সান্দ্রা নন্দিনী: সম্প্রতি সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়েকে 'নার্ভ এজেন্ট' প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যাচেষ্টার ঘটনা নিয়ে যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া মুখোমুখি অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য ২৩ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। গুপ্তচরকে কেন্দ্র করে ইউরোপের ক্ষমতাশালী দু’দেশের এই মুখোমুখি অবস্থান মূলত ইউরোপ একটি 'ছায়াযুদ্ধ'র দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আগামী রোববার অনুষ্ঠিতব্য রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অবশ্যম্ভাবী বিজয়ী ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, 'তিনি সবকিছু ক্ষমা করতে পারলেও, বিশ্বাসঘাতকতার কোনও ক্ষমা নেই তার কাছে।' পুতিন পুরো বিশ্বেই তার 'ইস্পাত-কঠিন' ব্যক্তিত্বের জন্য সুপরিচিত। নির্বাচনের ঠিক আগে মুহূর্তে তিনি কোনোভাবেই যুক্তরাজ্যের কাছে গুপ্তচর ইস্যুতে নতি স্বীকার করবেন না, তা খুব সহজেই অনুমেয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে রাশিয়া পুরো বিশ্বকে সোভিয়েত যুগের মতো পরাশক্তি হয়ে ওঠার জানান দেয়। এর ফলেই মূলত বিশ্ব আবারো নতুন এক স্নায়ুযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যায়। অতঃপর সিরিয়ায় বাসার আল আসাদকে সরাসরি সাহায্য ও সমর্থন দেবার মাধ্যমে বিশ্বে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করে রাশিয়া।
এছাড়াও, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনসহ ইউরোপের বেশকিছু দেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রে এখনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে তদন্ত চলছে। রাশিয়া তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগই স্বাভাবিকভাবে অস্বীকার করেছে। বিশ্ব রাজনীতিকে নেতৃত্ব দিতে বরাবরই দৃঢ়তার পরিচয় দেওয়া রাশিয়া যুক্তরাজ্যের সাথে বর্তমান কূটনৈতিক যুদ্ধে কোনভাবেই নতি স্বীকার করবে না, তা সহজেই অনুমেয়।
অপরদিকে, ব্রেক্সিট ইস্যুতে ধুঁকতে থাকা যুক্তরাজ্যের হঠাৎ এমন কঠোর অবস্থানে যাবার বিষয়টিও বেশ কৌতুহল উদ্দীপক। গত এক দশক ধরে পশ্চিম ইউরোপের রাজনীতির নেতৃত্ব জার্মানি ফ্রান্সের হাতে ছিল। ‘একবিংশ শতাব্দীর মার্গারেট থেচার’ পরিচিত থেরেসা মে কি তাহলে ইউরোপের নেতৃত্বও দিতে চাইছে ?
গুপ্তচর ঘটনার রেশ কতদূর পর্যন্ত যাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে এ ঘটনায় নিশ্চিতভাবেই ইউরোপীয় রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণ তৈরি হতে যাচ্ছে, তা সহজেই অনুমেয়।
আপনার মতামত লিখুন :