ডেস্ক রিপোর্ট : নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের নিহত পাইলট আবিদ সুলতানকে ঘিরে রহস্য কাটছেই না। কেন মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ছাড়ার জন্য তোড়জোড় ছিল তার? কেনইবা তাকে পরপর চারটি ল্যান্ডিংয়ের পরেও আবার কাঠমান্ডু যেতে হয়েছিল উড়োজাহাজ নিয়ে? অভিজ্ঞ পাইলটদের একজন হয়েও কেন তাকে দুর্ঘটনায় পড়তে হলো? তাহলে কি হতাশায় ভুগছিলেন ক্যাপ্টেন আবিদ?
জীবনের শেষ ফ্লাইট পরিচালনার কয়েক ঘণ্টা আগে আবিদের সঙ্গে অপর এক পাইলটের টেলিফোনে, হোয়াটস-আপ এবং ই-মেইল কথপোকথন সম্পর্কে জানতে পারে পরিবর্তন ডটকম।
সেই কথোপকথন থেকে ধারণা করা যায়, বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর আগের দিন মানসিক অস্থিরতায় ভুগছিলেন আবিদ। বারবার ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই পাইলটকে। পদত্যাগের জন্য সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রেরও সহযোগিতা নিয়েছেন তিনি।
ওই পাইলট জানান, সেদিন রাতেই অফিসিয়াল ই-মেইলে আবিদ সুলতান দুই মাসের সময় বেঁধে দিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন এটি তিনি নিশ্চিত।
সংশ্লিষ্ট প্রমাণাদি থেকে দেখা যায়, দুর্ঘটনার আগের দিন দুপুর ২টা ৩৮মিনিট থেকে একটু পরপর ওই পাইলটের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে আবিদের। সর্বশেষ রাত ৮টা বাজার কিছু আগেও একাধিক নম্বরে তাদের কথা হয়েছে। এরইমধ্যে হোয়াটস-আপেও একাধিকবার কথা হয়েছে।
কথোপকথন থেকে জানা যায়, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সে চাকরি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিলেন আবিদ। যেখানে তার পারিশ্রমিক ধরা হয়েছিল প্রায় ১১ হাজার ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় ৯ লাখ টাকার মতো। যেখানে ইউএস-বাংলায় আবেদ সুলতান পেতেন তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা। এনিয়েও ক্ষোভ-হতাশা ছিল অভিজ্ঞ এই পাইলটের। কারণ জুনিয়র কয়েকজন পাইলটের বেতনের চেয়ে তার বেতন থেকে কম ছিল।
দুর্ঘটনার দিন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে পরপর দু’বার আসা যাওয়ার পরও আবিদকে কাঠমান্ডুতে যেতে হয়। যেটি তার উপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছিল বলে তার পরিচিত একাধিক পাইলট নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবর্তন ডটকমকে জানান।
তারা জানান, নেপালের কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দরে বিমান নামানোর প্রশিক্ষক ছিলেন আবিদ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাইলটরা তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতেন। সেক্ষেত্রে তার পেশাদারি ভুল হওয়াটা কেউ মেনে নিতে রাজি নন। কিন্তু তার উপর যে মানসিক চাপ ছিল তা কোনোভাবেই অস্বীকার করার মতো নয়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের পরিচালক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, আবিদ সুলতানের পদত্যাগের কথা যে সত্য নয় তা তার স্ত্রীই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
তিনি আরও দাবি করেন, আবিদের ওপর কোনো মানসিক চাপ ছিল না। এমনকি তাকে ঢাকা-চট্টগ্রামে চারবার ল্যান্ডিং করার পর জোর করে কাঠমান্ডু পাঠানো হয়নি।
কামরুল ইসলাম বলেন, নেপাল কর্তৃপক্ষ একেকবার একেক কথা বলছে। বৃহস্পতিবার তারা বলেছে- উড়োজাহাজটির এবং পাইলটের কোনো সমস্যা ছিল না। আবার শুক্রবার দাবি করেছে অবতরণে ত্রুটি ছিল।
যদিও আবিদ সুলতানের ঘনিষ্ঠ পাইলটরা দাবি করেছেন, মৃত্যুর পর তার স্ত্রীই জানিয়েছিলেন যে, তাদেরই একজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আবিদ। সে সংক্রান্ত বেশ তথ্য-প্রমাণ রয়েছে বলেও দাবি তাদের।
তারা আরও বলেন, এখন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স যদি তথ্য-প্রমাণাদি তাদের সার্ভার থেকে সরিয়ে ফেলে থাকে তাহলেতো কিছু করার নেই। সিভিল এভিয়েশনের উচিত ছিল দ্রুত ইউএস-বাংলার সার্ভার জব্দ করা।
যোগাযোগ করলে আবিদ সুলতানের স্ত্রী আফসানা খানম বলেন, আবিদ পদত্যাগ করেছিলেন কিনা এ বিষয়ে তিনি কিছু বলবেন না।
তিনি জানান, সেদিন ভোরবেলা নামাজ পড়ে সাধারণভাবেই তার স্বামী ফ্লাইটে গিয়েছিলেন। যাওয়ার সময় তার মধ্যে কোনো ধরনের হতাশাও দেখেননি।
প্রসঙ্গত, ঢাকা ৭১ জন আরোহী নিয়ে সোমবার দুপুরে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামার সময় ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস-২১১ রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়। এতে ৫১ জন আরোহী নিহত হন।
উড়োজাহাজে চার ক্রুসহ ৩৬ জন বাংলাদেশি ছিলেন। এদের ২৬ জনই নিহত হয়েছেন। উড়োজাহাজের ক্রুরা সবাই নিহত হন। সূত্র : পরিবর্তন
আপনার মতামত লিখুন :