শিরোনাম
◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ১৯ মার্চ, ২০১৮, ১০:৩২ দুপুর
আপডেট : ১৯ মার্চ, ২০১৮, ১০:৩২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চলচ্চিত্রের দুর্দিনে প্রযোজক নয়, দরকার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান

ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস দীর্ঘ ও গৌরবের। ঢাকাই সিনেমা দেশের বাইরেও সুনাম অর্জন করেছে। এক সময় দেশের তেরশ সিনেমা হলে প্রতি সপ্তাহে একাধিক সিনেমা প্রদর্শিত হতো। কিন্তু বর্তমানে চলচ্চিত্র নির্মাণ সংখ্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা কমে গেছে। প্রায় তিনশ সিনেমা হল এখন চলছে।

চলচ্চিত্রের মন্দার বাজারে প্রতীক্ষা ও আশার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ২০১৮ সাল। বছর শুরুর প্রথম মাসের দুই সপ্তাহ চলেছে দেশীয় সিনেমা। ‘দেমাগ’, ‘পুত্র’, ‘পাগল মানুষ’, ‘হৈমন্তী’ সিনেমাগুলো মানহীনতার কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে। মাসের তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে দেশীয় সিনেমা মুক্তি পায়নি। এ সময় সাফটা চুক্তির মাধ্যমে কলকাতার দুটি সিনেমা বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। দর্শক এ দুটি সিনেমা প্রত্যাখ্যান করেছেন। দর্শকদের হলমুখী করতে ব্যর্থ হয়েছে ‘জিও পাগলা’ ও ‘ইন্সপেক্টর নটি কে’।

ফেব্রুয়ারিতে এসে দেশীয় ও বিদেশি সিনেমা না থাকায় সিনেমা শূন্য হয়ে পড়েছে প্রেক্ষাগৃহগুলো। প্রথম সপ্তাহে নতুন কোনো সিনেমা মুক্তি না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে পুরোনো সিনেমা আর ময়ূরী, পলির অশ্লীল সিনেমা দিয়েই হলগুলো চালাতে হচ্ছে মালিকদের। গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে মুক্তি পায় ‘ভালো থেকো’। এই সিনেমাটিও প্রযোজক ও হল মালিকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। তৃতীয় সপ্তাহ আর্থাৎ ১৬ ফেব্রুয়ারি এসে বিগবাজেটের দুটি সিনেমা মুক্তি পায়। দেশীয় সিনেমা ‘আমি নেতা হব’ ও যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘নূরজাহান’ মুক্তি পায়। এরপর আবার সিনেমা শূন্য হয়ে পরে প্রেক্ষাগৃহ। পরপর চার সপ্তাহ নতুন কোন সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়নি। বলা চলে একমাস সিনেমা শূন্য প্রেক্ষাগৃহ।

এভাবে চলতে থাকলে হল মালিকদের লোকসান গুনতে গুনতে একসময় বাধ্য হয়ে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করে দিতে হবে। মানসম্পন্ন নতুন সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলে দর্শক আবার হলমুখী হবেন। হল মালিকদের লোকসান গুনতে হবে না, প্রযোজকরাও ফিরে পাবেন তাদের লগ্নীকৃত অর্থ। এদিকে কিছুদিন আগে যৌথ প্রযোজনার সঠিক নিয়ম-নীতি নিয়ে রাজপথে নেমে আন্দোলন করেছেন চলচ্চিত্র ১৮টি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সফলও হয়েছেন আন্দোলন করে। যে কারণে যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা নির্মাণ হলেও কলকাতার সিনেমা বলে সাফটা চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে অবাধে ছবি মুক্তি দেয়া হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের বোকা বানিয়ে তাদেরই নাকের ডগা দিয়ে ওপার বাংলার সিনেমা এভাবে এ দেশে মুক্তি পাচ্ছে। সিনেমা শূন্য প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা বাধ্য হয়ে এসব সিনেমা চালাচ্ছেন। দর্শকও বাধ্য হয়ে এসব সিনেমা দেখছেন। কিন্তু আন্দোলনকারীদের কেউ এখনও পর্যন্ত নতুন কোন সিনেমা প্রযোজনা করেননি। এমনকি নতুন কোন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসছে না সিনেমা নির্মাণে। প্রযোজক না আসার কারণেই সিনেমার সংখ্যা তলানিতে ঠেকেছে।

