শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ১৬ মার্চ, ২০১৮, ০৩:০০ রাত
আপডেট : ১৬ মার্চ, ২০১৮, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কেন মাত্র ৩৭৪ জন রোহিঙ্গাকে নিতে চায় মিয়ানমার?

মো. কামাল হোসেন: প্রথম ধাপে বাংলাদেশের দেয়া আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকা থেকে মাত্র ৩৭৪ জনকে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার৷ মিয়ানমার কি আবার কালক্ষেপনের কৌশল অবলম্বন করছে? নাকি বাংলাদেশের তরফেও কোনো ত্রুটি ছিল?

বুধবার দুপুরে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই ৩৭৪ জনের তালিকা পাঠিয়েছে মিয়ানমার৷ ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মো. খোরশেদ আলম সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করলেও বিস্তারিত আর কিছু জানাননি৷

একমাস আগে সম্পাদিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকা দেয় মিয়ানমারকে৷ তাদের তথ্য ফরমের চাহিদা পুরণ করেই ওই তালিকা পাঠানো হয়৷ কিন্তু মিয়ানমার বলছে, তালিকায় অনেক সমস্যা আছে৷ ছবি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট নেই৷ যাচাই-বাছাই শেষে মিয়ানমার ৩৭৪ জনকেই পুনর্বাসনের উপযোগী বলে নিশ্চিত করেছে৷ এবং তাদের রাখাইনের অধিবাসী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে৷

রিলিফ, রিহেবিলেটেশন অ্যান্ড রিফিউজি কমিশনার আবুল কালাম আজাদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, মিয়ানমার শুরুতে বলেছিল, ওরা যেভাবে চেয়েছে, সেভাবে হয়নি৷ কিছু অবজারভেশন দিয়েছিল৷ ওদের চাহিদা অনুযায়ী সেসব তথ্য আমরা দিয়েছি৷ তারা ৩৭৪ জনকে ক্লিয়ার করেছে৷ বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন আছে বলে বলছে৷ ওদের ডিটেইল পেলে তখন আমরা বলতে পারবো আসলে তারা কী বলতে চাইছে৷ তখন আমরা দেখবো৷

বাংলাদেশ থেকে পাঠানো তথ্যে কোনো ঘাটতি ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি নির্দিষ্ট ফরম ছিল৷ তাতে যেসব তথ্যের কথা বলা হয়েছে, আমরা তা পাঠিয়েছি৷ এখন ওরা ঠিক কী সমস্যার কথা বলছে, তা পেলে আমরা সেগুলো দেখতে পারবো৷

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ফেরত নিলে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে কিনা সেটা পরের ব্যাপার৷ আর এটা ওরা দেখবে৷ আমাদের দিক থেকে সে ব্যাপারে কিছু করার নেই৷

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে বলছে, এই ৩৭৪ জন ৯০টি পরিবারের সদস্য৷ যাদের যাচাই-বাছাই করা হয়েছে, তাদের ভেতরে এক বা একাধিক জনকে আরসার সদস্য বলে সন্দেহ করছে তারা৷ তবে তাদেরকেও তারা ফেরত নিতে চায়৷

চুক্তি অনুযায়ী, এখন তাদের জাতিসংঘের কোনও সংস্থার মাধ্যমে ফেরত পাঠাতে হবে৷ এজন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ইউএনএইচসিআর-এর সঙ্গে প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করে ফেলেছে৷ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ফিজিক্যাল অ্যারেজমেন্ট চুক্তিতে বলা হচ্ছে, তালিকা হস্তান্তরের দুই মাসের মধ্যে সম্ভব হলে তারা সম্পূর্ণ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ করবে৷ যাচাই-বাছাই শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যাবে৷ তবে চুক্তির শর্তানুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফেরত যেতে হবে স্বেচ্ছায়৷

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হতে এবার এক জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে৷ তাতে ব্যক্তি নয়, পরিবারের পরিচয় নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ আর তাতে ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ আট পৃষ্ঠার একটি ফরম পুরণ করতে হয়৷ সিনিয়র সাংবাদিক শেখ শাহরিয়ার জামান ডয়চে ভেলেকে জানান, ১৯৭৮ এবং ১৯৯২ সালে দুই দফায় বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিয়েছিল মিয়ানমার৷ তখনো যাচাই-বাছাই হয়েছে৷ তখন ব্যক্তির আইডেন্টিফিকেশন হয়েছে৷ কিন্তু এবার যাচাই-বাছাইয়ে ব্যক্তি নয়, একটি পরিবারের পরিচয় নিশ্চিত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ আট পৃষ্ঠার একটি ফরমে তা করা হচ্ছে৷ ধরুন, একটি পরিবারে স্বামী, স্ত্রী এবং তাদের দুই সন্তান৷ এই ফর্মের প্রথম দুই পৃষ্ঠা৷ বাকি পৃষ্ঠাগুলো পরিবারের বাকি সদস্যদের জন্য একযোগে৷ ফরমে সবার ছবি, তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট, ওই পরিবারে তথ্যসহ পরিবারের পুরো একটি চিত্র দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে৷

তিনি আরো বলেন, আমরা ঘনিষ্ঠভাবে প্রক্রিয়াটি খেয়াল করছি৷ ওই ফরমে বাংলাদেশ যে তথ্য পাঠিয়েছে তাতে সমস্যা থাকার কথা নয়৷ তারা আসলে প্রত্যাবসন বিলম্বিত করতে চায় অথবা রোহিঙ্গাদের একবারেই নিতে চায় না৷ তাদের যদি সদিচ্ছাই থাকবে, তাহলে তারা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারে, কোন ফরমে কোন তথ্য নাই৷ তা কিন্তু তারা বলছে না৷

তিনি জানান, নেপিদোতে গতকালও (বুধবার) একটি বৈঠক হয়েছে৷ সেখানে রাখাইনের ডেভেলপমেন্ট নিয়ে তারা এই বেঠকে কথা বলে৷ তারা বিদেশি কূটনীতিক এবং সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছেন৷ তারা ঢালাওভাবে বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়ার জন্য দায়ী করেছে৷ তারা বলছে, বাংলাদেশের সদিচ্ছার অভাবের কারণেই নাকি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যাচ্ছে না৷

আর মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে মেজর জেনারেল (অব.) শহিদুল হক বলেন, আসলে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চায় না৷ তারা রাখাইনের ডেমোগ্রাফি পরিবর্তন করে দেয়ার কাজ করছে৷ তারা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে৷ সেখানে এখন যে শেড বানানো হচ্ছে, আমার ধারণা, সেটা রোহিঙ্গাদের নিয়ে রাখার জন্য নয়৷ তারা ওখান আরো অনেক নৃ-গোষ্ঠীকে নিয়ে আসতে চায়৷ ওখানে বৌদ্ধদের নিয়ে আসা হবে৷ আর এজন্য তারা নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপন করছে৷ আমাদের এখান থেকেও কিছু উপজাতি মিয়ানমারে গেছে কয়েক বছর আগে৷ তাদের মথ্যে থামি এবং চাকমা আছে৷ তাদেরও রাখাইনে পুনর্বাসন করা হবে৷ তাদের উদ্দেশ্য হলো রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের কোনো অস্তিত্ব না রাখা৷

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আরো সতর্ক হতে হবে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ এবং ইউএনএইচসিআরকে যুক্ত করতে হবে৷

প্রসঙ্গত, গত বছরের আগস্ট থেকে রাখাইনে নির্যাতনের শিকার হয়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়