফিরে পেয়ে সে ঘটনাটি জানায়। পরিণতিতে পুলিশের জালে আটকাপরে চারজন।
‘গ্যাং কালচার’ বিষয়ে আগেও লিখেছিলাম। ‘গ্যাংওয়ারে’ খুন হওয়া ঢাকার উত্তরার এক কিশোর কে নিয়ে লিখেছিলাম ন সে সময়। সাথে লিখেছিলাম ‘গ্যাং কালচার’এর শিকার আমার এক ভাইয়ের ছেলে ‘শানিন’ এর কথা। যে আজ এক বছর ধরে ‘কমা’ য়। আজো তার বাবা এবং আমরা আশায় আছি কখন সে ‘কমা’ থেকে ফিরবে। আজ মনেহচ্ছে আমার সেই ভাইয়ের ছেলে নয়, আজকে পুরো সমাজটাই ‘কমা’য়।

নাহলে কিশোর-তরুণরা এভাবে ধ্বংসের পথে কেনো! কদিন আগেই চট্টগ্রামে অস্ত্রসহ ধরা পড়লো কিশোর গ্যাং এর কয়েকজন। তারা বড় ভাইয়ের নির্দেশে যাচ্ছিল অস্ত্র নিয়ে কথিত অ্যাকশনে। যাবার সময় পুলিশ বাধা দিলে তারা অবলীলায় পুলিশের উপর গুলি ছুড়েছে। কল্পনা করুন তো কী ভয়াবহ দৃশ্য,কজন দাঁড়ি/গোফ না উঠা ছেলে অনায়াসে পিস্তলের গুলি ছুড়ছে পুলিশের উপর। এক সময় পুলিশের নামে সন্ধ্যায় ঘর থেকে বের হওয়া অনায়াসেই বন্ধ করা যেতো এমন কিশোর-তরুণ দের। জুজুর মতন ভয় পেতো তারা পুলিশকে। কিন্তু এখন? এখন তারা ডরভয় হীন সকল হীন কাজে!

কেনো এমন হলো? এমন প্রশ্নের একটি সহসা উত্তর হচ্ছে, অপরাধ কে করছে বা করাচ্ছে এমন ‘আইডেন্টিফিকেশনে’র সমস্যা। রাতের অন্ধকাওে বা প্রকাশ্যে দিনের আলোয় মানুষ তুলেনিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কারা নিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে ধোঁয়াশার। অপহরণকারী চক্র, কিলার গ্রুপ না কোন এজেন্সি, প্রায় ক্ষেত্রেই আইডেন্টিফিকেশন সম্ভব হচ্ছেনা। সুতরাং চিহ্নিত না করতে পারার এইযে ট্রেন্ড এতে সবাই ট্রেন্ডি হচ্ছে, সুযোগ নিচ্ছে। অপরাধী আর অপরাধ নিবারণকারী রা হচ্ছে মিলেমিশে একাকার।

এখন কিশোর-তরুণদের ব্যাপারে বলি। এমন উঠতি বয়সীদেও অপরাধী হবার পেছনে কাজ করছে শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিধ্বস্ত অবস্থা। শিক্ষার বিষয়টি সবার জানা। পলিটিক্যাল ফটকাবাজ, অসৎ ব্যবসায়ী, ঘুষখোর কর্মকর্তা-কর্মচারি এমন সব দেও ছেলে মেয়েরা আগাম প্রশ্ন পেয়ে আনন্দে পরীক্ষা দেয়। আর হালাল অর্থে কষ্টে বেড়ে উঠা ছেলে মেয়ে দেও রাত জেগে পড়েও শংকা নিয়ে পরীক্ষায় বসতে হয়। তারপরও কথিত ‘জিপিএ ফাইভ’ প্রায় শ থাকে তাদেও নাগালে রবাইরে। ফলে শিক্ষা ও অর্থ এ দুটি ক্ষেত্রে সততা বিষয়ে সৃষ্টি হয় বিরূপতার। আর এই বিরূপতা থেকে হতাশা। যার অবিশম্ভাব্য পরিণতি সামাজিক বিশৃংখলতা। হঠাৎ ধনী এবং সহসা জিপিএ ফাইভ পাওয়াদের নিয়ে এমনিভাবে সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক ভারসাম্যহীনতার, বৈষম্যের।

আর যে সমাজে বৈষম্য প্রবল হয়, সে সমাজের ভেঙ্গে পড়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। যার লক্ষণ আমাদেও নিজ সমাজে ক্রমেই দৃশ্যমান।

ফুটনোট : একটা দেশ ও তার সমাজ গড়ে উঠার পেছনে কাজ করে রাজনীতি। দেশ ও সমাজ পরিচালনার সকল নীতিনির্ধারিত হয় রাজনীতির মাধ্যমেই।সকল ভাঙ্গনের শুরু হয় চূড়ার দিক থেকে। সমাজ বিনির্মানের চূড়া তে থাকে রাজনীতি এবং ভাঙ্গনের চূড়াতেও। প্রথমে রাজনীতি ভেঙ্গে পড়ে,তারপর সমাজ এবং সকল কিছু।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়