ডেস্ক রিপোর্ট : হিমাগারে সংরক্ষণ মৌসুমে কুড়িগ্রামে আলুর বাজারে ধস নামায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে আলু চাষিরা। প্রতি মণ আলু বেচে তাদের লোকসান হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এর পরও ক্রেতার অভাবে চাষিরা বেচতে পারছে না আলু। অন্যদিকে হিমাগার মালিকরা লোকসানের আশঙ্কায় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ঋণসুবিধা না দেওয়ায় আলুর বাজার দাম কমে যাচ্ছে। আলু চাষিদের বাঁচাতে রপ্তানি বাড়ানোসহ সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার দাবি করেছে চাষিরা।
চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় সাত হাজার ২৯১ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন খরচ বাড়লেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি মণ আলু চাষে খরচ হয়েছে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা; আর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। এতে প্রতি মণে অন্তত ১০০ টাকা লোকসান হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামের কৃষক চাদ মিয়া জানান, তিনি এবার আট একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। প্রতি একর জমিতে আলু চাষে খরচ পড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। অথচ বাজারে বেচলে ৬০-৬৫ হাজার টাকার বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। হিমাগারে সংরক্ষণ করলেও গতবারের মতো বাজার ধসের শিকার হন কি না, শঙ্কায় আছেন। তার ওপর ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। খালিসাজাল ফাঁড়া গ্রামের কৃষক বীরেন্দ্রনাথ বলেন, ‘যে অবস্থা তাতে হামার মাঠে মারা যাবার অবস্থা। এমন বাজার হইলে আর আলুর আবাদ করা যাবার নয়।’ একই গ্রামের কৃষক শচিন্দ্রনাথ রায় জমি থেকে আলু তুলে স্তূপ করে রেখেছেন। দুই দিন খুঁজেও তিনি ক্রেতা পাননি। তিনি বলেন, ‘বাহে আলু অপুচ হয়া গেইছে। বাকিত দিবার চাই, তাও নেয় না।’
কৃষকরা জানায়, এবার আলু উৎপাদনের সব উপকরণের দাম বেশি থাকার পাশাপাশি ঘন কুয়াশার কারণে ঘন ঘন ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে দেওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি পড়েছে। তার পরও আলুর ফলন নিয়ে চাষিদের মনে স্বস্তি থাকলেও বাজারমূল্য নিয়ে মুখে হাসি নেই। গতবার আলু সংরক্ষণ করে ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের বিপুল পরিমাণ লোকসানের প্রভাব পড়েছে এবারের বাজারে। তাই অন্যবারের মতো এবার বাইরের জেলাগুলো থেকে ব্যাপারিরা না আসায় ক্রেতা সংকটেও পড়েছে চাষিরা। লোকসান থেকে তাদের বাঁচাতে আলুর বাজারমূল্য নির্ধারণ ও রপ্তানি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে চাষিরা। সদর উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষক মাঈদুল ইসলাম বলেন, ‘ধানের বিষয়ে সরকার কৃষকদের পক্ষে থাকলেও আলুর বিষয়ে থাকে না। সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বহু কৃষক মাঠে মারা যাবে।’
আলু ব্যবসায়ী গোলজার হোসেন ও ছোলেমান আলী জানান, অন্যান্য বছর মুন্সীগঞ্জ, ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এসে আলু কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ করতেন। এবার তাঁরা না আসায় ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে।
বিগত বছরগুলোতে হিমাগার মালিকরা আলু কিনে এবং আলু চাষিদের ঋণসুবিধা দিয়ে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছিলেন। তাই তাঁরাও এবার পা ফেলছেন হিসাব কষে। হিমাগার থেকে ঋণের ব্যবস্থা করায় ব্যবসায়ীরা আলু কিনে হিমাগারে রাখতে পেরেছিলেন। এবার লোকসানের ভয়ে ঋণসুবিধা দিচ্ছে না হিমাগার কর্তৃপক্ষ। কুড়িগ্রাম বাবর কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মো. মোজাহিদুর রহমান জানান, বর্তমান অবস্থায় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়া হিমাগারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ঋণ দেওয়া হচ্ছে না।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. জাহেদুল হক চৌধুরী জানান, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে আলুর বাজারমূল্য কম হওয়ায় এবং ক্রেতা সংকট দেখা দেওয়ায় কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছে। আলু বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ নিলে কৃষকরা হয়তো ন্যায্যমূল্য পাবে। সূত্র : কালের কণ্ঠ
আপনার মতামত লিখুন :