শাকিল : ২৪ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশকে ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পাঁচ লাখের বেশি মানুষের জমায়েতের লক্ষ্য নিয়ে আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে দলটি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যুগান্তরকে জানান, এবারের সমাবেশটি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওইদিন রাজধানী থাকবে জাতীয় পার্টির দখলে। জাতীয় পার্টির শক্তি এবং সামর্থ্যরে বিষয়টিও জানান দেয়া হবে সমাবেশের মধ্য দিয়ে। দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি বলেন, ‘নির্বাচনের বছরে মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টির শক্তিমত্তার জানান দেয়া হবে। এ সমাবেশ থেকে নির্বাচনী রোডম্যাপও ঘোষণা করা হবে।’
জানা গেছে, ইতিমধ্যে সমাবেশের মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার শনিবার রাতে মঞ্চ নির্মাণের কাজ সরেজমিন তদারকি করেন। দলের শীর্ষ নেতারা এসময় তার সঙ্গে ছিলেন। মহাসমাবেশের দিন যাতে কোনো ধরনের নাশকতা না ঘটে এ জন্য নেয়া হয়েছে বাড়তি পদক্ষেপ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জাতীয় পার্টির একটি নিজস্ব টিম নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করবেন। এছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা নেতাকর্মীদের যাতে কোনো ধরনের
সমস্যা না হয় তা দেখভাল করার জন্যও একটি টিম গঠন করা হয়েছে। মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের নেতাদের খাবারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। চলছে সাজসজ্জার কাজও। শাহবাগ থেকে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত এলাকাজুড়ে মাইক লাগানো হবে। থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি বলেন, ‘আমাদের সামনে এখন একটাই লক্ষ্য- তা হচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভালো ফল অর্জনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় নেয়া। যেহেতু নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই, দেখতে দেখতে সময় ঘনিয়ে এসেছে তাই আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই ২৪ মার্চ ঢাকায় মহাসমাবেশ করতে যাচ্ছি। এটি হবে স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশ।’ তিনি বলেন, ‘পাঁচ লাখের বেশি লোক এদিন সমবেত হবে। কেবল পার্টির শক্তি এবং সামর্থ্য জানান দিতেই নয়, আরও বেশ কিছু কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ সমাবেশ।’
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ জানান, এ সমাবেশ হবে দলের জন্য বড় শোডাউন। তা সফল করতে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ধারাবাহিকভাবে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা করছেন। এ ছাড়া জেলা-উপজেলায়ও কেন্দ্রীয় একাধিক টিম গিয়ে প্রস্তুতি সভা করছে।
মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে অর্ধলক্ষাধিক নেতাকর্মী সমাবেশে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। থানা ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলছে প্রস্তুতি সভা। একইভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টিও। তারাও অর্ধলক্ষাধিক লোকসমাগমের টার্গেট নিয়েছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকেও বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেবে।
জাতীয় পার্টির নেতাদের মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অন্যান্য রাজনৈতিক দল, দেশের মানুষ ও বিদেশি বন্ধুদের কাছে নিজের শক্তি জানান দিতে এ সমাবেশ। এতে জনতার ঢল নামাতে চান এরশাদ। এজন্য তিনি দলের সর্ব স্তরের নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন সর্বশক্তি নিয়োগ করে সমাবেশ সফল করতে। দলের বর্তমান এমপিদের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী, তাদের সবাইকেই নিজ নিজ নির্বাচনী আসন থেকে কমপক্ষে তিন হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক নিয়ে মহাসমাবেশে উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন এরশাদ।
এদিকে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি হিসেবে আজ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সভা আহ্বান করা হয়েছে। বেলা ৩টায় কাকরাইল ইন্সটিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স সেমিনার হলে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এমপি। সভায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম-মহাসচিব, জাতীয় সংসদ সদস্য, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম-সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম-সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও কেন্দ্রীয় সদস্যদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষভাবে আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি। এছাড়াও রোববার পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি, জাতীয় যুব সংহতি এবং জাতীয় ছাত্র সমাজের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। সমাবেশ সর্বাত্মকভাবে সফল করতে তিনি সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছেন। যুগান্তর
আপনার মতামত লিখুন :