শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৬ মার্চ, ২০১৮, ০৭:১৭ সকাল
আপডেট : ১৬ মার্চ, ২০১৮, ০৭:১৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘এমপি সাহেপ দুই বেলা খাওন দেয় হেইডা খাইয়া বাইচা আছি’

ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বরে ইলিয়াস আলী মোল্লা বস্তিতে আগুনে সব হারিয়ে নিঃস্ব বস্তিবাসী। সেখানে প্রায় ৮ হাজার পরিবার এখন পথে বসেছেন। ঘটনার পর অনেকে আশার ফুলঝুরি ছড়ালেও তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। বর্তমানে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। পোড়া বস্তিতে কেউ গেলেই সাহায্যের আশায় ভিড় জমাচ্ছেন বস্তিবাসী।

বৃহস্পতিবার ইলিয়াস আলী মোল্লা বস্তিতে সরেজমিনে দেখা যায়, আগুন লেগে সব পুড়ে ছাঁই। অনেকেই পরনের কাপড় নিয়ে জানে রক্ষা পেয়েছেন। এখন চোখের পানি ছাড়া আর কোনো সম্বল নেই। সব হারিয়ে এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই অলিগলি, পরিত্যক্ত ও নির্মাণাধীন ভবন। বস্তির আশপাশে কোনো অচেনা মানুষ দেখলেই সাহায্যের আশায় ভিড় জমান।

আগুনে সব হারানো সালমা ও তার পরিবারের আট সদস্য বস্তির পাশের একটি ভাঙা ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। চারপাশে পলিথিন আর চটের ছালা দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই বানিয়েছেন। উপার্জন ক্ষমতা কেবল দুই বোন ও এক ভাইয়ের। তাদের টাকায় সংসার চলে। কারণ বাবা ও এক ভাই অসুস্থ। তিনজনের আয়ে বস্তিতে সুখের সংসার গড়ে তুলেছিল তারা। মাসিক তিন হাজার ভাড়ায় একটি ঘরে থাকতেন।

গার্মেন্টকর্মী সালমা বলেন, আগুন লেগে আমগো সব জিনিস পুইড়া গেছে। কিছুই বাইর করতে পারি নাই। পরনের কাপড়গুলোও বাইর করতে পারি নাই। যা পইড়া ঘুমায় ছিলাম তাই লইয়া বাইচা দৌড়াইয়া বাহির হইছি। অহন পড়নের কিছু নাই। দয়া কইরা মানুষ পুরান কাপড় দিছে হেইডা পইড়া অফিস করতাছি। আগুনে নগদ অর্থসহ প্রায় দেড় লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।

তিনি বলেন, এক রাইত রাস্তায় আছিলাম। পরে বস্তির পাশে একটা ভাঙা ঘর আছিলো, হেইডাতে পলিথিন লাগাইয়া আশ্রয় লইছি। কেউ আমগোরে কোনো সাহায্য দেয় নাই। ফলে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসবিহীন সেখানে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা।

বাসাবাড়িতে কাজ করে জীবন চলে হালিমা বেগমের। সংসারে তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বস্তিতে ৫ হাজার টাকা ভাড়ায় দুই রুমে থাকতেন। আগুনে তাদের সব পুড়ে গেছে। বর্তমানে পাশের বস্তিতে এক আত্মীয়ের বাসায় রাত কাটাচ্ছেন।

হালিমা বেগম জানান, বড় মেয়েকে বিয়ে দেয়ার জন্য অনেক কষ্টে ২০ হাজার টাকা সঞ্চয় করেছিলাম। আগুন লেগে তা পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে। এছাড়াও ঘরের মধ্যে রাখা সোনার অলঙ্কার, আসবাবসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।

ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগুন লাগার দিনে অনেকই আইসা কইলো ক্ষতিপূরণ দিবো। কোনো চিন্তা কইরেন না, হেরপর হেরা আর আহে নাই। আমগো শুধু আশা দিয়া যাইতাছে। কেউ কিছু দেয় না।

বস্তির পাশের নির্মাণাধীন একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আশ্রয় নিয়েছে বস্তির ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সহস্রাধিক মানুষ। পলিথিন আর চটের ছালা বিছিয়ে সেখানে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সব হারিয়ে তারা এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে বসবাসরত রহিমা বেগম জানান, তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। মা ও ছেলের আয় দিয়ে পরিবার চলতো। কিন্তু আগুন লেগে সব শেষ। তাই জীবন বাঁচাতে এখন নির্মাণাধীন ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন।

তিনি বলেন, আগুনে আমার কপাল পুইড়া দিছে। মাইয়াডার পড়ার বই, স্কুল ড্রেসসহ সব জিনিসপত্র পুইড়া গেছে। সব হারাইয়া পথে নামছি। কেউ আমগো কোনো ক্ষতিপূরণ দেয় নাই। এমপি সাহেপ আমগো দুই বেলা খাওন দেয় হেইডা খাইয়া আমরা বাইচা আছি। কেমনে যে সব গোছামু ভাইবা পাইতাছি না। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পুর্নবাসনের দাবি জানান ক্ষতিগ্রস্তরা।

বস্তির মধ্যে ছয়টি ঘর পুড়ে গেছে বাবুল মিয়ার। তিনি দুটি ঘরে থাকতেন। বাকি ঘরগুলো ভাড়া দিয়েছিলেন। বর্তমানে নতুন করে ঘর তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেও অর্থের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, সব হারাইয়া এখন এক বেলা খাইলে অন্য বেলা না খাইয়া থাকতে হইছাতে। অনেক কষ্টে আরেকজনের ঘরে বউ পোলাপান লইয়া রাইত কাটাইটাছি। নতুন কইরা ঘর বানামু টাকার অভাবে পারতাছি না। অনেকে ক্ষতিপূরণ দিবো কইয়া আর খবর লয়না। ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীকে পুর্নবাসনের জন্য সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান।

তবে বস্তিবাসীর মানবেতর জীবনযাপনের কথা অস্বীকার করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী মোল্লা। তিনি বলেন, প্রতিদিন প্রায় ২৪ হাজার বস্তিবাসীকে দুই বেলা খাবার দেয়া হচ্ছে। আমার নির্মাণাধীন ভবনে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আমি আছি। তাদের কোনো কষ্ট হবে না।

বস্তিবাসীর পুর্নবাসনের কি ব্যবস্থা করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি পরিবারকে ২০ কেজি চাল ও সবার ঘর নির্মাণের জন্য ১০ লাখ টাকা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। পুড়ে যাওয়া ঘরগুলো এ অর্থ দিয়ে বানানো সম্ভব নয়। এ কারণে ক্ষতিপূরণের অর্থ বাড়াতে আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যতদিন ক্ষতিগ্রস্তদের বসবাসের স্থায়ী ব্যবস্থা না হবে ততদিন এ ভবনে তারা বসবাস করতে পারবে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার ভোর ৩টায় রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বরে ইলিয়াস আলী মোল­া বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ২১টি ইউনিটের চেষ্টায় সকাল ৭টা ২৪ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিফিল ডিফেন্স অধিদফতরের ডিউটি অফিসার মাহফুজুর রহমান। তবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি। সূত্র : জাগো নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়