অতীতে দেশের স্বনামধন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন। আর এ ধরনের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের তালিকাও বেশ লাম্বা। যেমন আলমগীর পিকচার্স। এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার এ কে এম জাহাঙ্গীর খান যাকে সবাই ‘মুভি মোঘল’ নামে চেনেন। নায়করাজ রাজ্জাকের রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন হাউজ থেকেও অনেক ছবি প্রযোজনা করা হয়েছে। আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেড ও ছায়াছন্দ চলচ্চিত্র থেকেও প্রযোজনা করা হয়েছে কিছু ছবি। এছাড়া এস এম তালুকদার মান্নার(নায়ক মান্না) কৃতাঞ্জলি চলচ্চিত্র, চিত্রনায়িকা শাবানার এস এস প্রোডাকশন, নায়ক জসিমের জ্যাম্বস ইন্টারন্যাশনাল লি., মনোয়ার হোসেন ডিপজলের অমি বনি কথাচিত্র, শফি বিক্রমপুরীর যমুনা ষ্টার লি., দিলীপ বিশ্বাসের গীতি চিত্রকথা, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানার পারভেজ ফিল্মস, এছাড়াও আরো চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ছিলো। যেসব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বছরে ৩-৫টি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন। এসব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শুধু নামেমাত্র সিনেমা প্রযোজনা করেনি। এ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ সিনেমাই ছিলো ব্যবসা সফল ও জনপ্রিয়। এ সবই অতীত।

নব্বই দশকের শেষের দিকে অধিক লাভের আশায় এক দল অসাধু লোভী প্রযোজক নির্মাণ করেন অশ্লীল সিনেমা। এ ঝড় ঢাকাই চলচ্চিত্রের শক্ত অবস্থান ভেঙে তছনছ করে দেয়। দর্শক পরিবার-পরিজন নিয়ে হলে যেতে বিব্রত হতে শুরু করেন। আস্তে আস্তে হলবিমুখ হয়ে পড়েন দর্শক। এরপর থেকে এখনও ঘুড়ে দাঁড়াতে পারেনি চলচ্চিত্র শিল্প। বর্তমানে প্রযোজকহীনতায় ভুগছে চলচ্চিত্র শিল্প। বর্তমান সময় একাধিক চলচ্চিত্র প্রযোজনা করছে এমন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হাতে গোনা দু-একটা। এর মধ্যে কোন কোন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টেলিভিশনে প্রচার করার জন্য সিনেমা নির্মাণ করেন। নামেমাত্র একটি বা দুটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিয়ে থাকে এসব সিনেমা। গত পাঁচ বছর দেশের অধিকাংশ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে একটি করে সিনেমা তৈরি হয়েছে। হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একাধিক সিনেমা নির্মাণ করেছে। সেখানে গত পাঁচ বছরে জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজনা করেছে ত্রিশটি সিনেমা। চলচ্চিত্রের মন্দা বাজারে এটি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া হার্টবিট বছরে একটি সিনেমা প্রযোজনা করেছে। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম বছরে একাধিক সিনেমা নির্মাণ করলেও তা অধিকাংশই আর্টফিল্মের তকমা পেয়েছে। প্রেক্ষাগৃহে এসব সিনেমার চাহিদা নেই বললেই চলে। এছাড়া কিছু প্রযোজক চলচ্চিত্র প্রযোজনা করতে আসেন। এরা হয়তো জীবনে একবারই সিনেমা প্রযোজনা করেন। আবার কিছু প্রযোজক চলচ্চিত্রে এসেছেন চিত্রনায়িকার হাত ধরে। আবার কেউ কেউ আসেন নিজেই সিনেমার নায়ক বা প্রেমিকাকে নায়িকা বানানোর জন্য। এসব কারণে চলচ্চিত্রে ব্যবসা বা লোকশান নিয়ে এদের মাথা ব্যথা নেই। চলচ্চিত্র মুক্তির পরই এরা লাপাত্তা।

ঢাকাই চলচ্চিত্রে এক ধরনের মৌসুমী প্রযোজকের আর্বিভাব এখন বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। এরা চলচ্চিত্র নির্মাণে মানের তোয়াক্কা না করেই প্রযোজনা করছেন। অপেশাদার এসব প্রযোজক অদক্ষ্য লোক দিয়ে সিনেমা পরিচালনা করেন। এই পরিচালকদের তালিকা বড় হচ্ছে। কিন্তু মানসম্পন্ন সিনেমার তালিকা ছোট হচ্ছে। একটি সিনেমা পরিচালনা ও সেখানে অভিনয় করেই নির্মাতা বা শিল্পীর নামের সঙ্গে ‘পরিচালক’ বা ‘শিল্পী’র তকমা লেগে যায়। এই পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সুবিধাও নিচ্ছেন এসব অদক্ষ নির্মাতা ও শিল্পীরা। তাদের মানহীন সিনেমা দেখে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন দেশীয় সিনেমা থেকে। এর প্রভাব দিনে দিনে বাড়ছে।

ঢাকাই চলচ্চিত্রের এই পড়ন্ত বিকালে শুধু প্রযোজক নয়, দরকার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। যেগুলো থেকে বছরে কমপক্ষে ছয়টি সিনেমা প্রযোজনা করা হবে। এমন পাঁচটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থাকলেই চলচ্চিত্রের বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে। ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা না করে সিনেমা নির্মাণের প্রতিযোগিতা করলেই এদেশের শিল্পী ও কলাকুশলীরা কাজের সুযোগ পাবেন। ফিরে আসবে চলচ্চিত্রের সুদিন। সূত্র : রাইজিংবিডি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়